ঘরে-বাইরে প্রবল চাপের মুখে শলৎস
১৫ এপ্রিল ২০২২জার্মানির গত সাধারণ নির্বাচনের প্রচারে চ্যান্সেলর পদপ্রার্থী হিসেবে ওলাফ শলৎস ভোটারদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, স্পষ্ট নেতৃত্ব চাইলে তাকেই দেশ চালানোর দায়িত্ব দিতে হবে৷ অর্থাৎ, আঙ্গেলা ম্যার্কেলের দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছরের ক্ষমতাকালে অনেক ক্ষেত্রে দ্রুত ও স্পষ্ট অবস্থানের অভাব নিয়ে ভোটারদের মনে অভিযোগ থাকলে বার্লিনের ক্ষমতাকেন্দ্রে পরিবর্তনের ডাক দিয়েছিলেন তিনি৷
ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার হামলার পরিপ্রেক্ষিতে এবার চ্যান্সেলর শলৎসের স্পষ্ট ও জোরালো নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠছে৷ ইউক্রেন জার্মান সরকারের ‘নিষ্ক্রিয়’ ভূমিকার সমালোচনা করে চলেছে৷ জার্মান রাজনীতি জগত, এমনকি ক্ষমতাসীন জোট সরকারের শরিকদের মধ্যেও চাপা ও প্রকাশ্য ক্ষোভ ফুটে উঠছে৷ অথচ ইউক্রেন সংকটের শুরুতেই শলৎস দ্রুত বেশ কিছু সাহসি পদক্ষেপ নিয়ে সম্ভ্রম আদায় করেছিলেন৷ ‘নর্ড স্ট্রিম ২’ পাইপলাইন প্রকল্প স্থগিত রাখা, প্রতিরক্ষা খাতে বিশাল অংকের অর্থ বরাদ্দ করা, যুদ্ধক্ষেত্রে অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহের মতো সিদ্ধান্ত দেশে-বিদেশে বাহবা কুড়িয়েছিল৷
দীর্ঘ প্রায় ৫০ দিন ধরে রাশিয়ার আগ্রাসনের মুখে ইউক্রেনকে আরও ভারি ও আক্রমণাত্মক অস্ত্র সরবরাহ ও রাশিয়া থেকে জ্বালানি আমদানি বন্ধ বা উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কমিয়ে আনতে চাপের মুখে ওলাফ শলৎস আর তেমন সাহস দেখাতে পারছেন না বলে এবার অভিযোগ উঠছে৷ সরকারের শরিক সবুজ দলের নেতা আন্টন হোফরাইটার সম্প্রতি কিয়েভ সফর করে বলেছেন, তার মনে হচ্ছে শলৎস যে ইউরোপে জার্মানির ভাবমূর্তির প্রবল ক্ষতি করছেন, সে বিষয়ে তিনি আদৌ সচেতন নন৷ তাঁর মতে, দ্বিধা ঝেড়ে ফেলে অবশেষে শলৎসের নেতৃত্ব দেখানো উচিত৷
শলৎস নিজে অবশ্য এমন অভিযোগ মানতে নারাজ৷ বুধবার এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, তিনি অবশ্যই জোরালো নেতৃত্ব দিচ্ছেন৷ জার্মানি ইউক্রেনকে ট্যাংক ধ্বংস করার অস্ত্র, বিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রসহ অন্যান্য অস্ত্র সরবরাহ করছে৷ তবে ন্যাটো তথা জার্মানি যাতে যুদ্ধে জড়িয়ে না পড়ে, সেটা নিশ্চিত করা জরুরি বলে শলৎস মনে করেন৷ সরকার মহলেও তার অবস্থান নিয়ে সাফাই দেওয়া হচ্ছে৷ তিন দলের জোট সরকারকে ধরে রেখে শলৎস সাময়িক জনপ্রিয়তার বদলে দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীলতাকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন বলে শোনা যাচ্ছে৷ ভাইস চ্যান্সেলর ও অর্থনীতি বিষয়ক মন্ত্রী রোব্যার্ট হাবেক চ্যান্সেলরের দপ্তরের বিরুদ্ধে সমালোচনা উড়িয়ে দিয়ে বলেন, কোনো সরকার মিলেমিশে কাজ করে৷ এমন কঠিন সময়ে জার্মানিতে বিভাজন মোটেই কাম্য নয় বলে তিনি মন্তব্য করেন৷ তিনিও শলৎসের মতো গোটা পশ্চিমা জগতের যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছেন৷
রাশিয়া থেকে জ্বালানি আমদানির প্রশ্নে প্রবল চাপের মুখে জার্মানি শেষ পর্যন্ত নতি স্বীকার করবে কিনা, সে বিষয়ে জল্পনাকল্পনা চলছে৷ গ্যাসের ক্ষেত্রে নির্ভরতা এখনই দূর না হলেও পেট্রোলিয়াম আমদানি বন্ধ করে রাশিয়ার আয়ের একটা বড় উৎস বন্ধ করে জার্মানি মস্কোর উপর চাপ আরও বাড়াতে পারে বলে ইউক্রেন, অ্যামেরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের অনেক দেশ মনে করছে৷ জার্মানির প্রায় ২৫ শতাংশ পেট্রোলিয়াম ও ৪০ শতাংশ গ্যাস রাশিয়া থেকে আসে৷ সেই উৎস বন্ধ করে দিলে জার্মানির শিল্পজগতের অপূরণীয় ক্ষতি হতে পারে বলে সরকার মনে করছে৷
এসবি/এসিবি (রয়টার্স, ডিপিএ)