ইরানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন
১৯ মে ২০১৭ইরানের জটিল রাজনৈতিক কাঠামোয় একাধিক ক্ষমতাকেন্দ্র রয়েছে৷ সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লাহ খামেনেই-এর হাতেই ক্ষমতার মূল রাশ রয়েছে৷ শক্তিশালী রেভোলিউশানারি গার্ডস বাহিনীসহ একাধিক রাষ্ট্রযন্ত্র নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা তাঁরই হাতে৷ অন্যদিকে মজলিস বা সংসদের সীমিত ক্ষমতা রয়েছে৷ অতএব, প্রেসিডেন্ট পদের জন্য সীমিত ক্ষমতা অবশিষ্ট থাকে৷ তা সত্ত্বেও এই পদের যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে৷ খামেনেই এবারের নির্বাচনকে গুরুত্বপূর্ণ আখ্যা দিয়ে দেশবাসীর উদ্দেশ্যে বিশাল সংখ্যায় ভোট দেবার আহ্বান জানিয়েছেন৷
বর্তমান প্রেসিডেন্ট ৬৮ বছর বয়স্ক হাসান রোহানি বাস্তববাদী ও অপেক্ষাকৃত নরমপন্থি বলে পরিচিত৷ আন্তর্জাতিক মঞ্চে প্রায় একঘরে হয়ে থাকা দেশটিকে অনেকটাই উন্মুক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন তিনি৷ বিশেষ করে আন্তর্জাতিক সমাজের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি স্বাক্ষর করায় ইরানের উপর অনেক নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হচ্ছে৷ সামাজিক ও অর্থনৈতিক সংস্কারের ক্ষেত্রেও তিনি বেশ সক্রিয় রয়েছেন৷
অন্যদিকে ৫৬ বছর বয়সি এবরাহিম রাইসি কট্টরপন্থি ও রক্ষণশীল হিসেবে পরিচিত৷ রেভোলিউশানারি গার্ডস বাহিনী তাঁকেই সমর্থন করে৷ রোহানির আমলে তাদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতা অনেকটা খর্ব করা হয়েছে৷ হারানো জমি ফিরে পেতে তারা রাইসিকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখতে চাইছে৷ প্রকাশ্যে না বললেও স্বয়ং খামেনেই রাইসিকেই সমর্থন করেন, এ সত্য গোপন নয়৷ এমনকি নিজের উত্তরসূরি হিসেবেও রাইসিকেই তাঁর পছন্দ৷
দুই সম্ভাবনাময় প্রার্থী ছাড়াও এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সংস্কারপন্থি নেতা মোস্তাফা হাশেমিতাবা এবং প্রাক্তন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী মোস্তাফা মীরসালিম৷
এবারের নির্বাচনে দেশের জরাজীর্ণ অর্থনীতি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়৷ রোহানি ও রাইসি পরস্পরের বিরুদ্ধে এই বিষয়টিকেই মূল হাতিয়ার করার চেষ্টা করছেন৷ আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা শিথিল হওয়া সত্ত্বেও ইরানের অর্থনীতি এখনো মাথা তুলে দাঁড়াতে পারছে না বলে রোহানিকে কোণঠাসা করার চেষ্টা করছেন রাইসি৷ অন্যদিকে রোহানি ভোটারদের সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, রাইসি ক্ষমতায় এলে দেশ আবার কয়েক বছর পিছিয়ে যাবে এবং অর্থনীতির আরও ক্ষতি হবে৷ উল্লেখ্য, ১৯৮১ সাল থেকে ইরানে সব প্রেসিডেন্টই দ্বিতীয় বার পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন৷
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রেভোলিউশানারি গার্ডস বাহিনী ও তাদের আজ্ঞাবহ বাসিজ মিলিশিয়ার ভূমিকা অত্যন্ত বিতর্কিত৷ ২০০৯ সালে তারা ভোটগণনার ক্ষেত্রে কারচুপি করে মাহমুদ আহমেদিনিজাদকে জিতিয়ে দিয়েছিল বলে অভিযোগ উঠেছিল৷ ফলে গোটা দেশে প্রায় ৯ মাস ধরে প্রতিবাদ, বিক্ষোভ দেখা গিয়েছিল৷ এবার সে রকম অরাজকতার আশঙ্কা কম বলেই পর্যবেক্ষরা মনে করছেন৷
এসবি/এসিবি (রয়টার্স, এপি)