জল ঘোলা করে খেল ক্রোয়েশিয়া
১ জুলাই ২০১৮রোববার যেন ঈশ্বর পরীক্ষা নিয়েছেন ফুটবলপ্রেমীদের৷ কি খেলোয়াড়, কি সমর্থক, শেষ সেকেন্ড পর্যন্ত উত্তেজনা! স্পেন-রাশিয়া ম্যাচের পর ক্রোয়েশিয়া-ডেনমার্কের প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ম্যাচও গড়ায় টাইব্রেকারে৷
পুরো ম্যাচে ছিল নাটকীয়তা৷ টাইব্রেকার আর বাদ যাবে কেন? নির্ধারিত সময়ে ১-১ গোলের ড্র ম্যাচকে টেনে নিয়ে যায় টাইব্রেকারে৷
ডেনমার্কের পক্ষে প্রথম শটটি নিতে আসেন তাদের সেরা তারকা এরিকসেন৷ কিন্তু প্রথম শটেই তিনি দলের কফিনে প্রথম পেরেকটি ঠুকে দেন৷
ক্রোয়েশিয়ার পক্ষে আসেন বাদেলস৷ সোজা মারেন শেমাইখেল বরাবর৷ পা দিয়ে ঠেকিয়ে দেন লেস্টার সিটি গোলরক্ষক৷ দুই দলেরই পরের দু’টি করে শট সফলতার মুখ দেখে৷ তার একটি ছিল মডরিচের৷ কিছুক্ষণ আগেই ম্যাচের অতিরিক্ত সময়ে ভুল করলেও এবার আর করেননি তিনি৷ তবে হোঁচট খান ডেনমার্কের শোনে৷ তার শটটি ফিরিয়ে দেন দুর্দান্ত সুবাসিচ৷ একইভাবে শেমাইখেলও ফেরান পিভারিচকে৷ এ যেন শেয়ানে শেয়ানে লড়াই৷
দলের পক্ষে পঞ্চম শটটি নিতে আসেন প্রথম মিনিটে গোল করা সেই ইয়োর্গেনসন৷ কিন্তু এবারো সুবাসিচ প্রমাণ করেন কেন তিনি সেরা৷ বাকি ছিল রাকিতিচের শট৷ বার্সেলোনার এই অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার সহজেই পরাস্ত করেন শেমাইখেলকে৷ পরিষ্কার হয় ক্রোয়েশিয়ার শেষ আটে যাবার পথ৷
এর আগে ম্যাচের প্রথম পাঁচ মিনিটে দুই দলের ঝুড়িতে একটি করে গোল তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস দিচ্ছিল শুরু থেকেই৷ যদিও ফুটবল বোদ্ধাদের প্রত্যাশার পাল্লা ভারি ছিল মডরিচ-রাকিতিচদের ক্রোয়েশিয়ার পক্ষেই৷ অন্যদিকে, টটেনহাম প্লেমেকার এরিকসেনকে ঘিরে সাজানো কৌশলে ড্যানিশরা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় যে থাকবে, তাতেও কোনো সন্দেহ ছিল না৷
কিন্তু নিঝনি নভগোরদ স্টেডিয়ামে হিসেব যেন বদলে গেল প্রথম মিনিটেই৷ ক্রোয়াটদের ডিফেন্সে লম্বা এক থ্রো-ইন জটলা তৈরি করলে ইয়োর্গেনসনের দুর্বল শটেই এগিয়ে যায় ডেনমার্ক৷ চার মিনিটের মাথায় ক্রোয়েশিয়াও শোধ দেয় সেই গোল৷ সেটিও খুব একটা পরিকল্পিত সাফল্য ছিল না৷
এরপর প্রথমার্ধে নয়টি চমৎকার সুযোগ তৈরি করে ক্রোয়েশিয়া, যার তিনটি থেকে গোল হলেও হতে পারত৷ কিন্তু স্কোরবোর্ডে কোনো পরিবর্তন আনতে পারেনি তারা৷ অন্যদিকে, পাঁচটি সুযোগ তৈরি করে ডেনমার্ক৷ দু’টি সুযোগ ক্রোয়াট গোলরক্ষক সুবাসিচের খাঁচার দিকে পরিষ্কার পথও তৈরি করে৷ কিন্তু সাফল্য তারাও পায়নি৷
এবারের বিশ্বকাপ মিশনে ক্রোয়েশিয়ার আগে করা আট গোলের ছয়টিই এসেছে দ্বিতীয়ার্ধে৷ তাই ক্রোয়াট সমর্থক শিবিরেও প্রত্যাশার পারদ তুঙ্গেই ছিল৷ কিন্তু পেরিসিচ, রাকিতিচ, মডরিচরা এবার ব্যর্থ হলেন৷ বরং প্রায়ই বিপজ্জনক হয়ে উঠছিলেন ড্যানিশরা৷ শেষ পর্যন্ত ১-১ সমতাতেই শেষ হয় নির্ধারিত ৯০ মিনিটের খেলা৷
অতিরিক্ত সময়ের শুরুতে আক্রমণের ধার বাড়ায় ডেনমার্ক৷ বেশ কিছুক্ষণ ক্রোয়েশিয়ার ডি-বক্সের আশেপাশেই বল ঘুরছিল৷ কিন্তু বিপদের কারণ হতে পারেনি৷ পাল্টা আক্রমণে গিয়েছেন ক্রোয়াটরাও৷ কিন্তু ড্যানিশ গোলরক্ষক শেমাইখেলের দৃঢ়তায় কাজের কাজ হয়নি৷
কিছুটা ঝিমিয়ে পড়া খেলা হঠাৎ করেই উত্তেজনা ছড়ায় ১১৪ মিনিটে৷ মডরিচ তাঁর শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ আবারো দেন দুর্দান্ত এক পাস দিয়ে৷ ক্রামারিচ সেই বলটি নিয়ে এগিয়ে যান৷ সামনে কেবল শেমাইখেল৷ কিন্তু পেছন থেকে ইয়োর্গেনসন ফাউল করলে ডি-বক্সের ভেতর পড়ে যান ক্রামারিচ৷ পেনাল্টি৷ ভাগ্য ভালো ইয়োর্গেনসেনের যে শুধু হলুদ কার্ডই দেখেছেন৷
কিন্তু শ্রেষ্ঠদেরও ভুল হয়৷ রোনাল্ডো মিস করেছেন৷ মেসি মিস করেছেন৷ মডরিচ কেন নয়?
রিয়াল মাদ্রিদ মিডফিল্ডার নিজেই স্পটকিক নিতে যান৷ কিন্তু তাঁর শট অতিক্রম করতে পারেনি শেমাইখেলকে৷ ঝাঁপিয়ে পড়ে বল জাপটে ধরেন ড্যানিশ গোলরক্ষক৷ শেষ পর্যন্ত খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে৷
আর সেখান থেকেই শেষ হাসি হাসেন ক্রোয়াটরা৷