জমজমাট অস্কার-এ ভারতের আধিপত্য
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০০৯প্রতি বছরের মত এবছরও এক জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানে অস্কার জয় করে নিলেন সেরা ছবি, পরিচালক, অভিনেতা, অভিনেত্রীরা৷
১৯২৯ যাত্রা শুরু হয় চলচ্চিত্রাঙ্গনে অস্কার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের৷ প্রথম দিকে খুব একটা গুরুত্ব দেয়া না হলেও আজ বিশ্বের সবচেয়ে খ্যাতনামা চলচ্চিত্র পুরস্কারে পরিণত হয়েছে এটি৷ অন্যান্য বছরের এবছরও চলচ্চিত্র জগতের ২৪টি বিভাগে দেয়া হল এই পুরস্কার৷ এর মধ্যে ১০টি প্রধান বিভাগ৷ যেমন সেরা ছবি, সেরা পরিচালনা, শ্রেষ্ঠ প্রধান অভিনেতা ও অভিনেত্রী, সহ অভিনেতা, অভিনেত্রী, সেরা চিত্রনাট্য, শ্রেষ্ঠ বিদেশী ছবি ইত্যাদি৷
বিশাল কোডাক থিয়েটার হলে জমজমাট এক পরিবেশে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন আমন্ত্রিত অতিথিরা, মনোনীত অভিনেতা অভিনেত্রী ও চিত্রনির্মাতারা৷ সারা বিশ্বের চলচ্চিত্রপ্রেমীদের উৎসাহ উদ্দীপনাও কম ছিল না অস্কার পুরস্কারকে ঘিরে৷ অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন অস্ট্রেলিয়ার খ্যাতনামা অভিনেতা হিউ জ্যাকম্যান৷ হাসি ঠাট্টা করে জমিয়ে রেখেছিলেন তিনি অনুষ্ঠানটি৷
সেরা ছবি, সেরা পরিচালনা, শ্রেষ্ঠ অভিনেতা, অভিনেত্রী এই সব মিলে ১৩টি বিভাগে মনোনয়ন পেয়ে এগিয়ে ছিল ডেভিড ফিঞ্চার এর ‘বেঞ্জামিন বাটন' ছবিটি৷ ৷ ১০টি বিভাগে মনোনয়ন পেয়েছিল ড্যানি বয়েল এর ‘স্লামডগ মিলিওনেয়ার'৷ কিন্তু গোল্ডেন গ্লোবের মত এবারও শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বীদের হারিয়ে বিশ্বের বিখ্যাত চলচ্চিত্র পুরস্কার অস্কার জিতে নিল ভারতীয় পটভূমিকায় নির্মিত ছবি ‘স্লামডগ মিলিওনেয়ার'৷ অস্কারটি গ্রহণ করলেন পরিচালক ড্যানি বয়েল৷ সেরা পরিচালনার জন্য আর একটি অস্কারও পেয়েছেন তিনি৷ সেরা ছবি, সেরা পরিচালনা, সেরা ক্যামেরা, সেরা চলচ্চিত্র-সংগীতসহ মোট ৮টি বিভাগে পুরস্কার পেয়েছে ‘স্লামডগ মিলিওনেয়ার'৷ মুম্বইয়ের বস্তিবাসী এক হত দরিদ্র তরুণের হৃদয়স্পর্শী কাহিনী নিয়ে নির্মিত এই ছবি৷৷ টেলিভিশনের এক গেম শোতে অংশ গ্রহণ করে তার ভাগ্য এক ঝটকায় বদলে যাওয়ার পথে৷ আর একটি প্রশ্নের উত্তর দিলেই স্বপ্নের রাস্তা খুলে যাবে৷ কিন্তু বাধা অনেক৷ অবশেষে অনেক ঘাত প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে সেই তরুণ৷ ছবিটি বাস্তবসম্মত করার জন্য ভারতের বস্তিতে অপেশাদার নতুন শিল্পীদের নিয়ে অনেক বাধা বিপত্তি পেরিয়ে সুটিং করা হয়েছে৷ দারিদ্র্য ও দুঃখ দুর্দশায় ভারাক্রান্ত , শোষিত ও বঞ্চিত এক সমাজের চিত্র ‘স্লামডগ মিলিওনেয়ার'৷ অস্কার পুরস্কার প্রাপ্তির মধ্য দিয়ে সার্থক হল নির্মাতাদের পরিশ্রম৷
সেরা অভিনয়ের জন্য পুরস্কার পেলেন কেট উইন্সলেট, ‘দ্য রিডার' ছবির জন্য৷ ৩৩ বছর বয়সী ব্রিটিশ অভিনেত্রী কেট উইন্সলেট ‘টাইটানিক' ছবিতে অভিনয় করে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছেন৷ সম্প্রতি জয় করেছেন ‘গোল্ডেন গ্লোব' চলচ্চিত্র পুরস্কার৷ অস্কার পুরস্কারের জন্য আগেও মনোনীত হয়েছেন বেশ কয়েকবার৷ পুরস্কারের ঘোষণায় আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বলেন কেট উইন্সলেট - ৮ বছর বয়সেই একটি শ্যাম্পুর বোতল নিয়ে অস্কার পুরস্কার পাওয়ার পর বক্তব্য দেয়ার চর্চা করেছিলেন তিনি৷ আজ তাঁর সেই আশা পূর্ণ হল৷
পুরুষদের মধ্যে সেরা অভিনয়ের জন্য অস্কার জিতে নিলেন শন পেন, ‘মিল্ক' ছবিতে অভিনয়ের জন্য৷ তিনিও আবেগময় কণ্ঠে ধন্যবাদ জানালেন সবাইকে৷ বিশেষ করে যারা তাঁকে সাহায্য করেছেন কৃতজ্ঞ চিত্তে স্মরণ করলেন তাঁদের৷ নিকট প্রতিদ্বন্দ্বী মিকি রুর্ক এর উদ্দেশ্যেও ছিল প্রশংসার বাণী৷
শ্রেষ্ঠ সহ অভিনেতা হিসাবে হিথ লেজারকে মরণোত্তর অস্কার দেয়া হল ‘দ্য ডার্ক নাইট' ছবির জন্য৷
শ্রেষ্ঠ বিদেশী ভাষার চলচ্চিত্র হিসাবে জাপানের ‘ডিপার্চারস' ছবিটি জিতে নিল অস্কার৷
জার্মানির ‘ডেয়ার বাডার মাইনহোফ কমপ্লেক্স' এর ভাগ্যে জুটল না অস্কার৷ ৭০ এর দশকে জার্মানিতে চরম বামপন্থী একটি দলের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নিয়ে নির্মিত ছবিটি৷ সমালোচকদের মতে এই ছবিতে খুব বেশি অ্যাকশন ও নৃশংসতা দেখানো হয়েছে৷
তবে শ্রেষ্ঠ স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবি হিসাবে জার্মানির ইয়খেন আলেক্সান্ডার ফ্রাইডাঙ্ক পরিচালিত ‘স্পিলসয়েগলান্ট' বা ‘টয়লান্ড' জয় করলো অস্কার৷ ছবিটির দৈর্ঘ্য মাত্র ১৪ মিনিট৷ ১৯৪২ সালের নাৎসি শাসিত জার্মানিতে এক পরিবারের মর্মস্পর্শী দৃশ্য ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ছবিতে৷ দেখানো হয়েছে কী ভাবে এক মা ছেলেকে বাঁচানোর জন্য বলতে বাধ্য হয়েছেন যে, তাঁদের ইহুদি প্রতিবেশীদের খেলনার দেশে নিয়ে যাওয়া হয়েছে৷
উল্লেখ করা যেতে পারে, ১৯৯৪ সাল থেকে আজ পর্যন্ত জার্মানির স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছায়াছবি তিনবার অস্কার জয় করেছে৷