কেমন নারী সাংসদ চায় আওয়ামী লীগ?
২০ জানুয়ারি ২০১৯এবার ১৫১০ নারী মনোয়ন প্রত্যাশীর কাছ থেকে ফরম বিক্রি করে আওয়ামী লীগ মোট আয় করেছে চার কোটি ৫৩ লাখ টাকা৷ প্রতিটি ফরম বিক্রি হয়েছে ৩০ হাজার টাকা করে৷ যেসব নারীরা সরসরি আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত এবং একসময় সংসদ সদস্যও ছিলেন, তারা তো বটেই, নবীন এবং সরাসরি রাজনীতেত যুক্ত না থাকা সংস্কৃতি অঙ্গনের পরিচিত অনেক মুখও মনোনয়নপত্র কিনেছেন৷
চলচ্চিত্র অভিনেত্রী, নাট্যাভিনেত্রী, দলের জন্য অবদান রাখা প্রয়াত নেতাদের সহধর্মিণী-সন্তান ছাড়াও তৃতীয় লিঙ্গের কয়েকজনও কিনেছেন ফরম৷ পরিচিত ও স্বল্প পরিচিত মিলিয়ে কমপক্ষে ১০০ জন অভিনেত্রী, মডেল এবার সংরক্ষিত আসনে মনোনয়ন চাইছেন৷ এমনকি আগে বিএনপি করতেন এমন কেউ কেউও এখন আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চান৷
এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৩০০ আসনের মধ্যে এককভাবে ২৫৭টি আসন পেয়েছে৷ এই সংসদের প্রথম অধিবেশন বসবে ৩০ জানুয়ারি৷ এরপর তারা নারী সংসদ সদস্য নির্বাচন করবেন৷
১৭ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন কমিশন সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচনের জন্য তফসিল ঘোষণা করবে৷ এটা সরাসরি নির্বাচন নয়। বর্তমানে ৫০টি সংরক্ষিত নারী আসন রয়েছে৷ সংসদের দলের পাওয়া আসনের সংখ্যানুপাতে নির্ধারিত এই নারী আসনে রাজনৈতিক দল বা জোটগুলো তাদের একক প্রার্থী মনোনয়ন দেয়৷
সংরক্ষিত ৫০ সংখ্যাকে দেশের মোট নির্বাচনি আসন ৩০০ দিয়ে ভাগ করলে যে ভাগফল পাওয়া যাবে তাকে দলের জয় করা আসন দিয়ে গুণ করলেই পাওয়া যায় সে দলের নারী সদস্যের সংখ্যা৷ উহাদরণস্বরূপ, জাতীয় পার্টি সংসদে ২২টি আসন পেয়েছে৷ এই হিসাবে এ দলটির ৪টি সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পাওয়ার কথা৷ ৫০/৩০০ = ০.১৬৬৭৷ এরপর ২২ X০.১৬৬৭= ৩.৬৭৷
এই হিসাবে, আওয়ামী লীগের এককভাবে ৪৩ জন নারী সংসদ সদস্য পাওয়ার কথা৷ অন্য কোনো দল বা স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধ হলে এই সংখ্যা বেড়ে যাবে৷ বিএনপি ও তাদের মিত্র গণফোরাম ৮টি আসনে বিজয়ী হয়ে সংরক্ষিত আসনে একজন মহিলা সংসদ সদস্য পাওয়ার কথা৷ কিন্তু এখনো তাঁরা শপথ না নেয়ায় সে আসনটি বাদ দিয়ে মনোনয়ন দেয়া হবে৷
নারী সংসদ সদস্যরা একজন নির্বাচিত সংসদ সদস্যের সমান মর্যাদা ও অধিকার ভোগ করেন৷
আওয়ামী লীগের উপ দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বডুয়া ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আওয়ামী লীগ সংসদীয় বোর্ডের মাধ্যমে মনোনয়ন দেয়৷ আর সংসদীয় বোর্ডের প্রধান হলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ আমরা বরাবরই দেখেছি যে প্রথমত সংবিধানে সংসদ সদস্য হওয়ার যে যোগ্যতার কথা বলা হয়েছে তা আছে কিনা৷ এরপর দলের সাথে তাঁর সম্পর্ক কতদিনের৷ তাঁর দলের জন্য কতটুকু ত্যাগ বা কমিটমেন্ট রয়েছে৷ স্ব স্ব পেশায় বা দলীয় রাজনীতিতে তাঁদের কন্ট্রিবিউশন কতটুকু আছে৷ আমরা তৃণমূল এলাকা থেকে যখন কাউকে নিয়ে আসি তখন দেখি ওই এলাকায় নারী সংসদ সদস্য আছেন কিনা৷ না থাকলে কত দিন আগে ছিল৷ সুষম বন্টনের বিষয়টিও বিবেচনায় নেয়া হয়৷''
