ইরানের পরমাণু কর্মসূচি, উদ্বিগ্ন ফ্রান্স-জার্মানি-যুক্তরাজ্য
২০ আগস্ট ২০২১জাতিসংঘের একটি সংস্থা জানিয়েছে, ইরান ইউরেনিয়াম জমানোর পরিমাণ অনেকটাই বাড়িয়ে দিয়েছে। আর তাতে রীতিমতো চিন্তিত যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানি। এই তিন দেশের মতে, এর ফলে অ্যামেরিকা এবং ইরানের মধ্যে নতুন করে পরমাণু চুক্তি হওয়া আরো কঠিন হয়ে পড়বে।
এই রিপোর্ট সামনে আসার পর তিন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাদের গভীর উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। তারা এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছেন, পরমাণু বোমা তৈরির মতো ইউরেনিয়াম ইরানের হাতে চলে আসছে।
এই তিন দেশ মনে করছে যে ইরান পরমাণু চুক্তি ভেঙে এবং জাতিসংঘের বেঁধে দেওয়া মাপদণ্ড অগ্রাহ্য করে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এটা রীতিমতো উদ্বেগের বিষয়। তিন দেশ জানিয়েছে, ইরানের অসামরিক কাজকর্ম চালাবার জন্য এতোখানি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের দরকার নেই। ইরান যে পরিমাণ ইউরেনিয়াম উৎপাদন করছে তা দিয়ে পরমাণু বোমা বানানো যেতে পারে।
২০১৫ সালে অ্যামেরিকা, রাশিয়া, চীন, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানির সঙ্গে পরমাণু চুক্তিতে সই করে ইরান। সেখানে বলা হয়েছিল, ইরান তার পরমাণু কর্মসূচি নিয়ন্ত্রণে রাখবে। একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ করা হবে। যা পুরোপুরি অসামরিক কাজে লাগানো হবে।
ঠিক হয়েছিল, জাতিসংঘ ইরানের পরমাণু কর্মসূচির ওপর নজর রাখবে। ইরান এ বিষয়ে যাবতীয় তথ্য জাতিসংঘকে দিতে বাধ্য থাকবে। কিন্তু ২০১৮ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প এই পরমাণু চুক্তি থেকে সরে আসেন। আমেরিকায চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার পরেই ইরান ধীরে ধীরে ইউরেনিয়াম সঞ্চয়ের পরিমাণ বাড়াতে থাকে। জাতিসংঘকে তারা এই বিষয়ে তথ্য দেওয়াও বন্ধ করে দিয়েছে।
তিন দেশের যৌথ বিবৃতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়েছে, ইরান যে জাতিসংঘকে পরমাণু প্রকল্পের ব্যাপারে তথ্য দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে তা তারা মেনে নিতে পারছে না।
ট্রাম্পের পর বাইডেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর আবার ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তিতে ফিরতে চায় অ্যামেরিকা। এ নিয়ে কথাবার্তা শুরু হয়। পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে ইরান বৈঠক করেছে। কিন্তু তার পাশাপাশি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের পরিমাণও বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। এটাই ফ্রান্স জার্মানি ও যুক্তরাজ্যের কাছে উদ্বেগের বিষয়। ভিয়েনায় এই পশ্চিমা দেশগুলির প্রতিনিধিরা ইরানের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং পাশাপাশি আমেরিকার সঙ্গেও কথা বলেছেন কিন্তু এখন এই তিন দেশের তরফে যে বিবৃতি দেয়া হয়েছে তাতে বলা হয়েছে, ইরানের অনুরোধে গত দুইমাস ধরে ভিয়েনার আলোচনা স্থগিত আছে। কবে ইরান আবার সেই আলোচনা শুরু করতে চায় তা জানায়নি। এতেও চিন্তিত তিন দেশ।
যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইরান যেভাবে চলছে তাতে পরমাণু চুক্তি নিয়ে আলোচনা অচল হয়ে যেতে পারে। আর তার ফলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে। গত সপ্তাহে আমেরিকার তরফ থেকে জানানো হয়েছিল পরমাণু চুক্তি নিয়ে ইরানের ভূমিকা আদৌ গঠনমূলক নয়। তারা বিষয়টিকে জটিল করে তুলছে। এরপরই ফ্রান্স জার্মানি ও যুক্তরাজ্যের এই যৌথ বিবৃতি এলো। বোঝা যাচ্ছে ইরানের পরমাণু প্রকল্প নিয়ে আমেরিকা এবং এই তিন পশ্চিমা দেশ রীতিমতো চিন্তিত।
জিএইচ /এসজি (এপি, এএফপি, ডিপিএ, রয়টার্স)