শিশু ধর্ষণের পর হত্যা, নিন্দার ঝড়
১ আগস্ট ২০১৭দৈনিক প্রথম আলোর প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, খাবারের প্রলোভন দেখিয়ে ঘরে ডেকে নিয়ে শিশু তানহাকে ধর্ষণের পর হত্যা করে গ্রেপ্তারকৃত শিপন৷ এরপর লাশটি তানহাদের বাড়ির শৌচাগারে ফেলে যায়৷
এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে নিন্দা ও ক্ষোভ জানিয়েছে অনেকেই৷ তারা শিশুটিকে ধর্ষণ ও হত্যার বিচার দাবি করেছেন৷ আইয়াজ মাবুদ নিজের মেয়ের বয়সি তানহার ধর্ষণ ও মৃত্যুর ঘটনায় আতঙ্কিত বোধ করছেন৷ ফেসবুক পাতায় তিনি লিখেছেন, ‘‘তানহা আমার মেয়ের চেয়ে কয়েক মাসের বড়৷ তানহা জানতো না – সে শুধু শিশু নয়, সে একটি মেয়ে৷ আর এই পৃথিবীর বিশাল একটি অংশ এখনো মেয়েদের মানুষ হিসেবে মেনে নিতে পারেনি৷ এখনো মেয়ে একটি ভোগ্যবস্তু, সেজন্য বয়স কোন বিবেচ্য নয়৷ পুরুষত্ব চরিতার্থ করার জন্য ‘ঘাতক' শিপনের মতো প্রয়োজনে তিন বছরের মেয়েটির যৌনাঙ্গে চিড়ে-ফেড়ে-কেটে পৌরুষত্বের রাজদণ্ডটি ঢুকিয়ে দেয়া হবে৷ সে জানতো না – তাকে চিৎকার করতেও দেবে না – সেজন্য গলা টিপে মেরে ফেলা হবে৷ তানহা আমার মেয়ের মতো, মেয়ের মতো বলছি কেন – আমার মেয়েই তো৷ এদেশে আমি কি আমার মেয়ের হত্যার বিচার পাব? এ দেশে আমার বাকি মেয়েদের নিরাপত্তা আছে তো? সবার সম্মিলিত প্রতিরোধে আসুন আপনার-আমার মেয়ের জন্য সুন্দর পৃথিবী গড়ে তুলি৷ যেখানে ‘তানহারা' প্রজাপতির মতো উড়ে বেড়াবে৷’’
দীপু মাহমুদ অঙ্গীকার করেছেন তানহা ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত আর গল্প উপন্যাস লিখবেন না৷ তিনি ফেসবুক পাতায় লিখেছেন, ‘‘নষ্টদের দখলে চলে গেছে এই দেশ৷ সেই নষ্টদের আমরা দেবতাজ্ঞানে পূজা করি৷ এই নষ্ট জীবন নিয়ে বেঁচে থাকার চাইতে ভাগাড়ে গিয়ে মুখ থুবড়ে মরে পড়ে থাকা ভালো৷''
এই ঘটনাটি নিয়ে জোরালো কোনো প্রতিবাদ বিক্ষোভ না হওয়ায় ক্ষোভ জানিয়েছেন মো. সম্রাট খান৷ তিনি লিখছেন, ‘‘কোথায় আমাদের দেশের রাজনীতিবিদরা? কোথায় নারী সংগঠনগুলো-সমাজপতিরা? কোথায় সুশীলসমাজ? কেউ তো প্রতিবাদ করলো না৷ এই হলো আমাদের সোনার বাংলা৷’’
নাজমুল বাদশাহ বগুড়ার ছাত্রী ধর্ষণের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে লিখেছেন, ‘‘বগুড়ার ছাত্রী ধর্ষণ ঘটনার আড়ালেই থেকে যাচ্ছে শিশু তানহা ধর্ষণ ও হত্যার মতো নিষ্ঠুর, অমানবিক ঘটনা৷ জাতি হিসেবে আমরা বড়ই আবেগী, বড়ই উৎসাহী৷'' তিনি প্রশ্ন তুলেছেন,‘‘ জানেন কি, কী ঘটেছিল চার বছরের নিষ্পাপ শিশু তানহার সঙ্গে?’’
মৃত্যুঞ্জয় মণ্ডল শিশু ধর্ষণের একটি পরিসংখ্যানের কথা উল্লেখ করেছেন৷ তিনি লিখেছেন, ‘‘কেবল গত জুলাই মাসে ৩২টি শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে৷ সর্বশেষ তিন বছরের শিশু তানহা ধর্ষণ ও হত্যার শিকার হলো গত পরশু৷’’ প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘‘কেন চুপ করে আছেন? আর কত? ধর্ষকদের কঠোর হস্তে দমন করুন৷’’
আনসার উদ্দীন তাঁর লেখায় বাংলাদেশের সমাজের অবক্ষয়ের কথা লিখেছেন৷ তিনি লিখেছেন, ‘‘দিন দিন এই সমাজ ধ্বংস আর নৈতিক অবক্ষয়ের দিকে ধাবিত হচ্ছে৷ গত ২/৩ দিন আগেও হিংস্র নরপশু কর্তৃক বগুড়া জেলায় একটি গরীব কিশোরী ছাত্রীকে অমানুষিক যৌন নির্যাতন করার পর ধর্ষিতার মাকে বেধড়ক লাঠিপেটা করে মাথা ন্যাড়া করে দেয় পাষণ্ড ধর্ষক তুফান৷ এই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই রাজধানীতে শিশু তানহার উপর হিংস্র যৌন নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করে লাশ বাথরুমে ফেলে রাখা হয়৷ এ সবের শেষ কোথায় বলতে পারেন কেউ?’’
এদিকে, বগুড়ায় ‘ধর্ষণের শিকার’ ঐ কিশোরী ও তার মায়ের মাথা ন্যাড়া করে দেওয়া ঘটনায় গ্রেপ্তার কাউন্সিলর রুমকি ও নরসুন্দরসহ সাতজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেওয়ার আদেশ দিয়েছেন আদালত৷
বগুড়া অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী বলেন, কাউন্সিলর মারজিয়া হাসান রুমকিকে চারদিনের এবং তুফানের স্ত্রী আশা, শ্বশুর জামিলূর রহমান রুনু, শাশুড়ী রুমি খাতুন, গাড়িচালক জিতু, নরসুন্দর জীবন রবিদাস ও যুবক মুন্নাকে দুই দিন করে রিমান্ডের আদেশ দিয়েছে আদালত৷
বগুড়ার এক কিশোরীকে ভালো কলেজে ভর্তির প্রলোভন দেখিয়ে ১৭ জুলাই ও পরে কয়েকবার ধর্ষণ করেন শহর শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক তুফান৷ এ কাজে তাকে সহায়তা করেন তার কয়েকজন সহযোগী৷
বিষয়টি জানতে পেরে তুফানের স্ত্রী আশা ও তার বড় বোন বগুড়া পৌরসভার সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মার্জিয়া হাসান রুমকিসহ ‘একদল সন্ত্রাসী’ শুক্রবার দুপুরে ঐ কিশোরী এবং তার মাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়৷ পরে তাদের মারধর করে নাপিত দিয়ে মা ও মেয়ের মাথা ন্যাড়া করে দেন৷ এ ঘটনার পর রোববার তুফানকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়৷
সংকলন: অমৃতা পারভেজ
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ
প্রিয় পাঠক, আপনি কিছু বলতে চাইলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে...
২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত এই ছবিঘরটি দেখুন..