সাংস্কৃতিক অঙ্গন এবং তারকাদের মনোনয়ন চাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা এখন সবচেয়ে বেশি৷ বিভিন্ন পেশা এবং অঙ্গনের নারীরা যে মনোনন চাইছেন এটা তারই প্রতিফলন৷ তাঁরাও আওয়ামী লীগকে সময় দিতে চাইছেন৷ তবে তারকা খ্যাতি বা অন্য যেকোনো যোগ্যতার চাইতে দলের প্রতি কমিটমেন্টই মনোনয়নের ক্ষেত্রে সর্বাধিক গুরত্ব পাবে৷''
যেসব নারীরা মনোনয়ন চেয়েছেন, তাঁদের মধ্যে আছেন মহিলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক রোকেয়া প্রাচী৷ তিনি একজন খ্যাতিমান অভিনেত্রীও৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এবারই প্রথম বিপুল সংখ্যক সাংস্কৃতিক কর্মী, ব্যক্তিত্ব, অভিনেত্রী আওয়ামী লীগের নির্বাচনে কাজ করেছেন, প্রচারে অংশ নিয়েছেন৷ তাই তাঁদের মধ্যে আগ্রহ বেড়েছে৷ তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ যদি সংসদ সদস্য হয়ে যান তাকে আমরা ইতিবাচক হিসেবেই দেখি৷ আগে আওয়ামী লীগ করতেন না, কিন্তু এখন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চান, তাতে দোষের কিছু নেই৷ এখন হয়তো তিনি আওয়ামী লীগের সাথে যুক্ত হতে চান৷ সবচেয়ে বড় কথা মনোনয়ন চূড়ান্ত করবেন দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা৷ তাঁর বিবেচনার প্রতি আমাদের আস্থা আছে৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘এর আগেও আমরা দেখেছি বরেণ্য ব্যক্তি বা সমাজে যাদের ইতিবাচক ইমেজ আছে তাঁদের মনোনয়ন দেয়া হয়েছে৷ আর নতুন যাঁরা মনোনয়ন চান, তাঁরা দলের সাথে কত দিন থাকেন তা সময়ই বলে দেবে৷''
যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আক্তার ২০০৯ সালের সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনে আওয়ামী লীগের এমপি ছিলেন৷ এবারও তিনি মনোনয়ন চান৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আওয়ামী লীগ এমন একটি দল যেখানে সব শ্রেণী, পেশা, সম্প্রদায়ের মানুষকে ধারণ করে৷ তবে রাজনীতি যাঁরা করেন, রাজনৈতিক আন্দোলন সংগ্রাম করেন, তাঁরা দলের সঙ্গে সমব সময় যেকোনো পরিস্থিতিতে থাকেন৷ তাই তাঁদের আশা থকে যে তাঁরা একসময় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হবেন৷ সেটা যেকেনো পর্যায়ের হতে পারে৷ সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য তো অনেক বড় ব্যাপার৷ তাই এই ব্যাপারে যাঁরা রাজনীতি করেন তাঁদেরই মূল্যায়িত করা উচিত৷''
তিনি বলেন, ‘‘পাশাপাশি, জননেত্রী শেখ হাসিনা সাংস্কৃতিক কোটা, উপজাতি কোটা, সংখ্যালঘু কোটায়ও মনোনয়ন দেন৷ অতীতে দিয়েছেন৷''
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘অনেকেই তাঁদের সেক্টরের কথা সংসদে বলতে চান৷ তাঁরা চান তাঁদের কথা তুলে ধরতে৷ এটা স্বাভাবিক৷ তাই বলে ১৫০ জন নায়িকা মনোনয়ন চাইবেন! এটা নিয়ে আমাদের কর্মীদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক আছে৷ কিন্তু আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নাই৷''