ছবি নিয়ে রানা প্লাজায় স্বজনরা
৮ জুলাই ২০১৩বেওয়ারিশ লাশের পরিচয় নিশ্চিত হতে আরো যে কমপক্ষে দু’মাস সময় লাগবে৷
বগুড়ার নন্দিগ্রাম উপজেলার বুলু মিয়া এবং তাঁর স্ত্রী কোহিনুর বেগম জানেন না তাঁরা কবে তাঁদের গ্রামের বাড়িতো ফিরে যাবেন৷ সাভারের রানা প্লাজা ধসের পর আড়াই মাস কেটে গেলেও তাঁরা তাঁদের দুই সন্তানের খোঁজ পাননি৷ কোহিনুর বেগম জানান, তাঁর মেয়ে আসমা আক্তার (২৭) এবং ছেলে সুলতান মিয়া (২৪) রানা প্লাজার নিউ ওয়েভ গার্মেন্টস-এ কাজ করতেন৷ তাঁদের কারুরই খোঁজ এখনও পাওয়া যায়নি৷ তাই তিনি এবং তাঁর স্বামী এখনও সন্তানের খোঁজে সাভারেই অবস্থান করছেন৷ প্রতিদিনই ছেলে আর মেয়ের ছবি নিয়ে তাঁরা ঘুরে বেড়ান ধসে যাওয়া রানা প্লাজার সামনে৷ উপজেলায় গিয়ে খোঁজ নেন, থানায় যান৷ যদি কোনো খোঁজ পাওয়া যায়৷ জানতে চান, কবে ডিএনএ পরীক্ষার ফল জানা যাবে৷ তাঁরা ঢাকা মেডিক্যালের ডিএনএ ল্যাবে গিয়ে ডিএনএ নমুনাও দিয়ে এসেছেন, অথচ এখনও কোনো খবর নেই৷
একইভাবে সুমন মিয়ার (২৫) খোঁজে এখনও রানা প্লাজার সামনে আসেন তাঁর মা মেহের নিগার৷ তাঁদের গ্রামের বাড়ি দিনাজপুরের নবাবগঞ্জে৷ সুমন মিয়া নিউ ওয়েভ বটমের সিউইং সেশকনে কাজ করতেন৷ ছেলেকে খুঁজতে সব জায়গায় গিয়েছেন মেহের নিগার৷ কিন্তু কোথাও পাননি তাঁকে৷ এখন ডিএনএ পরীক্ষাই একমাত্র ভরসা৷
২৪শে এপ্রিল রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় ১,১২৯ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে ইতিমধ্যে৷ সাভার উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল আহসান মোল্লা ডয়চে ভেলেকে জানান, এর মধ্যে ৮২৮টি লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে৷ আর ৩০১টি লাশের ডিএনএ পরীক্ষা করা হচ্ছে পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার জন্য৷ ডিএনএ নমুনা রাখার পর, লাশগুলো জুরাইন কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে৷ ঢাকা মেডিক্যালের ডিএনএ ল্যাবের প্রধান অধ্যাপক ড. শরীফ আখতারুজ্জামান ডয়চে ভেলেকে জানান, তারা লাশের ডিএনএ নমুনা ছাড়াও নিখোঁজদের আত্মীয়স্বজনের ডিএনএ নমুনা নিচ্ছেন৷ এ পর্যন্ত ৫৫০ জন আত্মীয়স্বজনের ডিএনএ নমুনা নিয়েছেন তারা৷ তবে এখনও আত্মীয়স্বজনরা আসছেন৷ তিনি জানান, তাদের ডিএনএ পরীক্ষার প্রায় অর্ধেক কাজ শেষ হয়েছে৷ তাই আশা, আগামী দেড় থেকে দুই মাসের মধ্যে এই পরীক্ষার কাজ শেষ হবে৷ আর তখনই জানা যাবে বেওয়ারিশ লাশের পরিচয়৷
ঢাকা জেলা প্রশাসক ইউসুফ হারুন ডয়চে ভেলেকে জানান, তারা ডিএনএ পরীক্ষার জন্য ডিএনএ ল্যাবকে ৫০ লাখ টাকা দিয়েছেন৷ এখন তারাও অপেক্ষা করছেন পরীক্ষার ফলাফলের জন্য৷
৩০১টি বেওয়ারিশ লাশ দাফন করা হলেও, সাভার উপজেলা প্রশাসনের কাছে আরো ৩২৯ জনকে নিখোঁজ হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছেন তাঁদের আত্মীয়স্বজন, জানান উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা৷ সাভার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল ডয়চে ভেলেকে জানান, সোমবার পর্যন্ত তাদের থানায় ২৬৭টি জিডি হয়েছে৷ এছাড়া, এখনও প্রতিদিনই জিডি করতে আসছেন নিখোঁজ ব্যক্তিদের আত্মীয়স্বজন৷ বুধবারও একটি জিডি হয়েছে৷ এই জিডি নেয়ার জন্য থানায় আলাদা একটি ডেস্ক কাজ করছে৷ তিনি জানান, সুনির্দিষ্ট কিছু কাগজ-পত্র ছাড়া তারা জিডি নেন না৷ তাই কিছু আত্মীয়স্বজনকে ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন তারা৷
এদিকে, বেওয়ারিশ লাশের পরিচয় নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত নিখোঁজদের পরিবার কোনো সহায়তা পাচ্ছেন না৷ আর যাঁদের লাশ পাওয়া যাবে না তাঁদের ব্যাপারে কি সিদ্ধান্ত হবে জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রশাসক বলেন, কোনোভাবে যদি তাঁদের নিহত হওয়া বা নিখোঁজ হওয়া নিয়ে নিশ্চিত হওয়া যায় তাহলে তাঁদের পরিবার ও সহয়তা পাবেন৷ তবে সব সিদ্ধান্ত ডিএনএ টেস্টের ফলাফল পাওয়ার পরই নেয়া হবে৷ সাভার উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, ডিএনএ পরীক্ষায় বেওয়ারিশ লাশের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর নিখোঁজ আরো ২৮ জনের ব্যাপারে বিস্তারিত অনুসন্ধান এবং তদন্ত হবে৷