জিহাদি জোগাড় হচ্ছে অনলাইনে
১১ এপ্রিল ২০১৭অনলাইন তৎপরতার দিক থেকে অতীতের সব জঙ্গি গোষ্ঠীকেই হার মানিয়েছে ‘ইসলামিক স্টেট (আইএস)'৷ আগে যেমন আল-কায়েদা বা তালেবানের মতো জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো অফলাইনে জিহাদি নিয়োগের দিকে বেশি গুরুত্ব দিত, আইএস-এর গুরুত্ব বেশি অনলাইনের দিকে৷ যদিও অফলাইনে জঙ্গি গোষ্ঠীটির কার্যক্রম চালু রয়েছে, কিন্তু পশ্চিমা বিভিন্ন দেশের তরুণ প্রজন্ম থেকে জিহাদি বাছাইয়ে তাদের প্রথম পছন্দ অনলাইন সামাজিক যোগাযোগের সাইটগুলো বলেই মনে হচ্ছে৷
জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো মূলত দু'ভাবে অনলাইন থেকে জিহাদি নিয়োগ করে থাকে৷ প্রথম উপায় হচ্ছে, সম্ভাব্য জিহাদিকে খুঁজে বের করা এবং দিনের পর দিন তার পেছনে লেগে থাকা৷ এক্ষেত্রে শুরুর দিকে জঙ্গি তৎপরতায় অংশ নেওয়ার বদলে বিশ্বে তাদের চোখে মুসলমানদের ওপর আক্রমণের বিষয়গুলো নানাভাবে সামনে নিয়ে আসে জঙ্গি গোষ্ঠীর অনলাইন সদস্যরা৷ এভাবে ধীরে ধীরে সম্ভাব্য জিহাদির মনে মুসলমান হিসেবে বঞ্চিত হওয়ার বিষয়টি জাগ্রত করা হয়৷ তাদের বিবেচনায় বিধর্মী কর্মকাণ্ডগুলো তুলে ধরা হয়৷ এরপর উগ্রপন্থার দিকে নিয়ে যেতে চায় তাদের৷ বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, এই কাজে প্রথাগত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছাড়াও নারী জিহাদি খুঁজে পেতে বিভিন্ন ডেটিং সাইটও ব্যবহার করে নিয়োগদাতা জঙ্গি গোষ্ঠীর সদস্যরা৷
দ্বিতীয় পন্থাটি জিহাদিদের জন্য খানিকটা সহজ৷ জিহাদিদের অনলাইন প্রচারণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে অনেক সময় অনেক তরুণ স্বপ্রণোদিত হয়ে নিজেই বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠীর ফোরামে যোগ দেয় এবং জঙ্গি তৎপরতায় অংশ নিতে আগ্রহ প্রকাশ করে৷ এরকম প্রার্থীদের জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো সঙ্গে সঙ্গে যে নিয়ে নেয় তা নিয়৷ বরং বিভিন্নভাবে যাচাইবাছাই করে সম্ভাব্য জিহাদি সম্পর্কে নিশ্চিত হয়৷
আইএস কোনো জিহাদিকে দলে ভেড়ানোর আগে তার একটি ফাইল তৈরি করে যেখানে সেই ব্যক্তির বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগের অ্যাকাউন্টের ঠিকানা, অনলাইন কার্যক্রম, পারিবারিক এবং আর্থিক অবস্থা, সক্ষমতা, আচরণ – সব কিছুই লিপিবদ্ধ করা হয়৷ আর খানিকটা যোগাযোগ তৈরি হয়ে গেলে স্কাইপের মাধ্যমে সরাসরি ভিডিও চ্যাটে সাক্ষাৎকার নেয় জঙ্গি গোষ্ঠীটি৷ ভিডিও চ্যাটের পর প্রথাগত ব্যবস্থার বাইরে এনক্রিপ্টেড বিভিন্ন ম্যাসেজিং সার্ভিস বা ই-মেল ব্যবস্থার মাধ্যমে নতুন জিহাদির সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা হয়৷
এখানে বলে রাখা ভালো, আইএসকে প্রযুক্তি জ্ঞানে যতটা দক্ষ মনে করা হয়, ততটা আসলে তারা নয়৷ পশ্চিমা গোয়েন্দারা এবং এই বিষয়ের সাংবাদিকরা তাদের অনলাইন তৎপরতার দিকে ভালোই নজর রাখেন৷ অনেক সময় তাদের নেটওয়ার্কে গোয়েন্দারা প্রবেশ করে ঘাপটি মেরে থাকে তথ্য সংগ্রহের জন্য৷ প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়ার পর কিংবা কোনো নেটওয়ার্ক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ মনে করা হলে সেই নেটওয়ার্কে সাইবার হামলা চালায় পশ্চিমা দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো, যাকে বলা হয় ‘সাইবারবম্ব'৷ গোয়েন্দারা যে সবক্ষেত্রে সফল হন, তাও না৷ সেটা হলে প্যারিস, ব্রাসেলস বা বার্লিনে হামলা রোখা যেত৷ তবে এ রকম অসংখ্য হামলার পরিকল্পনা রোখার সাফল্য গোয়েন্দাদের রয়েছে৷
উদ্বেগের কথা হচ্ছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও আইএস-এর তৎপরতা রয়েছে৷ বাংলাদেশি কিছু জিহাদি সিরিয়া এবং ইরাকে আইএস-এর হয়ে লড়াই করছে৷ আর বাংলাদেশের মধ্যেও অনেকে একই আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে তৎপরতা চালাচ্ছে যাদেরকে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী আখ্যা দিচ্ছে ‘নব্য জেএমবি' হিসেবে৷ এই জিহাদিদের বিরুদ্ধে লড়তে গেলে পশ্চিমা গোয়েন্দাদের মতো বাংলাদেশের গোয়েন্দা বাহিনীরও ইন্টারনেট জ্ঞান বাড়াতে হবে, বিশেষ করে জিহাদিদের ‘ব্রেনওয়াশের' জন্য ব্যবহৃত অনলাইন নেটওয়ার্ক ধ্বংস করতে হবে৷ সেটা করা গেলে, কারো দরজায় দাঁড়িয়ে তিনি ‘জঙ্গি' কিনা জিজ্ঞাসা করার চেয়ে আরো নিশ্চিত হয়ে অভিযান চালানো সম্ভব হবে৷
আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