ক্রিমের নাম পরিবর্তন: নতুন বোতলে পুরনো মদ
২৬ জুন ২০২০সত্তরের দশকে এই ক্রিম বাজারে আসার পর তা কিশোরী এবং তরুণীদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে। ভারত, বাংলাদেশের টিভি চ্যানেলগুলোতে নিয়মিত বলিউড তারকাদের এর বিজ্ঞাপনে দেখা যায়। বিজ্ঞাপনের মূল বিষয় ঘুরে ফিরে একটাই, গায়ের রঙের কারণে চাকরি হয় না, বিয়ে হয় না অথবা মেয়েরা সাহসী কাজ করলেও আকর্ষণীয় লাগে না। ‘ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি মাখো সব সমস্যার সমাধান পাও' এই মোটো নিয়েই এতদিন প্রচারণা চালিয়ে আসছে ইউনিলিভার। ভারতে বছরে ২৪ বিলিয়ন রুপি আয় হয় এই একটি মাত্র পণ্য থেকে। (সূত্র: বিবিসি)
বিশ্বজুড়ে এখন বর্ণবিদ্বেষবিরোধী আন্দোলন চলছে। বর্ণবৈষম্য সমর্থন করে এমন পণ্যগুলো নিষিদ্ধের চাপ সৃষ্টি হয়েছে। গত দুই সপ্তাহে বিশ্বব্যাপী চেঞ্জ অর্গানাইজেশনের তিনটি পিটিশন বিশ্ব বাজার থেকে এই ক্রিম নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছে। ‘ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি'র বিরুদ্ধে বর্ণবৈষম্যের অভিযোগে কয়েক হাজার মানুষ স্বাক্ষর করেছিলেন।
অবশেষে প্রতিষ্ঠানটি স্বীকার করেছে তাদের ক্রিমের প্রচারে ফর্সা, উজ্জ্বল এসব শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, যা আসলেই বর্ণবৈষম্যকে উসকে দেয়। ফলে নাম পরিবর্তনের ঘোষণা দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি থেকে ফেয়ার শব্দ বাদ দেয়ার কথা জানিয়েছে তারা।
কিন্তু আসলেই নাম পরিবর্তনে এই পণ্যের গুণাগুণে কি পরিবর্তন আসবে? অর্থাৎ যারা বছরের পর বছর এই ক্রিমটি নির্দিষ্ট একটি ধারণাকে ঘিরে কিনছেন, তারা তো নাম বদলালেও ওই পণ্যই কিনবেন এবং ইউনিলিভার এটা ভালোভাবেই জানে। তারা জানে তাদের হারাবার কিছু নেই। এখন ‘ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি', ‘ফেয়ার অ্যান্ড হ্যান্ডসামের' বদলে যদি ‘কিউট অ্যান্ড লাভলি', ‘ডেয়ার অ্যান্ড হ্যান্ডসাম' হয়, তাহলে কি পণ্যের চাহিদা কমে যাবে? মোটেই না।
বরং যেটা করা যেতে পারে তাহল প্রচারে পরিবর্তন। বিজ্ঞাপনে পরিবর্তন। অর্থাৎ রঙ, চেহারা যে মুখ্য নয় সেটাকে তুলে ধরতে হবে, তবেই না বৈষম্য দূর হবে। মানুষের চিন্তা-ভাবনায় পরিবর্তনটা বেশি জরুরি। আমাদের দেশের ছেলে-মেয়েদের যদি গায়ের রং নিয়ে কটূ কথা শুনতে না হতো, কালি, শ্যামা, কালু এই ডাকগুলো ডাকনাম হয়ে না যেতো, তাহলে কি ফেয়ার অ্যান্ড লাভলির প্রয়োজন হত?