সৌদি আরবে জনপ্রিয় হচ্ছে পপ, কিন্তু কেন?
২২ জুলাই ২০১৯দক্ষিণ কোরিয়ার পপ ব্যান্ড ‘সুপার জুনিওর' বেশ জনপ্রিয়৷ এখন পর্যন্ত নয়টি স্টুডিও অ্যালবাম প্রকাশ করেছে ব্যান্ডটি, অসংখ্য কনসার্টে হাজির হয়েছেন লাখ লাখ ফ্যান৷ তবে শুধু দক্ষিণ কোরিয়াতেই নয়, মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবেও ব্যান্ডটির প্রচুর ফ্যান রয়েছে৷ দেশটিতে প্রথম পারফর্ম করা কে-পপ ব্যান্ড সুপার জুনিওর৷ সফরের মাত্র ১০ দিন আগে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়া হয়, কিন্তু কয়েক মিনিটের মধ্যে সব টিকেট বিক্রি হয়ে যায়৷
কিং আবদুল্লাহ স্পোর্টস সিটি ভেন্যুতে সুপার জুনিওরকে উচ্ছ্বসিত তরুণ সৌদিরা বরণ করে নেন৷ মাত্র কয়েক বছর আগেও সৌদি আরবে এমন কনসার্ট ছিল অবিশ্বাস্য৷ কোরীয় পপতারকারাও এতো উচ্ছ্বাস দেখে মুগ্ধ হয়েছেন৷ স্টেজেও ‘আই লাভ সৌদি অ্যারাবিয়া' এবং ‘আসসালামোআলাইকুম' বলে সম্ভাষণ জানিয়েছেন৷
প্রথম কে-পপ ব্যান্ড হলেও অন্য নানা আন্তর্জাতিক ব্যান্ড দল ও গায়ক সৌদি আরবে সম্প্রতি পারফর্ম করেছেন৷ জানুয়ারিতে মারিয়া ক্যারে ও শন পল একসঙ্গে পারফর্ম করেন৷ সৌদি রাজধানী রিয়েদের পাশে দারিয়াতে প্রথম ফর্মুলা ই চ্যাম্পিয়নশিপে ব্ল্যাক আইড পিস, এনরিক ইগলেসিয়াস এবং ডেভিড গুয়েটা পারফর্ম করেছেন৷ সৌদি বাদশাহ সালমানকে নিয়ে গাওয়া ডেভিড গুয়েটার একটি গান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ ঝড় তোলে৷
ফরাসি এই ডিজের এমন কাজে টুইটারে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান বাহরাইনের মানবাধিকার কর্মী মারিয়াম আলখাওয়াজা৷ তাঁর সহকর্মীদের কারাগারে আটক করে রাখার বেশ কিছু রিপোর্টও প্রকাশ করেন তিনি৷ হইম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও সাবেক বিশ্ব দাবা চ্যাম্পিয়ন গ্যারি কাসপারভও এই ‘খুনি রাজত্বের' সঙ্গে ব্যবসা করায় শিল্পীদের সমালোচনা করেছেন৷
মানবাধিকার সংকট
সম্প্রতি মার্কিন ব়্যাপার নিকি মিনাজ মানবাধিকার কর্মীদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে সৌদি আরবে তার একটি পারফরম্যান্স বাতিল করেছেন৷ এক বিবৃতিতে তিনি জানান, ‘‘অনেক চিন্তাভাবনা করে আমি জেদ্দা ওয়ার্ল্ড ফেস্টে যোগ না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি৷ আমি সৌদি আরবের আমার ভক্তদের কাছে আমার পারফরম্যান্স নিয়ে হাজির হতে চেয়েছিলাম৷ কিন্তু বিভিন্ন ইস্যুতে জানার পর আমার মনে হয়েছে, নারী অধিকার, এলজিবিটিকিউ অধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে আমার দাঁড়ানো উচিত৷''
সৌদি আরবকে বিবেচনা করা হয় বিশ্বের অন্যতম দমনমূলক রাষ্ট্র হিসেবে৷ যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান দেশটিতে আধুনিকায়নের অনেক পদক্ষেপ নিলেও সৌদি আরবের রাজনৈতিক পরিস্থিতির উন্নয়নে তিনি কিছুই করেননি৷ ফলে প্রায়শই অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মতো মানবাধিকার সংস্থাগুলো প্রায়ই দেশটিকে নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে৷
শাসকদের রাজনৈতিক বিরোধীতা কিভাবে দমন করা হয় তা বিশ্ববাসীর সামনে স্পষ্ট হয়েছে সৌদি বংশোদ্ভূত সাংবাদিক জামাল খাশগজির হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে৷ যুবরাজকে এই হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী করে মার্কিন সিনেটে প্রস্তাব পাস হয়েছে৷ জার্মান সরকারও দেশটির ওপর নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছে৷
কথা বলার সুযোগ?
প্রশ্ন উঠেছে শিল্পীদেরে কী মানবাধিকার ইস্যুতে দেশটির শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া উচিত, নাকি সাংস্কৃতিক উদারিকীকরণের এ সুযোগ কাজে লাগানো উচিত?
জার্মানির সাপ্তাহিক সংবাদপত্র ডের স্পিগেলের বিদেশ প্রতিনিধি সুজানে কোয়েলবল মনে করেন, শিল্পীরা স্টেজে উপস্থিতির সুযোগ কাজে লাগিয়ে প্রকাশ্যে মানবাধিকার ইস্যু নিয়ে কথা বলতে পারেন৷ তিনি মনে করেন, সৌদি রাজতন্ত্র একটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এই ধরনের কনসার্টকে কাজে লাগাচ্ছে৷ জেদ্দায় আয়োজন করা প্রথম কনসার্টে উপস্থিত ছিলেন কোয়েলবল৷ যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে সেখানে বড় পর্দায় বেশি বেশি করে দেখানো হচ্ছিলো৷
কোয়েলবল বলছেন, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মিউজিশিয়ানকে পারফর্ম করার জন্য ডেকে জনগণের সামনে ‘নিষ্প্রাণ রাজতন্ত্র' থেকে ‘প্রশংসনীয় রাজতন্ত্রে' পরিণত হতে চায়৷ সৌদি রাজতন্ত্র নিজেদেরকে দেশটির মানুষের ‘জাতীয় পরিচয়' হিসেবে উপস্থাপন করতে চায়৷ এর ফলে তরুণ সৌদিরা বিন সালমানেরও ভক্তে পরিণত হবে, কারণ তিনিই প্রথম শাসক যে বিদেশি বিনোদনের অবাধ বিচরণ নিশ্চিত করেছেন৷ কিন্তু সৌদি আরবকে বিনোদনের কেন্দ্রে পরিণত করাকে কোয়েলবল দেখছেন দেশের মানবাধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, বিরোধীদের নিষ্ঠুর দমন, এই সব বিষয়কে আড়ালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হিসেবে৷তবে যে যাই বলুক, আপাতত এই কৌশল বেশ কাজেই লাগছে বলা যায়৷ অক্টোবরে দক্ষিণ কোরিয়ার আরেক জনপ্রিয় ব্যান্ড দল সৌদি আরবে পারফর্ম করার ঘোষণা দিয়েছে৷
নেরমিন ইসমাইল/এডিকে