আইএস-এর বিরুদ্ধে জার্মানি?
১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪জার্মানিতে বসবাসকারী মুসলমানদের এই প্রতিক্রিয়া দেরীতে এলো, না সঠিক সময়ে এলো, তা বলা শক্ত৷ কিছুদিন ধরেই শোনা যাচ্ছিল যে, জার্মানি থেকে বেশ কিছু তথাকথিত ‘জিহাদি' সিরিয়া এবং ইরাক যাত্রা করেছে এবং সেখানে ইসলামিক স্টেট (আইএস বা আইসিস) ও অপরাপর জিহাদিদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে৷ একাধিক জার্মান জিহাদিকে নাকি আত্মঘাতী বোমারু হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে৷
এই সব জার্মান জিহাদিদের একাংশ যে জার্মানিতে ফিরে এসেছে এবং ভবিষ্যতে আরো অনেকে আসবে, জার্মান সরকার সে বিষয়ে চিন্তিত – কেননা জিহাদিরা ফিরছে যুদ্ধের ও বোমাবাজির অভিজ্ঞতা নিয়ে৷ কাজেই তারা জার্মানিতেও সন্ত্রাসী আক্রমণ ঘটানোর চেষ্টা করতে পারে৷ বলতে কি, জার্মান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী টোমাস দেমেজিয়ের গত সপ্তাহেই ঘোষণা করেন যে, ইসলামিক স্টেট গোষ্ঠী, তাদের যাবতীয় নিশান ও প্রতীক, গোষ্ঠীর হয়ে অর্থ কিংবা সদস্য সংগ্রহের প্রচেষ্টা, সব কিছু নিষিদ্ধ করা হচ্ছে জার্মানিতে৷ মাত্র গত সোমবার ফ্রাংকফুর্টের একটি আদালতে এক প্রত্যাবর্তিত জার্মান জিহাদির বিচার শুরু হয়৷
অপরদিকে সুদূর সিরিয়া কিংবা ইরাকে ইসলামিক স্টেটের কার্যকলাপ ছাড়াও – যার মধ্যে পশ্চিমি পণবন্দীদের শিরশ্ছেদও পড়ে – সেই সব কার্যকলাপের সঙ্গে জার্মান জিহাদিদের সংযোগ জার্মানিতে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে এবং সে বিরূপতা যে সাধারণভাবে মুসলিম বিদ্বেষের চেহারা নিতে পারে, তার প্রমাণ, সম্প্রতি বার্লিনের ক্রয়েৎসব্যার্গে একটি নির্মীয়মান মসজিদের উপর আক্রমণ ও অগ্নিসংযোগ৷
এই সব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে জার্মান মুসলিমদের কেন্দ্রীয় পরিষদের প্রধান আইমান মাজিয়েক মঙ্গলবার যা ঘোষণা করেছেন, তা দ্ব্যর্থহীন৷ মাজিয়েক ঐ সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন: ‘‘আমরা স্পষ্ট করে দিতে চাই যে, সন্ত্রাসী এবং অপরাধীরা ইসলামের নামে কথা বলতে পারে না৷ তারা আমাদের ধর্মের আদেশ ও বিধান পদদলিত করেছে৷ হত্যাকারী ও অপরাধীদের আমাদের মধ্যে, আমাদের ধর্মে কোনো স্থান নেই৷''
শুক্রবার জার্মনির বিভিন্ন শহরে ‘‘শান্তি সভার'' আয়োজন করা হবে – জার্মান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দেমেজিয়ের ও বার্লিনের লর্ড মেয়র ক্লাউস ভোভেরাইট-ও সে ধরনের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবেন বলে প্রকাশ৷ প্রসঙ্গত, বার্লিনের লর্ড মেয়র যে ক্রয়েৎসব্যার্গের মসজিদে অগ্নিকাণ্ড ঘটার দু'সপ্তাহ পরে অকুস্থল পরিদর্শন করার অবকাশ পান, জার্মান মুসলিম নেতারা সে'ব্যাপারে খুব সুখি নন৷
শুক্রবারের প্রার্থনা দিবসের উদ্যোক্তাদের একজন, আলা কিজিলকায়া, স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে, তরুণ মুসলিমদের উগ্রপন্থি হওয়া রোখার জন্য মুসলিম সম্প্রদায়ের বৃহত্তর জার্মান সমাজের সমর্থন ও সাহায্যের প্রয়োজন পড়বে৷ ‘‘ওরা আমাদেরই তরুণ৷ ওদের একজনের যাওয়া মানে শুধু মুসলিমদেরই ক্ষতি নয়, গোটা সমাজের ক্ষতি,'' বলেছেন কিজিলকায়া৷
এসি/ডিজি (রয়টার্স, ডিপিএ)