উষ্ণায়ন সত্ত্বেও এত শীত কেন ইউরোপে
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১শীতে কাঁপছে জার্মানি। তাপমাত্রা শূন্যের অনেক নীচে। দেশের অনেক এলাকা ৩০ ইঞ্চি বরফের তলায়। যাঁরা জলবায়ু পরিবর্তনের তত্ত্বে বিশ্বাস করেন না, তাঁরা সামাজিক মাধ্যমে প্রশ্ন তুলেছেন, উষ্ণায়নের তত্ত্বই তো তা হলে ব্যর্থ!
এই সন্দেহপ্রবণ মানুষদের দাবি উড়িয়ে দিয়েছেন পরিবেশ বিজ্ঞানীরা। কিন্তু তা সত্ত্বেও তাঁরা প্রশ্ন তুলতে ছাড়ছেন না। তাঁরা বলছেন, এই ভয়ঙ্কর ঠান্ডাই তো প্রমাণ করে দিচ্ছে যে, কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ পৃথিবীকে গরম করছে না।
কিন্তু ঘটনা হলো, উষ্ণায়নের জন্যই এই রকম ভয়ঙ্কর ঠান্ডা পড়েছে।
কেন এত ঠান্ডা?
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে জার্মানি সহ ইউরোপে যে প্রবল ঠান্ডা পড়েছে, প্রচুর বরফ পড়ছে, তাকে শুধুমাত্র শীতের আবহাওয়া বলা যাবে না। এর কারণ পোলার ভর্টেক্স বা মেরু অঞ্চলের ঘূর্ণি শীতল বাতাস। উত্তর মেরু থেকে এই বাতাস ছড়িয়ে পড়ছে আন্তর-আকাশে।
এই পোলার ভর্টেক্সের সঙ্গে যোগ রয়েছে মাটির ১০ কিলোমিটার উপরের জেট স্ট্রিমের। মেরু অঞ্চলে গ্রীষ্মমণ্ডল থেকে গরম হাওয়া আসে। এই পোলার ভর্টেক্স সেই গরম হাওয়া এবং ঠান্ডা মেরু বাতাসের মাঝখান দিয়ে বইতে থাকে।
এই জেট স্ট্রিম সাধারণত ঠিক করে, ইউরোপে কতটা শীত পড়বে। যদি এটা শক্তিশালী হয় এবং গতি পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে থাকে, তা হলে ইউরোপে হাওয়া বইবে, বৃষ্টি পড়বে, সুমেরু থেকে ঠান্ডা হাওয়া আটকাবে। কিন্তু যদি জেট স্ট্রিম দুর্বল হয়, তা হলে পোলার ভর্টেক্সও দুর্বল হয়ে পড়ে। তখন ইউরোপ জুড়ে শৈত্যপ্রবাহ চলতে থাকে।
জলবায়ু পরিবর্তন কী করে আবহাওয়াকে শীতল করে?
শিল্প বিপ্লবের পর থেকে যথেচ্ছভাবে পেট্রোল-ডিজেল-কেরোসিন পোড়ানোর ফলে বিশ্বের তাপমাত্রা বেড়ে গেছে। ২০১০ থেকে ২০১৯-এর মধ্যে তাপমাত্রা ছিল সব চেয়ে বেশি। জলবায়ুর পরিবর্তন শুধু যে তাপমাত্রা বাড়িয়েছে তাই নয়, আবহাওয়াও আরো চরম হয়েছে, খামখেয়ালি হয়েছে।
পোস্টডাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক গবেষণার প্রধান স্টেফান রাহমস্টর্ফ মনে করেন, এর ফলে মেরু অঞ্চলের আবহাওয়া প্রভাবিত হতে শুরু হয়েছে। গত ৪০ বছরে বিশ্বে তাপমাত্রা যতটা বেড়েছে, মেরু অঞ্চলে তার প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। আর এটাই ইউরোপের আবহাওয়া বদলে দিচ্ছে। মেরু অঞ্চলে শীতের সময় উষ্ণায়নের প্রভাব বেশি থাকে, তাই জেট স্ট্রিম দুর্বল হয়ে পড়ে। তার ফল ভুগতে হচ্ছে ইউরোপকে।
যখন খুব ঠান্ডা হাওয়া গরম ও আর্দ্র হাওয়ার সঙ্গে মেশে, তখন বরফ পড়ে। এবার যেটা হয়েছে, জার্মানির কেন্দ্রীয় অঞ্চলে জিসেলা নামের উচ্চ-চাপের হাওয়া মেরু অঞ্চলের ঠান্ডা হাওয়ার সঙ্গে মিশেছে। সেখানে ট্রিস্টান ও রেইনহার্ড নামে দুটি নিম্ন চাপের এলাকায় ধাক্কা মেরেছে। এখানে সমুদ্র থেকে উষ্ণ ও আর্দ্র হাওয়া মিশেছে বলে এত বরফ পড়েছে।
জিএইচ/এসজি(জেনেট সিউঙ্ক)