ইরানের সঙ্গে নতুন পরমাণু চুক্তির পথে বাধার আশঙ্কা
২২ আগস্ট ২০২২ইরানের বিতর্কিত কর্মসূচি নিয়ে আন্তর্জাতিক সমাজের সঙ্গে নতুন করে বোঝাপড়া ‘প্রায় চূড়ান্ত’ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে বলে কূটনৈতিক সূত্রে শোনা যাচ্ছে৷ বিশেষ করে ইউরোপের মধ্যস্থতায় নতুন চুক্তির খসড়া তেহরান মেনে নিলেই নাকি বিষয়টির নিষ্পত্তি সম্ভব৷ এর থেকে ভালো শর্ত আর সম্ভব নয় বলে ইউরোপের তিন দেশ ইরানকে জানিয়ে দিয়েছে৷
এমনই প্রেক্ষাপটে রোববার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানির শীর্ষ নেতারা টেলিফোনে কথা বলেছেন৷ মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ এবং জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎসের আলোচনাসূচির মধ্যে ২০১৫ সালের ইরান পরমাণু চুক্তি পুনরুজ্জীবিত করার বিষয়টিও ছিল বলে হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে৷ ইরানকে পরমাণু অস্ত্র তৈরি থেকে বিরত রাখতে এবং আঞ্চলিক পর্যায়ে স্থিতিশীলতায় বিঘ্ন করার লক্ষ্যে সে দেশের কার্যকলাপ প্রতিরোধ করতে কী করা যায়, সে বিষয়েও আলোচনা হয়েছে৷ বাকি সব বিষয়ে বিস্তারিত জানালেও পরমাণু চুক্তির প্রসঙ্গে কোনো নতুন অগ্রগতির উল্লেখ করা হয় নি৷
গত সপ্তাহেই পরমাণু চুক্তির ভবিষ্যৎ নিয়ে বক্তব্য রেখেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷ ইইউ-র ‘চূড়ান্ত’ প্রস্তাবে ইরান ইতিবাচক সাড়া দিলে সে দেশের পরমাণু কর্মসূচিতে আবার রাশ টানা সম্ভব হবে৷ এর বদলে ইরানের উপর চাপানো একাধিক অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হবে৷ অন্যদিকে তেহরান প্রস্তাব মেনে না নিলে আঞ্চলিক পর্যায়ে যুদ্ধের আশঙ্কা দেখছে অ্যামেরিকা ও ইউরোপ৷ কারণ ইরানের হাতে পরমাণু অস্ত্র আসার আগে সে দেশের উপর সামরিক হামলার হুমকি দিচ্ছে ইসরায়েল৷ ইরানও এমন হামলা ঘটলে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মারাত্মক প্রতিক্রিয়ার পালটা হুমকি দিচ্ছে৷
ইরান শেষ পর্যন্ত পশ্চিমা বিশ্বের প্রস্তাব মেনে নিলেও বিশেষ করে মার্কিন প্রেসিডেন্টের পক্ষে সে দেশের সংসদের অনুমোদন পাওয়া কঠিন হতে পারে, এমন ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে৷ সম্প্রতি অ্যামেরিকায় ব্রিটিশ-ভারতীয় লেখক সলমান রুশদির উপর হামলা এবং সাবেক মার্কিন জাতীয় উপদেষ্টা জন বল্টনকে হত্যার ষড়যন্ত্রের পেছনে ইরানের ভূমিকা মার্কিন সংসদ সদস্যদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে৷ এই অবস্থায় বাইডেন প্রশাসনের পক্ষে পরমাণু চুক্তির পক্ষে সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে বেশ বেগ পেতে হবে, সে বিষয়ে তেমন সংশয় নেই৷ তার উপর ইরান এক শীর্ষ জেনারেলের হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ নিতে ট্রাম্প প্রশাসনের দুই শীর্ষ সদস্যকে হত্যার অঙ্গীকার করায় মার্কিন রাজনৈতিক মহলে আরও তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে৷ হুমকির জের ধরে প্রাক্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও ও ইরান সংক্রান্ত দূত ব্রায়ান হুকের জন্য নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হচ্ছে৷
সরাসরি পরমাণু চুক্তির সঙ্গে সম্পর্কিত না হলেও ইরানের একাধিক পদক্ষেপ মার্কিন জনমানসে সে দেশের বিরুদ্ধে যে বৈরি মনোভাব সৃষ্টি করছে৷ ফলে ২০১৫ সালের তুলনায় ইরানের সঙ্গে কোনো চুক্তি স্বাক্ষরের প্রশ্নে জনপ্রতিনিধিরা আরও বাধা সৃষ্টি করতে পারেন৷ বিশেষ করে চুক্তি স্বাক্ষরিত হলে ইরানের প্রশাসনের নাগালে কোটি কোটি ডলার এসে গেলে সে দেশ অ্যামেরিকাসহ অন্যান্য দেশে বৈরি কার্যকলাপ চালাতে আরও উৎসাহ পাবে বলে সমালোচকেরা আশঙ্কা করছেন৷
এসবি/কেএম (রয়টার্স, এপি)