তীব্র গরমে বাংলাদেশে জনজীবন বিপর্যস্ত
২৩ মে ২০১৭এই সপ্তাহে বাংলাদেশে গরম কমার সম্ভাবনা নেই উল্লেখ করে বিদ্যুৎ কর্মকর্তারাও জানিয়েছেন, রক্ষণাবেক্ষণসহ বিভিন্ন কারণে বন্ধ অন্তত ১০টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের পরিস্থিতির উন্নতিতে আরও তিন-চার দিন লাগবে৷
কয়েকদিন ধরেই তাপপ্রবাহ চলছে দেশজুড়ে৷ সোমবার ঢাকায় ৩৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়, সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল যশোরে ৩৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস৷ গরমের কারণে বিদ্যুতের চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে প্রায় তিন হাজার মেগাওয়াট ঘাটতি দেখা দিয়েছে৷ ফলে দেশ এই তিন হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিংয়ের কবলে পড়েছে৷ গ্রামাঞ্চল ও মফস্বল শহরে লোডশেডিং হচ্ছে প্রায় ১০ ঘণ্টা করে৷ ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা, রাজশাহীর মতো বড় বড় শহর-নগরেও লোডশেডিং হচ্ছে দফায় দফায়৷ কোথাও কোথাও রয়েছে লো-ভোল্টেজের সমস্যা৷
ফেসবুক ও টুইটারে অনেকেই নিজ নিজ এলাকার অবস্থা তুলে ধরেছেন৷ কেউ কেউ মজা করতেও ভোলেননি৷
গাজী এমএ জলিল ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘যেভাবে তাপদাহ চলছে তাতে ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের স্কুলে যাওয়া-আসা বেশ কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ এ অবস্থায় এ তাপদাহের হাত থেকে তাদেরকে রক্ষার জন্য স্কুলগুলোতে গ্রীষ্মকালীন ছুটি দেয়া যায় কিনা, তা ভেবে দেখার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানাচ্ছি৷’’
সিরাজুল ইসলাম ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘তীব্র তাপদাহ চলছে, বিদ্যুৎ নেই, তবুও অফিসে ঠাণ্ডা জায়গায় আছি৷ কিন্তু কষ্ট হচ্ছে ঐ সব মেহনতি মানুষের জন্য, যারা জীবন জীবিকার জন্য এই তীব্র গরমের মাঝেও মাঠে-ঘাটে-রাস্তায় নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে৷’’
মামুন মিরাজুল ফেনীর অবস্থা সম্পর্কে জানাতে গিয়ে লিখেছেন, ‘‘ফেনীতে একদিকে চলছে ভয়াবহ তাপদাহ অন্যদিকে চলছে ভয়াবহ লোডশেডিং৷ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৬-৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, পল্লী বিদ্যুতের এই ভয়াবহ লোডশেডিংয়ের কারণে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে৷’’
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ এই গরমের কারণ বর্ণনা করতে গিয়ে লিখেছেন, ‘‘জ্যৈষ্ঠ মাসে কাঁঠালপাকা গরমই আসার কথা৷ কিন্তু আমরা এখন যে গরম পার করছি, তা কাঁঠালপাকা না, মানুষপাকা গরম৷ প্রকৃতি ঢাকা মহানগরীতে নদী-নালা, খাল-বিল গাছপালা আর আলোবাতাসের যে সুযোগ রেখেছিল তাতে এই অসহ্য গরম পড়ার কথা না৷ কিন্তু আবর্জনার ভাগাড় বুড়িগঙ্গার সাধ্য নেই আমাদের গরম কিছু কমায়, বালু তুরাগও শেষের পথে৷ লোভী ও বেকুব কর্তারা ফলের গাছ উজাড় করে লাগাচ্ছে বনসাই বা প্লাস্টিক গাছ, উন্মুক্ত স্থান ভরাট করে তুলছে দালান৷ স্বচ্ছল মানুষেরা ব্যক্তিগত সমাধান হিসেবে নিজেদের বাক্সবন্দি করছেন৷ কখনো গরমের ঠেলায়, কখনো স্ট্যাটাসের জন্য বাড়ি বাড়ি এসি, গাড়িতে এসি, মার্কেট অফিসে এসি৷ শহর আরও গরম হচ্ছে৷’’
আমিনুর রশীদ লিখেছেন, ‘‘মরার উপর খাড়ার ঘা – একে তো গরমে প্রাণ ওষ্ঠাগত, তার উপর আবার ৩০০০ মেগাওয়াট লোডশেডিং৷’’
বিএফ সুমন লিখেছেন, ‘‘এটা কেমন উন্নয়নশীল দেশ, দিনের মধ্যে ১৩ বার লোডশেডিং?’’
শারমিন শম্পা লিখেছেন, ‘‘লোডশেডিং ও যশোরের প্রায় ৪০ ডিগ্রি তাপমাএায় আমি পাগল প্রায়৷ শীঘ্রই হয়ত হাসপাতালে যেতে হবে৷’’
সাখাওয়াত হোসেইন লিখেছেন, ‘‘উফ গরমের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে লোডশেডিং! উৎপাদিত এত বিদ্যুৎ গেল কোথায়?’’
শামীম আরেফীন বাবুল লিখেছেন, ‘‘পৃথিবীর ইতিহাসে ফরিদপুর জেলায় লোডশেডিংয়ে প্রথম স্থান অধিকার করবে বলে আমরা আশাবাদী৷’’
সাইফুল ইসলাম অবশ্য লিখেছেন, ‘‘সরকার লোডশেডিং দিয়ে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের গুরুত্ব বোঝাচ্ছে৷’’
স্বপন দেবনাথ লিখেছেন, তিনি তাঁর জীবনে এত গরম কখনো অনুভব করেননি৷
রাইসা আফতার রুমি লিখেছেন, ‘‘গরম তুমি বড়ই মহান, ট্যাপের পানিকে দিয়েছো চায়ের সম্মান৷’’
তুহিন চৌধুরী লিখেছেন, ‘‘ভয়াবহ লোডশেডিং তার উপর ভয়াবহ তাপদাহে রায়পুরের মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে গেছে৷ এ আজাব থেকে মুক্তি চায় এখানকার মানুষ৷’’
নাবিলা আহমেদ সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে লিখেছেন, ‘‘সবাই একটু সচেতন থাকুন, মে মাসের ২২ থেকে ২৮ তারিখ পর্যন্ত৷ যতটা সম্ভব বেশি করে পানি পান করুন এবং সূর্যের আলো থেকে দূরে থাকুন, কারণ, এই তাপদাহে হিট স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা বেশি৷’’
কামরুল সন্দীপ মজা করে লিখেছেন, ‘‘শীতকালে অনেকে গরম জামা কাপড় দান করে কিন্তু গরম কালে কেউ ‘এসি’ দান করে না কেন?’’
সংকলন: অমৃতা পারভেজ
সম্পাদনা: আশীষ চক্রবর্ত্তী
প্রিয় পাঠক, আপনি কিছু বলতে চাইলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে...