সিরিয়া ইস্যুতে রাশিয়ার ভেটো
১৮ নভেম্বর ২০১৭সিরিয়ায় রাসায়নিক অস্ত্রের হামলার বিষয়ে জাতিসংঘের নেতৃত্বাধীন যৌথ তদন্ত পদ্ধতি বা জেআইএম-এর তদন্তের সময় বাড়াতে নিরাপত্তা পরিষদে উত্থাপিত প্রস্তাবে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দু'বার ভেটো দিয়েছে মস্কো৷ স্থানীয় সময় শুক্রবার নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে নিরাপত্তা পরিষদে এই ভেটো দেয় সিরিয়ার বন্ধুরাষ্ট্র বলে পরিচিত রাশিয়া৷
রাসায়নিক হামলা নিয়ে জাতিসংঘের তদন্তকে ত্রুটিপূর্ণ আখ্যা দিয়েছে তারা৷ সিরিয়ায় রাসায়নিক অস্ত্রের প্রয়োগ নিয়ে জাতিসংঘের যৌথ তদন্ত দলের কার্যক্রম শেষ হওয়ার সময়সীমা ছিল শুক্রবার মধ্যরাতে৷ এরপর কার্যক্রম আরো ৩০ দিন বাড়াতে খসড়া প্রস্তাবটি তুলেছিল জাপান৷ ১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদে উত্থাপিত প্রস্তাবের পক্ষে ভোট পড়ে ১২টি৷ বিপক্ষে ভোট দেয় রাশিয়া ও বলিভিয়া৷ তবে ভোটদানে বিরত ছিল চীন৷ নিরাপত্তা পরিষদে প্রস্তাবটি পাস হতে ১০ ভোটের পাশাপাশি স্থায়ী সদস্যদের কোনো ভেটো থাকা চলবে না৷
রাশিয়ার দাবি হলো জেআইএম যে পদ্ধতিতে কাজ করছে, সেই ধারা বদলাতে হবে৷ অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, জেআইএমকে স্বাধীনভাবে তদন্ত করতে দিতে হবে৷
ভোটাভুটির পর জাতিসংঘে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের দূত নিকি হেলি নিরাপত্তা পরিষদে বলেছেন, ‘‘এই ভেটো এটাই প্রমাণ করে যে জেআইএম-এর মেয়াদ বাড়ানোর জন্য নিরাপত্তা পরিষদের বাকি সদস্যরা যে চেষ্টা করছে সে ব্যাপারে রাশিয়ার বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই৷''
হোয়াইট হাউজের প্রেসসচিব সারাহ হাকাবি স্যান্ডার্স বলেছেন, ‘‘এই তদন্তের বিরোধিতা করে রাশিয়া একটা পরিষ্কার বার্তা দিয়েছে, আর সেটা হলো, রাসায়নিক অস্ত্রে কত মানুষ মারা গেলো তার কোনো মূল্য নেই তাদের কাছে৷''
অন্যদিকে, জাতিসংঘে নিযুক্ত রাশিয়ার দূত ভাসিলি নেবেনসিয়া বলেছেন, ‘‘এখানে তদন্তের চেয়ে মুখ্য হলো রাজনৈতিক চাপ৷ সিরিয়ার রাসায়নিক অস্ত্র এখানে মুখ্য বিষয় নয়৷ এটাকে একটা নাট্যমঞ্চ বানানো হয়েছে এবং খুব খারাপ মানের নাটক হচ্ছে৷''
সিরিয়ায় রাসায়নিক গ্যাস হামলা চালানোর অভিযোগ করেছিল আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়৷ এ অভিযোগ তদন্তের জন্য জাতিসংঘের তদন্ত দল, আন্তর্জাতিক রাসায়নিক অস্ত্র পরিদর্শক এবং রাসায়নিক অস্ত্র নিরস্ত্রীকরণ সংস্থার (ওপিসিডাব্লিউ) এর সমন্বয়ে জেআইএম গঠন করা হয় ২০১৫ সালে৷ এতে সমর্থন দেয় জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ৷ ২০১৬ সালে এর মেয়াদ বাড়ানো হয় এক বছর৷
জেআইএম-এর তদন্তে বেরিয়ে এসেছে যে, সিরিয়ায় আসাদ সরকার ২০১৪ ও ২০১৫ সালে ক্লোরিন গ্যাস ব্যবহার করে খান সেইখুনের তিনটি গ্রামে হামলা চালিয়েছিল৷ এই হামলায় শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আরও ২০০ জন, যাঁরা আজও স্নায়ু সমস্যা নিয়ে বেঁচে আছেন৷ গত ৪ঠা এপ্রিল সিরিয়ার সরকারি বাহিনী নিষিদ্ধ রাসায়নিক ‘সারিন' ব্যবহার করে বলে অভিযোগ রয়েছে৷
সিরিয়া বরাবরই রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের কথা অস্বীকার করে আসছে৷ অন্যদিকে, রাশিয়া বলছে, জেআইএম ভুল তদন্ত পদ্ধতি ব্যবহার করে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে অভিযুক্ত করার চেষ্টা করছে৷
এপিবি/ডিজি (এপি, এএফপি, রয়টার্স)