1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কাম্বোডিয়ায় সারস পাখি সংরক্ষণ

ক্রিস্টিয়ান ইয়াবুর্গ/এসি২০ এপ্রিল ২০১৬

কাম্বোডিয়ার শেষ সারস পাখিদের বাঁচাতে গেলে আগে বার্ড স্যাংকচুয়ারির আশপাশের চাষিদের শেখাতে হবে, তারা যেন মোষ চরিয়ে ঘাস কাটে; এছাড়া কীটনাশক বা সারের ব্যবহারও কমাতে হবে৷

https://p.dw.com/p/1IYoC
সারস পাখি
ছবি: Colourbox.de

কাম্বোডিয়ার শেষ সারস পাখি

কাম্বোডিয়ার এক বার্ড স্যাংকচুয়ারি৷ হউর পক একটি প্রকৃতি সুরক্ষা সংগঠনের হয়ে কাজ করেন৷ মাঝে মাঝেই তিনি এই ছোট্ট, দূরের গ্রামটিতে আসেন৷ এখানকার মুক্ত প্রান্তর সারস পাখিদের পক্ষে আদর্শ৷ কাজেই এখানে এই প্রকল্পটি চালু করা হয়েছে৷

অনেক জায়গাতে ঘাস এখনও খুব উঁচু৷ প্রকল্পটা হলো: এই ঘাস না কেটে, মোষ চরিয়ে সেই ঘাস ছেঁটে ফেলা৷ চাষিরা প্রকৃতি সুরক্ষা সংগঠনের কাছ থেকে সাতটি মোষ পেয়েছেন৷ এর মধ্যে তিনটি মোষের বাচ্চাও জন্ম নিয়েছে৷ মোষরা যেন পালিয়ে না যায়, সেজন্য ইলেকট্রিকের বেড়া লাগানো হয়েছে৷

ওয়াইল্ডফাউল অ্যান্ড ওয়েটল্যান্ডস ট্রাস্ট-এর কর্মী হউর পক জানালেন, ‘‘আমরা এখানে মোষগুলোকে চরতে দিই৷ ওরা উঁচু ঘাস খায় বা মাড়িয়ে ফেলে – যা আবার সারস পাখিদের পক্ষে খুব ভালো, কেননা তাদের চাই নীচু ঘাস৷ সারস পাখিরা কন্দ, পোকামাকড়, ছোটখাটো জীবজন্তু খেতে ভালোবাসে৷ কাজেই মোষেরা সারসপাখিদের খাবার খোঁজার জায়গা বাড়িয়ে দেয়৷’’

চাষিদেরও তা-তে লাভ আছে৷ অন্য কোনোভাবে এই প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে প্রকৃতি সংরক্ষণের ধারণা ছড়ানো সম্ভব নয়৷ কেননা মানুষজনের রোজগারের পথ এখানে খুব বেশি নেই৷ সবাই মোটামুটি গরিব৷

ধানচাষি

কয়েক কিলোমিটার দূরে আরেকটি গ্রাম৷ এখানে বিশেষ করে ধানচাষিদের বাস৷ ধানচাষিদেরও শিখতে হবে, এমনভাবে চাষ করতে, যাতে প্রাকৃতিক পরিবেশের ক্ষতি না হয়; যাতে কীটনাশকের বিষ বার্ড স্যাংকচুয়ারিতে না গিয়ে পড়ে৷ মজার কথা: তা থেকে চাষিদের লাভই হয়, সাশ্রয় হয়! ধানচাষি কর্ন তং বলেন, ‘‘সত্যিই একটা বিরাট তফাৎ৷ ফসল আগের মতোই হচ্ছে, কিন্তু আমরা আরো কম রাসায়নিক সার ব্যবহার করতে, আরো কম কীটনাশক, আরো কম বীজধান ব্যবহার করতে শিখেছি৷ আগে প্রতি হেক্টারে তিনশ কিলো বীজধান লাগত; আজ লাগে তার অর্ধেক৷ এছাড়া আমরা নিজেরাই সেই বীজধান উৎপাদন করতে পারি৷ আগে আমাদের বীজধান কিনতে হতো; আজ আর কিনতে হয় না৷’’

