ইউরোপে শরণার্থীদের পরিণতি
২৮ এপ্রিল ২০১৫শীত কেটে যাবার পর থেকেই ইউরোপে আবার শরণার্থীদের ঢল নেমেছে৷ এর অনেক কারণ রয়েছে৷ চরম দারিদ্র্য, প্রশিক্ষণের অভাবের কারণে চাকরি না পাওয়া, স্বৈরাচারী শাসন, নিপীড়ন, অত্যাচার, গৃহযুদ্ধ, যুদ্ধ ইত্যাদি৷ অনেক ক্ষেত্রে রাষ্ট্র কার্যত ভেঙে পড়েছে, ক্ষমতার রাশ চলে গেছে দুর্বৃত্ত গোষ্ঠীর হাতে৷
চরম অভাব ও দিশাহীন ভবিষ্যৎ মানুষকে পালাতে বাধ্য করে৷ দূর দেশে নতুন করে জীবন শুরু করে সামান্য সুখের আশা মনে জাগে৷ ইরিট্রিয়া, সোমালিয়া, লিবিয়া, সিরিয়া, ইরাক, আফগানিস্তানের মতো দূর দেশ থেকে মানুষ আশ্রয়ের খোঁজে ইউরোপে আসেন৷ সংকটপূর্ণ অঞ্চলের মধ্যেও শরণার্থীদের কথা ভুললে চলবে না৷
নৈরাশ্যের ব্যবসা
আনুমানিক ৫ কোটি শরণার্থী তাঁদের ভাগ্য অন্বেষণ করতে বেরিয়ে পড়েছেন৷ তাঁদের যাত্রাপথ চরম বিপদে ভরা, অনেক ক্ষেত্রে যার পরিণতি মৃত্যু৷ কারণ এই যাত্রায় তাঁরা একা নন৷ আদম ব্যবসায়ীদের সাহায্যে তাঁরা নিজেদের স্বপ্নের গন্তব্যে পৌঁছতে চান৷ তাঁদের যাত্রাপথ বিপদে ভরা – যেমন সিরিয়া থেকে তুরস্ক হয়ে আলজেরিয়া৷ সেখান থেকে মরুভূমির মধ্য দিয়ে লিবিয়া, তারপর জাহাজে করে স্বপ্নের ইউরোপে পাড়ি দেওয়ার পালা৷ জাহাজের খালাসিরা তাঁদের বিপদে না ফেললে এবং জলে ডুবে মৃত্যু না হলে তাঁরা ইউরোপের মাটিতে পা ফেলতে পারেন৷ আধুনিক যুগের ক্রীতদাস ব্যবসায় আদম ব্যবসায়ীরা কোটি কোটি ডলার কামায় – নৃশংস ও নৈরাশ্যে ভরা সেই ব্যবসা৷
তারপর শরণার্থীরা ইউরোপে পৌঁছান, অস্থায়ী বাসস্থানে কোনো রকমে ঠাসাঠাসি করে তাঁদের থাকতে হয়৷ কখনো চিকিৎসার সুযোগ আসে৷ খুব কম সময়ের মধ্যেই তাঁদের অনেককেই আবার ‘ডিপোর্ট' করা বা ফেরত পাঠানো হয়৷ অথবা অনেকে পালিয়ে গেয়ে বেআইনি পথে কোনো রকমে বেঁচে থাকেন৷ বেঁচে থাকার স্বার্থে আত্মমর্যাদার তোয়াক্কা না করে তাঁদের অনেক অপ্রিয় কাজ করতে হয়৷ সেই টাকায় কখনো পরিবারেরও অন্নসংস্থান হয়৷ কিছু মানুষ নিজের পরিবারের কাছ থেকে সাহায্য পান৷ কিছু সহৃদয় মানুষ আশ্রয়হীন শরণার্থীদের সাহায্য করতে এগিয়েও আসেন৷ আর তৃতীয় দলটি রাজনৈতিক আশ্রয় পেয়ে রাষ্ট্রের ছত্রছায়ায় চলে যায়৷ তবে বিশাল একটা অংশকে আবারো সেই দারিদ্র্য ও নৈরাশ্যের পরিবেশে ফিরে যেতে হয়, যেখান থেকে তাঁরা পালাতে চেয়েছিলেন৷