করোনায় সংকটে অ্যামাজনের জনজাতিরা
৭ মে ২০২০দক্ষিণ অ্যামেরিকার বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে অ্যামাজনের জঙ্গল। অনেকগুলি দেশের মধ্যে ছড়িয়ে। সেই জঙ্গলের প্রাচীন অধিবাসীরাও আক্রান্ত হতে শুরু করেছেন করোনা ভাইরাসে। মৃত্যুও হয়েছে কয়েকজনের। মারণ রোগের হাত থেকে বাঁচতে এ বার তাই তহবিল তৈরির ডাক দিয়েছেন তাঁরা। এ দিকে, যুক্তরাজ্যের একটি রিপোর্ট বলছে, করোনা ভাইরাসে সব চেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন ছোট ছোট জনগোষ্ঠীর মানুষেরা। কৃষ্ণাঙ্গদের আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতাও বেশি।
ব্রাজিলে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, সময় মতো করোনার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেনি সেখানকার সরকার। সে কারণেই সংক্রমণ এমন ভয়াবহ চেহারা নিয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে ৬১৫ জনের। ভাইরাসের সংক্রমণ পৌঁছে গিয়েছে প্রেসিডেন্টের দফতরেও। প্রেসিডেন্টের মুখপাত্রের করোনা ধরা পড়েছে। প্রেসিডেন্টের অফিসে আরও বেশ কয়েকজনের সংক্রমণ ঘটেছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে দেশ জুড়ে লকডাউন আরও কঠোর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগেই যদি এই পদক্ষেপ নেওয়া হতো, তা হলে পরিস্থিতি এ ভাবে হাতের বাইরকে চলে যেত না। বস্তুত, করোনা সংক্রমণের একেবারে শুরু থেকে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লকডাউনের বিপক্ষে বিবৃতি দিয়ে যাচ্ছিলেন।
এ তো গেল ব্রাজিলের শহর এবং গ্রামের কথা। এই ব্রাজিলেরই একটি ভূখণ্ড জুড়ে রয়েছে অ্যামাজনের জঙ্গল। যা দেশের সীমান্ত ছেড়ে বিস্তৃত হয়েছে আশপাশের আরও নয়টি দেশে। বহু শতাব্দী ধরে অ্যামাজনের জঙ্গলে আদিবাসী মূলবাসীদের বসবাস। যার মধ্যে বেশ কিছু জনজাতি বিলুপ্তপ্রায়। করোনার প্রকোপ তাঁদের মধ্যেও ছড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রায় ৬০০টি জনজাতি গোষ্ঠী বসবাস করে অ্যামাজনের জঙ্গলে। যার মধ্যে ১৮০টি গোষ্ঠীর মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়েছে। এর মধ্যেই মৃত্যু হয়েছে ৩৩ জনের। এই সমস্ত জনগোষ্ঠীদের নিয়ে কাজ করা একটি সংস্থার অভিযোগ, কোনও দেশের সরকারই এই মানুষদের নিয়ে চিন্তিত নয়। সামান্য ওষুধ, খাবার কিংবা মাস্ক পর্যন্ত পাঠানো হচ্ছে না তাঁদের। ফলে সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে জনজাতিগুলি নিজেরাই অর্থ তুলে নিজেদের রক্ষার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
যুক্তরাজ্যের একটি রিপোর্ট বলছে, করোনায় সব চেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন জনজাতি এবং ছোট ছোট জনগোষ্ঠীর মানুষ। কৃষ্ণাঙ্গরাও অন্যদের চেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। তবে যুক্তরাজ্যের রিপোর্টে স্পষ্ট নয়, বিষয়টি কেবল সে দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ, না কি গোটা পৃথিবীর ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
এ দিকে মঙ্গলবার টাস্ক ফোর্স তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরে বুধবার সেই সিদ্ধান্ত থেকে সম্পূর্ণ সরে এলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। বুধবার তিনি জানিয়েছেন, আপাতত টাস্ক ফোর্স গোটানো হচ্ছে না। এ দিন করোনা পরিস্থিতির তুলনা টেনেছেন তিনি পার্ল হারবার এবং ৯/১১-র ঘটনার সঙ্গে। তাঁর দাবি, করোনা পরিস্থিতি তার চেয়েও ভয়াবহ। বস্তুত, যে ভাবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ দ্রুত লকডাউন তুলে নেওয়ার কথা বলছে, তা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও। তাদের দাবি, এখন দ্রুত লকডাউন তুলে নিলে ভবিষ্যতে আরও দীর্ঘ সময়ের জন্য লকডাউনে থাকতে হতে পারে। ব্রাজিল সে কথা টের পাচ্ছে।
আরও একটি বিষয় নিয়ে বুধবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতি সংঘ। তাদের দাবি, করোনা এবং লকডাউনের জন্য বেআইনি ড্রাগ চক্র জিনিসের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। জাতি সংঘের দাবি, লকডাউন চলতে থাকায় সহজ পথে ড্রাগের পাচার করতে পারছে না ড্রাগ মাফিয়ারা। অন্য পথে লেনদেনের জন্য জিনিসের দাম কোনও কোনও ক্ষেত্রে দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছে। তবে ড্রাগ ব্যবসা তাতে থেমে যায়নি। নেশারুরা বলছেন, ড্রাগে ভেজাল থাকছে। যা মৃত্যুর কারণ পর্যন্ত হতে পারে।
বহু খারাপ খবরের মধ্যেই আশার আলো দেখা গিয়েছে আইসল্যান্ডে। সেখানে ছোটদের স্কুলও চালু হয়ে গিয়েছে। বস্তুত, কোনও কোনও বিশেষজ্ঞ বলছেন, করোনা ছোটদের মধ্যে সে ভাবে সংক্রমিত হচ্ছে না। যদিও বিশ্বের বহু জায়গাতেই সদ্যোজাতের শরীরেও করোনা সংক্রমণের খবর মিলেছে।
এ বার এক নজরে দেখে নেওয়া যাক বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত গোটা বিশ্বের করোনা পরিস্থিতি। জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী মোট করোনা আক্রান্ত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৮ লাখ ২২ হাজার। মৃত্যু হয়েছে দুই লাখ ৬৫ হাজার জনের। সুস্থ হয়েছেন ১৩ লাখ মানুষ। অ্যামেরিকায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১২ লাখ ৬৩ হাজার। মৃত্যু হয়েছে ৭৪ হাজার ৭৯৯ জনের।
এসজি/জিএইচ (রয়টার্স, এপি, এএফপি)