ইসরায়েলে বাড়ছে নেতানিয়াহু-বিরোধী প্রতিবাদ
২১ জুলাই ২০২০টানা দু'ঘন্টা গাড়ি চালিয়ে উত্তর ইসরায়েলের শহর পারডেস হানা থেকে জেরুসালেমে পৌঁছান ম্যাগি শাহার৷ কিন্তু তাঁর কোনো ক্লান্তি নেই৷ এতদূর এসেই সটান যোগ দিলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বাসভবনের সামনে চলমান প্রতিবাদে৷
শাহার বলেন, ‘‘বর্তমান পরিস্থিতি খুবই খারাপ৷ আমি জানি না কোনো বদল আসবে কিনা, কিন্তু চুপ থাকা এখন অসম্ভব আমার পক্ষে৷ আমাদের প্রধানমন্ত্রীকেই দেখুন৷ তাঁর বিরুদ্ধে জমা অভিযোগের ফলে বিচারাধীন তিনি৷ কিন্তু তা-ও অনায়াসে ক্ষমতায় বসে আছেন৷ তারপর, করোনা সংক্রমণের কথা ভাবুন৷ কোনো কিছুই নিয়ন্ত্রণে নেই৷ একদিকে আছেন নেতানিয়াহু ও তাঁর বন্ধুরা, আর অন্যদিকে আমরা, জনসাধারণ৷’’
তবুও জনপ্রিয়...
গত দু'সপ্তাহ ধরে, সমাজের বিভিন্ন অংশ থেকে উঠে আসা মানুষ তাদের পেশা ও আর্থিক সামর্থ্য নির্বিশেষে রাস্তায় নেমেছেন৷ ইসরায়েলের রাজধানী জেরুসালেমের রাজপথ মুখর হয়ে আছে করোনা সংক্রমণ রোধে সরকারের ব্যর্থতার পাশাপাশি আর্থিক মন্দার বিরুদ্ধেও৷ সোমবার, এই প্রতিবাদে শিক্ষক, ছোট ব্যবসায়ী, সমাজকর্মীদের পাশাপাশি নার্সরাও যোগ দেন৷
প্রতিবাদী জনতার মত, বর্তমান সরকার নাগরিকদের অশ্রদ্ধা করছে৷ সরকারের সাথে সংশ্লিষ্ট সবাই সরে যাক, তা না চাইলেও নেতানিয়াহুকে আর রাষ্ট্রনেতা হিসাবে দেখতে চান না তারা৷
দ্বিতীয় দফায় বিধ্বস্ত ইসরায়েল
সংক্রমণের শুরুর দিকে যদিও প্রশংসিত হয় নেতানিয়াহুর কড়া হাতে সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়ার মতো সিদ্ধান্ত, কিন্তু পরে যখন এপ্রিলের শেষের দিকে মন্দা গ্রাস করতে থাকে দেশের অর্থনীতিকে, সমালোচনার মুখে পড়তে শুরু করেন নেতানিয়াহু৷ মে মাসের শুরুতে সংক্রমণ কমে এলে বিধিনিষেধ কিছুটা শিথিলও করা হয়৷ কিন্তু এর দু'মাস পর, বর্তমানে দ্বিতীয় দফার সংক্রমণের মুখোমুখি ইসরায়েল, বলছেন বিশেষজ্ঞরা৷
দিনে প্রায় ২০০০ নতুন সংক্রমণ দেখা যাচ্ছে সেখানে৷
স্বাস্থ্য ও অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দূরদৃষ্টির অভাব, কর্তৃপক্ষের তাড়াহুড়ো করে নেওয়া সিদ্ধান্ত ও স্বচ্ছতার অভাবের কারণেই এই পরিস্থিতি৷ অন্যদিকে, আরো খারাপ হতে থাকা কর্মসংস্থানের হার (প্রতি পাঁচজনে একজন ইসরায়েলি বর্তমানে বেকার) মানুষের ক্ষোভ বাড়াচ্ছে৷
কিন্তু এতকিছুর পরেও বিচারাধীন মামলার বিষয়ে নির্লিপ্ত৷ গত রোববার তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের একটি মামলা আদালতে ওঠার দিনেও তাঁকে হাজিরা দিতে দেখা যায়নি৷
তাঁর বিরুদ্ধে জনরোষ কিছুটা ঠেকাতে নেতানিয়াহু নাগরিকদের মধ্যে নগদ অর্থ বিতরণের প্রকল্প হাতে নেন৷ তিনি বলেন, এই টাকা দিয়ে জিনিস কিনলে দেশের অর্থনীতি কিছুটা চাঙ্গা হবে৷ প্রায় ৬ বিলিয়ন শেকেল (প্রায় বাংলাদেশি টাকায় ১৫ হাজার কোটি, ১৫৩০ কোটি ইউরো, ১৭৫১ কোটি মার্কিন ডলার) খরচ করা এই প্রকল্প থেকে আশানুরূপ ফল মেলেনি৷
প্রতিবাদে অংশগ্রহণকারী স্কুল শিক্ষক হাদেরা বলেন, ‘‘এটা কিছুই নয়, হাস্যকর ব্যবস্থা৷ মনে হচ্ছে, নেতানিয়াহু এটা করছেন যাতে আমরা তাঁকে ধন্যবাদ দিয়ে খুশি হয়ে ঘরে বসে থাকি৷’’
টানিয়া ক্রেমার/এসএস