গান শুনলে পকেট উদার হয়ে যেতে পারে
২৯ ডিসেম্বর ২০২০চলচ্চিত্রের ইতিহাসে কিছু সংগীত স্মরণীয় হয়ে আছে৷ সংগীতই চিত্রনাট্যে প্রায় অসহনীয় সাসপেন্স বা উত্তেজনার অনুভূতি এনে দেয়৷ সংগীত মনোবিজ্ঞানী হিসেবে প্রো. গ্যুন্টার রোটার বলেন, ‘‘সংগীত যে শরীরের ৫০টি বিভিন্ন প্যারামিটার বা স্থিতিমাপ পরিবর্তন করতে পারে, সেটা পরিমাপ করা সম্ভব৷ সংগীত শোনার সময়ে মস্তিষ্কের তরঙ্গ, হৃদস্পন্দন, এমনকি কয়েকটি হরমোনও বদলে যায়৷’’
সংগীত কীভাবে ও কেন আমাদের প্রভাবিত করে এবং আমাদের অনুভূতির সঙ্গে জুড়ে যায়, মিউজিক সাইকোলজিস্ট হিসেবে গ্যুন্টার রোটার তা নিয়ে গবেষণা করছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘ভাষার সুরই সম্ভবত সংগীতের উৎস৷ ভাষার মধ্যে আবেগ থেকে মানুষ কিছুটা বার করে সংগীতের মধ্যে চালিত করেছে৷ আমরা সংগীতের মাধ্যমে মানুষের মনমেজাজ ও অবস্থা বদলে দিতে পারি৷ অন্তত কাগজেকলমে এমনটাই দাবি করা যায়৷’’
হোটেল-রেস্তোরাঁয় বেশিরভাগ সময়ে সংগীত চালু থাকে৷ আমরা কী খাচ্ছি, কত পরিমাণ খাচ্ছি এবং কত অর্থ ব্যয় করতে চাই, সংগীত সে সবের উপর প্রভাব ফেলে৷ যেমন ব্রিটেনের এক গবেষণা অনুযায়ী ক্লাসিকাল বা ধ্রুপদী সংগীত শুনলে অতিথিরা খাবারের জন্য দশ শতাংশ বেশি দাম দিতে প্রস্তুত থাকেন৷ এমনকি এমন সংগীতের অনুরাগী না হলেও মন উদার হয়ে উঠতে পারে৷ প্রো. রোটার অবশ্য মনে করেন, ‘‘ক্লাসিকাল সংগীত আমাদের পছন্দ না হলেও সেই ধারা অনেক বেশি অর্থবহ ও খানদানি মনে হয়৷ সেই সংগীত শোনার সময় আমরা আশেপাশের পরিবেশের অনেক বিষয়ের মধ্যেও সেই বৈশিষ্ট্য খুঁজে পাই৷’’
সাংগীতিক প্রভাব সত্ত্বেও সেই সাফল্যের কিছু সীমা অবশ্যই রয়েছে৷ প্রো. গ্যুন্টার রোটার বলেন, ‘‘রেস্তোরাঁয় বসে কোনো গান শুনলে যে প্রভাব দেখা যায়, তার ফলে কিন্তু খাবারের মান সম্পর্কে অনুভূতি মোটেই ঢাকা পড়ে না৷ আমার মতে, সংগীতের প্রভাব এতদূর যেতে পারে না৷’’
আমাদের পছন্দের সংগীত মস্তিষ্কের মধ্যে আনন্দের অনুভূতি জাগিয়ে তোলে৷ সংগীত যখন তথাকথিত ‘লিম্বিক সিস্টেম'-এ পৌঁছে যায়, তখন ডোপামিন নামের আনন্দের হরমোনের নিঃসরণ ঘটে৷ এর ফলে শুধু মনে আনন্দ আসে না, শরীরও অনেক শিথিল, কর্মক্ষম ও সক্রিয় হয়ে ওঠে৷ ফলে আমাদের কর্মক্ষমতার উপরও তার প্রভাব পড়ে৷
রেস্তোরাঁ হোক অথবা কেনাকাটা, সব ক্ষেত্রেই সেটা দেখা যায়৷ ক্রেতাদের স্বাচ্ছন্দ্য জরুরি, কারণ একমাত্র তখনই তারা বেশি সময় কাটাবে এবং আরও কেনাকাটা করবে৷ অন্তত কাগজেকলমে সেটাই আশা করা হয়৷
কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কেনাকাটার সময়ে সংগীতের প্রভাবের বিষয়টি কিন্তু বেশ জটিল৷ প্রো. রোটার বলেন, ‘‘যেমন কোনো বহুতল বিপণীর সবচেয়ে নীচের তলায় কোনো জিনসের দোকানে সেটা কাজে লাগতে পারে৷ কোনো ডিজে সংগীত পরিবেশন করতে পারে৷ ক্রেতাদের গড় বয়সও মোটামুটি একরকম৷ তারা অবসর সময়ে কোন গান শোনে, আমাদের তা ভালো জানা আছে৷ সেই গান বাজালে কিছু সাফল্য পাওয়া যেতে পারে৷ এমন আশা থাকলেও মাত্রাতিরিক্ত প্রত্যাশা উচিত নয়৷’’
কারণ পরিকল্পনা করে সেই সাফল্য পাওয়া সম্ভব নয়৷ এমনকি সেরা কনসেপ্ট বা কৌশল সবসময়ে লক্ষ্য পূরণ করে না৷ সংগীত মনোবিজ্ঞানী হিসেবে প্রো. গ্যুন্টার রোটার বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘‘বিষয়টা হলো, বিজ্ঞান এখনো সংগীত পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারে নি৷ সংগীতের পেছনে এক মানুষ থাকে, যে নিজের অনুভূতি অনুযায়ী কাজ করে, সংগীত রচনা করে এবং সেটি কাজে লাগায়৷’’
অর্থাৎ সব কিছু ঠিকমতো খাপ খেলে তবেই সংগীতের পূর্ণ প্রভাব খাটানো সম্ভব৷
ইয়ো সিগলার/এসবি