খোকনের ভাগ্য শনিবার যাচাই
২৭ ডিসেম্বর ২০১৯প্রার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে চিন্তায় আছেন দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন৷ দক্ষিণ সিটিতে আওয়ামী লীগ তাকে মনোনয়ন দেবে, না নতুন মুখ খুঁজবে? এই প্রশ্নই এখন সবখানে৷
শনিবার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন বোর্ডেও বৈঠক৷ এই বৈঠকেই ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদে দলীয় মনোননয়ন চূড়ান্ত হবে৷ উত্তর ঢাকায় বর্তমান মেয়র আতিকুল ইসলামই যে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী হচ্ছেন তা মোটামুটি চূড়ান্ত৷
তবে দক্ষিণ ঢাকায় অনিশ্চয়তা বর্তমান মেয়র সাঈদ খোকনকে নিয়ে৷ মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য ধানমন্ডি এলাকার ঢাকা-১০ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য শেখ ফজলে নূর তাপসও দলীয় মনোনয়ন পত্র কিনেছেন৷ তাপস বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনির ছেলে৷ তাপসের বড় ভাই শেখ ফজলে শামস পরশকে এবার যুবলীগের সভাপতি করা হয়েছে৷ তাপস ছাড়াও সংসদ সদস্য হাজি সেলিমসহ আরো দু'জন প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতাও দলীয় মনোনয়ন পত্র কিনেছেন৷
আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায় থেকে সিগন্যাল পেয়েই মেয়র পদে প্রার্থী হতে মনোনয়ন পত্র কিনেছেন তাপস৷ সেটা ধারণা করতে পারছেন সাঈদ খোকনও৷ বৃহস্পতিবার মনোনয়নপত্র কেনার সময় কেঁদেছেন তিনি। বলেছেন, ‘‘আমি কখনো কোনো দায়িত্বে অবহেলা করিনি৷'' সাঈদ খোকন ঢাকার প্রথম নির্বাচিত মেয়র মেহাম্মদ হানিফের ছেলে৷
সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে না পারার অভিযোগ রয়েছে সাঈদ খোকনের বিরুদ্ধে৷ এছাড়া দলের সঙ্গে দূরত্ব এবং সিন্ডিকেট তৈরি করারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে৷ তবে শুক্রবার সাঈদ খোকন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমি মনোনয়ন পাব বলে পুরোপুরি আশাবাদী৷ প্রার্থী পরিবর্তনের যে খবর আপনারা শুনছেন আমার কাছে তার উল্টো খবর আছে৷''
মনোনয়ন পত্র কেনার সময় কেঁদে দেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘আমি আবেগে কেঁদে ফেলেছি৷ ষড়যন্ত্র বলা ঠিক হবে না৷ নানা রকম অপপ্রচার চালিয়ে আমাকে কোণঠাসা করে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে, সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল৷ আমি নগরবাসীর দোয়া চেয়েছি, তাদের দেয়া পেয়েছি৷ সব ঠিক হয়ে গেছে৷''
অন্যদিকে, আতিকুল ইসলামকে আরো একবার মনোনয়ন দিয়ে তার সক্ষমতা প্রমাণের সুযোগ দিতে চায় আওয়ামী লীগ৷ ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিলের নির্বাচনে নির্বাচিত ঢাকা উত্তরের মেয়র আনিসুল হক মারা গেলে চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি উপ নির্বাচনে মেয়র হন আওয়ামী লীগের আতিকুল ইসলাম৷ সেই হিসেবে তিনি মেয়রের দায়িত্ব পালন করেছেন মাত্র ১০ মাস৷ তাই তাকে আওয়ামী লীগ একবার পূর্ণ মেয়াদে সুযোগ দিতে চায়৷
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, ‘‘আমরা ভোটারদের কাছে গ্রহণযোগ্য, সৎ এবং বিতর্কমুক্ত প্রার্থীকেই মেয়র পদে মনোনয়ন দেব৷ যারা তারা প্রার্থী হতে আবেদন করেছেন তাদের মধ্য থেকেই প্রার্থী ঠিক করবো৷ প্রার্থী পরিবর্তন হবে কিনা, নতুন মুখ আসবে কিনা তা এখন বলা যাবে না৷ আমরা এটা ঠিক করব শনিবারের বৈঠকে৷''
ঢাকা উত্তরে এবার বিএনপির মেয়র প্রার্থীও পরিবর্তন হচ্ছে না৷ উপনির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিলেও ২০১৫ সালের এপ্রিলের মেয়র নির্বাচনে উত্তরে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ছিলেন তাবিথ আউয়াল৷ ওই নির্বাচনে তিনি হেরে গেলেও তাকে এবারও প্রার্থী করা হচ্ছে৷ তিনি বিএনপি নেতা এবং এফবিসিসিআই এর সাবেক সভাপতি আব্দুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে৷ তাবিথ বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য৷ জানা গেছে এখানে ব্যবসায়ী শিল্পপতিদেরও এক ধরনের হিসেবনিকেষ আছে৷
তবে ঢাকা দক্ষিণে এবার প্রার্থী পরিবর্তন করছে বিএনপি৷ গত নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী কেন্দ্রীয় নেতা মীর্জা আব্বাস হেরে যান৷ এবার সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে নাম উঠে এসেছে সদ্যপ্রয়াত ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাক হোসেনকে৷ তিনি বিএনপির চেয়ারপার্সনের বিদেশ বিষয়ক উপদেষ্টা কমিটির সদস্য৷ সাদেক হোসেন খোকার ইমেজকে কাজে লাগাতে চায় বিএনপি৷
বিএনপির স্থায়ী কমিটি ও দলীয় মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘‘আমরা শনিবার আনুষ্ঠানিকভাবে দুই সিটিতে বিএনপি'র মেয়র পদে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করব৷ প্রার্থী প্রায় চূড়ান্ত৷ প্রার্থী নির্বাচনে আমরা তরুণ, যোগ্য, শিক্ষিত এবং গ্রহণযোগ্যতাকে প্রাধান্য দিয়েছি৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘এই নির্বাচনে আমরা নির্বাচন প্রক্রিয়াকে সচল রাখতে অংশ নিচ্ছি৷ কারণ ভোটে অংশ না নিলে জনগণ ভোট দেয় না৷ আর অংশ নিলে ভোট দিতে পারে না৷ আমরা দেখতে চাই তারা কত ভোট চুরি করতে পারে৷ ভোটে অংশ না নিলে তো প্রক্রিয়াটিই আর থাকবে না৷''
সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হলেও কাউন্সিলররা স্বতন্ত্র৷ তবে দলীয় সমর্থন থাকবে৷ দুই বড় দলই তাই তাদের সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করবে বলে দুই দলের নেতারা জানিয়েছেন৷
এদিকে জাতীয় পার্টি এই নির্বাচনে আলাদাভাবে অংশ নেবে৷ দলটি মেয়র পদে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে৷ কয়েকটি বাম সংগঠনও এই নির্বাচনে প্রার্থী দিচ্ছে বলে জানা গেছে৷
নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী দুই সিটিতে মেয়র ও কাউন্সিলর পদে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ তারিখ ৩১ ডিসেম্বর৷ মনোনয়নপত্র যাচাই ২ জানুয়ারি৷ প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ৯ জানুয়ারি৷ ২০২০ সালের ৩০ জানুয়ারি ভোট৷