স্টেডিয়াম ঠান্ডা রাখবে সৌরশক্তি
১৯ এপ্রিল ২০১৩কাতারে জুন-জুলাই মাসের গরমে তাপমাত্রা যেখানে পৌঁছায় – হামেহাল ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপর – তা-তে বাকি বিশ্বের প্লেয়ার কি দর্শকদের পক্ষে ফুটবল খেলার কথা ভাবাটাই শক্ত৷ সাধে কি আর প্লাতিনি গ্রীষ্মের পরিবর্তে শীতে বিশ্বকাপের আয়োজন করার কথা বলেছিলেন: যখন কাতারে তাপমাত্রা থাকে ১৭ ডিগ্রি৷ অপরদিকে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে সেন্টার কোর্টের ৫০ ডিগ্রি গরম যদি স্টেফি গ্রাফের মতো টেনিস তারকাদের কাত না করে থাকতে পারে, তাহলে কাতারের গরম মেসি-রুনিদেরও কাত করতে পারবে না৷
তবুও: পেশাদারি ফুটবলার হলেও, জীব তো বটে৷ তাদের, কিংবা রেফারি-লাইন্সম্যানদের, কিংবা সারা বিশ্ব থেকে আগত দর্শকদের মরুভূমির গরমে কষ্ট দিয়ে কোনো লাভ নেই৷ ওদিকে সৌরশক্তি প্রযুক্তিতে জার্মানি বিশ্বে নেতৃস্থানীয়৷ তাই কাতার বিশ্বকাপের সাংগঠনিক পরিষদের জনসংযোগ ও প্রচার বিভাগের পরিচালক নাসের আল-খাতের ইতিমধ্যেই বার্লিনে গিয়ে একাধিক জার্মান কোম্পানির সঙ্গে কথাবার্তা বলে এসেছেন এবং তারা নাকি বেশ কিছু কৌতূহলোদ্দীপক প্রস্তাবও দিয়েছে৷
সব মিলিয়ে কাতার বিশ্বকাপে প্রযুক্তি চোখে পড়ার মতো হবে৷ মডিউলার টেকনোলজি ব্যবহার করে স্টেডিয়ামগুলোকে এমনভাবে তৈরি করা হবে যে, বিশ্বকাপের পরে সেগুলোকে ছোট করে ফেলা সম্ভব হবে৷ স্টেডিয়ামের ওপর দিকের অংশগুলো সরিয়ে ফেলা হবে এবং বাড়তি চেয়ারগুলো যে সব দেশে খেলাধুলার পর্যাপ্ত অবকাঠামো নেই, তাদের দান করে দেওয়া হবে৷
কাতার ধনি আমিরাত৷ বিশ্বের প্রথম শীততাপ নিয়ন্ত্রিত স্টেডিয়াম তৈরি করেছে এই কাতার, যদিও প্রথাগত প্রযুক্তি দিয়ে৷ বিশ্বকাপ অনুষ্ঠানের আবেদনকারী প্রার্থী হিসেব কাতার ৫০০ দর্শক বসার যে স্টেডিয়াম ফিফার কর্মকর্তাদের দেখায়, তা ‘‘বাইরে গরম, কিন্তু ভিতরে এত ঠান্ডা যে ওদের জ্যাকেট চাইতে হয়েছে,'' বার্লিনে বসেই গল্প করেছেন আল-খাতের৷ ‘‘কাজেই স্টেডিয়াম ঠান্ডা করাটা কোনো ব্যাপার নয়৷''
আবার ব্যাপারও বটে, কেননা কাতার ঘোষণা করেছে যে, ২০২২ সালের বিশ্বকাপ কার্বন-নিউট্রাল হবে৷ ফিফাকে যে প্রোটোটাইপ স্টেডিয়ামটি দেখানো হয়েছে, সেটিও ছিল সৌরশক্তি চালিত৷ কিন্তু কাতার বিশ্বকাপের স্টেডিয়ামগুলি তৈরি হবার আগে আরো সক্ষম, আরো কার্যকরি প্রযুক্তির বিকাশ দেখতে চায়৷ পরিকল্পনা হলো, হয় একটি কেন্দ্রীয় ‘সৌরশক্তির খামার' তৈরি করে সেখান থেকে জ্বালানি শক্তি সরবরাহ করা; নয়ত যে ১২টি নতুন স্টেডিয়াম তৈরি করা হবে, তাদের প্রত্যেকটিতে আলাদা ইউনিট বসানো৷
প্রথাগতভাবে বিশ্বকাপ জুন-জুলাইতে অনুষ্ঠিত হবার একটা মূল কারণ হল, মুখ্য ইউরোপীয় লিগগুলির খেলা গোটা শীতকাল জুড়ে, কাজেই বিশ্বকাপ হঠাৎ শীতে অনুষ্ঠিত হলে ইউরোপের প্রধান লিগগুলোকে তাদের নতুন নির্ঘণ্ট তৈরি করতে হিমশিম খেতে হবে৷ কুছ পরোয়া নেই, বলছে কাতার৷ কুছ পরোয়া নেই, বলছে সারা বিশ্বের ফুটবলমোদী৷ কোনবারের কোন বিশ্বকাপে স্টেডিয়ামে কত তাপমাত্রা ছিল, তার হিসেব কি কেউ রাখে?
এসি/ডিজি (রয়টার্স)