‘‘শেষে তোমরা সবাই লাখপতি হবে’’, বলছেন ট্রেনার৷ সবার অবশ্য তা ঠিক বিশ্বাস হয় না৷ গোটা এলাকা জুড়ে মানুষজনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে৷ দিচ্ছে স্থানীয় এনজিও-রা, যাদের অনেকেই জার্মান আন্তর্জাতিক জলবায়ু সুরক্ষা উদ্যোগের কাছ থেকে সাহায্য পেয়ে থাকে৷ জলবায়ু পরিবর্তন আর অস্বীকার করার উপায় নেই৷ বর্ষাকাল আসছে দেরিতে৷ অথবা হঠাৎ বৃষ্টিতে দেশ ভেসে যাচ্ছে৷ কাজেই চাষিরা আরো জোরদার চাষ করতে শুরু করেছিলেন: আরো বেশি কীটনাশক, আরো বেশি রাসায়নিক সার৷ কিন্তু এখন চাষিরা শিখছেন: পোকামাকড় দেখলেই বিষ স্প্রে করে তার দফারফা করার কোনো প্রয়োজন নেই – দেশের অনেক জায়গায় যা আজও করা হচ্ছে৷ ধানচাষি নিয়েৎ তিদা বলেন, ‘‘গতবছর ধানের ক্ষেতে অনেক বেশি অসুখবিসুখ করেছে, কারণ বৃষ্টি কম হয়েছে৷ বর্ষার জলে ধুয়ে ধানক্ষেতে যে পলি এসে পড়ে, তা-ও কম ছিল৷’’

বিপন্ন প্রজাতি

এখন চেষ্টা চলেছে রাসায়নিক বর্জিত, পরিবেশ বান্ধব কৃষিকাজ চালু করার৷ স্কুলেও পরিবেশ সুরক্ষা ক্রমেই আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে৷ আজ এই ছেলে-মেয়েরা এসেছে সারস পাখি দেখতে৷ কচিকাঁচাদের অধিকাংশ চাষি পরিবারের সন্তান৷ অনেকে জানেই না যে, সারস পাখিরা একটা বিপন্ন প্রজাতি৷ অথবা তাদের বাবা-মায়ের পেশা – অর্থাৎ চাষবাসের সঙ্গে তার কী সম্পর্ক থাকতে পারে৷ কাজেই চাই প্রচারণা, যেমন একটা কুইজ কিংবা একটা ছবি আঁকার প্রতিযোগিতা৷ ছোটরা শিখছে যে, এত বড়ো এই পাখিটা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঘুমোয়৷ আগে নাকি আরো অনেক সারস পাখি ছিল৷ আরো আশ্চর্যের ব্যাপার হলো:

‘‘সারস পাখি নাকি পৃথিবীর সব ক্রেন পাখিদের মধ্যে সবচেয়ে বড়৷’’

ধীরে ধীরে তারা সারস পাখিকে চিনতে আর বুঝতে শিখছে৷ হউর পক বলেন, ‘‘ওরা বাড়ি গিয়ে বাড়ির লোকজনকেও এ কথা বলবে৷ ওরা সবাই বার্ড স্যাংকচুয়ারির চারপাশেই থাকে৷ এভাবেই ওরা শিখছে যে, পরিবেশ সুরক্ষা ওদের ভবিষ্যৎ জীবনের একটা গুরুত্বপূ্র্ণ অঙ্গ হবে৷’’

বিশ্বের যত জলাভূমির অর্ধেকই নিশ্চিহ্ন হয়েছে৷ শুধুমাত্র যারা এই অনন্য প্রাকৃতিক পরিবেশের মূল্য বুঝতে শিখেছে, তারাই এর সুরক্ষার জন্য কিছু একটা করতে প্রস্তুত থাকবে৷ একমাত্র সেভাবেই ভবিষ্যতেও মেকং নদীর বদ্বীপের দক্ষিণাংশে সারস পাখিদের দেখা পাওয়া সম্ভব হবে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান