রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনে প্রিয়াঙ্কা চোপড়া
২২ মে ২০১৮ইউনিসেফের বিশেষ দূত হিসেবে বলিউড তারকা প্রিয়াঙ্কা চোপড়া ঢাকায় আসেন সোমবার সকালে৷ ঢাকায় এক ঘণ্টা অবস্থানের পর তিনি বিমানযোগে ওইদিনই কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে যান৷ ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে বৃহস্পতিবার ঢাকায় ফিরে সংবাদ সম্মেলনে তাঁর অভিজ্ঞতা জানাবেন৷
মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিনে তিনি টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের হারিয়াখালী, উনচিপ্রাং এবং দুপুরে উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন তিনি৷ এ সময় ইউনিসেফ কর্তৃক রোহিঙ্গা শিশুবান্ধব বিভিন্ন কেন্দ্র পরিদর্শন করেন এবং নির্যাতিত শিশুদের সঙ্গে কথা বলেন প্রিয়াঙ্কা৷ বলিউড অভিনেত্রীকে দেখতে হাজার হাজার রোহিঙ্গা ভিড় জমান৷
এর আগে প্রথমদিন বিকালে তিনি বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের সার্বিক পরিস্থিতি দেখতে এবং খোঁজ-খবর নিতে টেকনাফের শামলাপুর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যান৷ বুধবার টেকনাফের লেদা ও উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করার কথা রয়েছে প্রিয়াঙ্কার৷
ইউনিসেফ বাংলাদেশ-এর কমিউনিকেশন ম্যানেজার বেঞ্জামিন স্টেইনলেঞ্চার প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার সফর সম্পর্কে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘তিনি বাংলাদেশে এসেছেন এখানে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা শিশুদের অবস্থা জানতে৷ তাদের সঙ্গে তিনি কথা বলছেন৷ তাদের অবস্থা জানছেন৷ তাদের জীবন-যাপনকে অনুভব করছেন৷ তাদের কী প্রয়োজন তা-ও বোঝার চেষ্টা করছেন৷ তিনি শিশুদের সঙ্গে ক্যাম্পে গিয়ে কথা বলছেন৷ তাদের সঙ্গে গল্প করছেন৷''
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘এখান থেকে যাওয়ার পর তিনি রোহিঙ্গাদের জন্য আলাদা কোনো ক্যাম্পেইন করবেন না৷ তবে বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকায় সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হবেন তিনি৷ সেখানে তিনি তাঁর অভিজ্ঞতা বর্ণনা করবেন৷''
প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার এই সফর নিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা কী ভাবছেন? টেলিফোনে এ নিয়ে কথা হয় বালুখালি ক্যাম্পের লালু জামাল উদ্দিনের সঙ্গে৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন,‘‘ ওই মহিলা শিশুদের সঙ্গে আনন্দ করছে, কথা বলছে৷ আমাদের কারুর কারুর সঙ্গেও কথা বলেছেন৷ আমাদের কাছে জানতে চেয়েছেন, আমরা মিয়ানমার থেকে কেন এসেছি, কিভাবে এসেছি৷''
তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘এর আগেও বিদেশি অনেকে এসছেন৷ আমরা তাদের দেখলে খুশি হই৷ আমাদের উপকার হয়৷''
কী উপকার হয়– জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘কী উপকার হয় তা তো বলতে পারবো না৷ কোনো উপকার তো এখন পর্যন্ত দেখছি না৷''
কুতুপালং ক্যাম্পের আবু সিদ্দিক প্রিয়াঙ্কা চোপড়াকে চেনেন না৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি তার নামও শুনিনি৷ আর তিনি ক্যাম্প পরিদর্শনে এসছেন তা-ও আমি জানি না৷''
তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘এরকম অনেকেই আসেন, কিন্তু আমরা কোনো উপকার দেখি না৷ আমরা নাগরিকত্ব এবং নিরাপত্তার সাথে মিয়ানমারে ফেরত যেতে চাই৷ সেই ব্যবস্থা করলে আমরা খুশি৷''
তবে রোহিঙ্গা যুবক আবুল কালাম প্রিয়াঙ্কা চোপড়াকে চেনেন৷ তিনি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘‘প্রিয়াঙ্কা চোপড়াকে দেখে সত্যি মনে হচ্ছে আমি স্বপ্ন দেখছি৷ তাঁকে এভাবে দেখতে পাবো কোনও দিন কল্পনাও করিনি৷ আমরা ভারতের অধিকাংশ অভিনেতা ও অভিনেত্রীকে চিনি৷''
এর আগে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে এসেছেন নোবেল জয়ী তিন নারী ইরানের শিরিন এবাদি, ইয়েমেনের তাওয়াক্কুল কারমান ও যুক্তরাজ্যের মেরেইড ম্যাগুয়ার, অস্কার বিজয়ী অস্ট্রেলিয়ার অভিনেত্রী কেট ব্লানচেট, তুরস্কের ফার্ষ্টলেডিসহ আরো কয়েকজন সেলিব্রেটি৷ তাঁদের সফর কি রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে কার্যকর কোনো ভূমিকা রাখে? মিয়ানমারে বাংলাদেশ দূতাবানের সাবেক সামরিক এটাশে এবং সাবেক রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল শহীদুল হক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এখন মূল কাজ হলো রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তার সঙ্গে মিয়ানমারে ফেরত পঠানো এবং আইসিসিতে ( ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট) মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রেফারেন্স পাঠানো৷ প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার এই সফরের আসলে সেরকম কোনো গুরুত্ব নেই৷ এটা এক ধরনের প্রচারণা৷ কাভারেজ পায় ইউনিসেফ৷ আর তারা শিশুদের জন্য ফান্ড কালেক্ট করে, তাতেও সহায়ক হয়৷ তারা সেলিব্রেটিদের ফান্ড কালেকশনেই কাজে লাগায়৷''
তিনি বলেন, ‘‘তবে নোবেল জয়ী যে তিন নারী এসেছিলেন, তাঁদের মধ্যে অন্তত দু'জন তাঁদের দেশে গিয়ে রোহিঙ্গাদের জন্য কথা বলেছেন৷ সংবাদ সম্মেলন করেছেন৷''
প্রিয় পাঠক, আপনি কিছু বলতে চাইলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে...