নানা বিকল্পের কথা ভাবা হচ্ছে
৪ ডিসেম্বর ২০১৩এরশাদকে ফেরাতে এখন সরকারের মূল ভরসা নির্বাচনকালীন সরকারে যোগ দেয়া জাতীয় পার্টির মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী এবং উপদেষ্টারা৷ তাঁদের বাগে রাখার চেষ্টা করছে সরকার৷ সরকারের লোকজন বাইরে নিরুদ্বিগ্ন ভাব দেখালেও ভিতরে ভিতরে কিছুটা হলেও তাঁরা হতোদ্যম হয়ে পড়েছেন৷ তবে তাঁদের আশা, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারে এখনো যেহেতু সপ্তাহ খানেক সময় আছে তাই শেষ পর্যন্ত হয়তো এরশাদকে নির্বাচনে ফিরিয়ে আনা যেতে পারে৷
এরশাদের মন্ত্রীরাও এরশাদের নতুন এই সিদ্ধান্তের কথা জানতেন না৷ তাঁরা পরবর্তী সিদ্ধান্তের জন্য রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন৷
উদ্ভূত পরিস্থিতির ব্যখ্যা দিয়ে সাবেক মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ডয়চে ভেলেকে বলেন নির্বাচনে আসন বণ্টন নিয়ে এরশাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের কিছু সমস্যা হয়েছে৷ এই সমস্যা কেটে যাবে বলে তিনি আশা করেন৷ তবে এরশাদ শেষ পর্যন্ত নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্তে অটল থাকলে সরকারের ওপর কিছুটা চাপ পড়লেও নির্বাচন যথাসময়েই হবে বলে জানান তিনি৷
কিন্তু অবরোধ এবং সহিংসতায় দেশ প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে৷ এই পরিস্থিতি শেষ পর্যন্ত অব্যাহত থাকলে নির্বাচনের পরিবেশ থাকবে কিনা, আর সেক্ষেত্রে সরকারের হাতে বিকল্প কি – এমন প্রশ্নের জবাবে সুরঞ্জিত বলেন, ‘‘পরিস্থিতি উন্নয়নের চেষ্টা হচ্ছে৷ সেটা না হলে জরুরি অবস্থা জারির বিকল্প আছে সরকারের হাতে৷ কিন্তু সেই পরিস্থিতি এখনো হয়নি৷'' তিনি মনে করেন সবকিছু সরকারের নিয়ন্ত্রণেই আছে৷
এদিকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অজ্ঞাত স্থান থেকে মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, চূড়ান্ত বিজয় না আসা পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে৷ তাই হরতাল, অবরোধ যে সহসাই থামছে না তা প্রায় নিশ্চিত৷
রাজনীতি বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ মনে করেন এরশাদ শেষ পর্যন্ত কি করেন তা এখনই বলা যাচ্ছে না৷ এজন্য মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে৷ তবে এরশাদ মঙ্গলবার নির্বাচন বর্জনের যে ঘোষণা দিয়েছেন তা সরকারকে চাপে ফেলেছে৷ তিনি মনে করেন এবার হয়তো আবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন এরশাদের জন্য কঠিন হতে পারে৷ তাই যদি হয় তবে সেটা হবে বিরোধী দলের জন্য সরকারকে বেকাদায় ফেলার বড় অস্ত্র৷ সেক্ষেত্রে বিরোধী দল আন্দোলনের পাশাপাশি নৈতিক অবস্থানের দিক দিয়েও এগিয়ে যাবে৷
এরপরও যদি সরকার অনঢ় থাকে তাহলে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে নির্বাচনের প্রশ্ন আসতে পারে৷ ঢাকায় এধরণের একটি কথা আলোচিত হচ্ছে বলে জানান অধ্যাপক ইমতিয়াজ৷ তবে তিনি মনে করেন হয়তো তার আগেই পরিস্থিতি পাল্টে যেতে পারে৷ কারণ সেপর্যন্ত সরকারও হয়তো যেতে চাইবে না৷
অধ্যাপক ইমতিয়াজ বলেন বুধবার ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং দু'দিনের সফরে ঢাকা আসছেন৷ এই সময়ে তাঁর ঢাকা সফর বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ তিনি মনে করেন ভারত তার ব্যবসা এবং বিনিয়োগের ক্ষতি করে কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতি আনুকূল্য দেখাবে না৷ সামনের সপ্তাহে জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব ফার্নান্দেজ তারনকো'র সফর অনেক হিসেব বদলে দিতে পারে বলে মনে করেন এই বিশ্লেষক৷