কালো টাকা সাদা করা
৫ জুন ২০১৩স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত ১৭ বার কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হয়েছে৷ কিন্তু তাতে কাজের কাজ কিছুই হয়নি৷ বিভিন্ন সময়ের সরকার আশা করেছিল কালো টাকা কর দিয়ে সাদা করার সুযোগ দেয়া হলে রাজস্ব আদায় বাড়বে৷ এবং সেই টাকা দেশের বিনিয়োগে কাজে লাগবে৷ কিন্তু সে উদ্দেশ্য পূরণ হয়নি বলে ডয়চে ভেকে জানান টিআইবি-র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান৷
তিনি বলেন, অর্থমমন্ত্রী নিজেই বলেছেন দেশের অর্থনীতির ৭০ ভাগ কালো টাকা৷ কিন্তু এ পর্যন্ত কত কালো টাকা সাদা হয়েছে তা কখনোই প্রকাশ করা হয়নি৷ জানা যায়নি কালো টাকার কত অংশ দেশে বিনিয়োগ হয়েছে৷ তাঁর মতে, কালো টাকা সাদা করার সুযোগ নেয় অসত্ লোকজন৷ এতে দুর্নীতিবাজ এবং অসত্ লোকজন উত্সাহিত হয়, পায় দুর্নীতি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ৷ সংবিধানের ২০ (২) অনুচ্ছেদ, কালো টাকা বা অনুপার্জিত আয় ভোগ করতে দেয়ার বিরুদ্ধে৷ সরকার কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়ে স্পষ্টই সংবিধান লংঘন করছে৷ এর ফলে মানুষ অসত্ উপায়ে উপার্জন করে তার একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ দিয়ে রেহাই পেয়ে যাচ্ছে, যা ন্যায় বিরোধী৷
ড. ইফতেখার বলেন, সত্ উপায়ে উপার্জন করে মানুষকে বেশি কর দিতে হচ্ছে৷ আর অসত্ উপায়ে উপার্জন করে তা নাম মাত্র কর দিয়ে বৈধ করা হচ্ছে৷ এটা রাষ্ট্রে এবং সমাজে বৈষম্য সৃষ্টি করছে, যা সুশাসন বিরোধী৷
তিনি বলেন, এবার হাউজিং এবং আবাসন খাতে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়ার কথা বলা হচ্ছে৷ যার ফল হবে আরো ভয়াবহ৷ কারণ এই খাতে এমনিতেই কালো টাকা এবং অসত্ লোকদের দাপট৷ এর ওপর যদি প্রাতিষ্ঠানিকভাকে এই খাতে কালো টাকাকে সুযোগ দেয়া হয়, তাহলে সত্ মানুষ এবং যাঁদের কালো টাকা নেই তাঁরা ভিড়তে পারবেন না৷ সাধারণ মানুষের জন্য আবাসন ব্যবস্থা আরো কঠিন হয়ে পড়বে৷
বর্তমান সরকার তার নির্বাচনী ইশতেহারে দুর্নীতি দূর এবং কালো টাকা সাদা করার সুযোগ না দেয়ার কথা বলেছিল৷ কিন্তু এখন তারা তাদের নির্বাচনী প্রশ্রিুতি ভঙ্গ করছে বলে জানান ড. ইফতেখার৷ সরকারের এই আচরণে রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে দুর্নীতি স্থায়ীভাবে জায়গা করে নিচ্ছে, যা উদ্বেগজনক এবং হতাশাব্যঞ্জক৷
তাঁর মতে, কালো টাকা আর করযোগ্য আয়কে গুলিয়ে ফেলা হচ্ছে৷ বৈধ আয়ের কর দেয়া না হলে, সেই আয়ের কর দেয়ার সুযোগ দেয়া যেতে পারে৷ কিন্তু অবৈধ আয়, কর দেয়ার মাধ্যমে বৈধ করার নীতি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়৷ বরং সেই অবৈধ আয় চিহ্নিত করে বাজেয়াপ্ত করে সরকারি কোষগারে নেয়া উচিত৷ অন্যদিকে, অবৈধ আয়ের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে শাস্তির আওতায় আনা প্রয়োজন৷