জাতিসংঘে আবার অ্যামেরিকা-ইরান সংঘাত
১৪ আগস্ট ২০২০ইরানকে অস্ত্র বিক্রির উপর জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়াতে জোরালো তৎপরতা শুরু করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৷ আগামী ১৮ই অক্টোবর এই নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হচ্ছে৷ বৃহস্পতিবারই ট্রাম্প প্রশাসনের উদ্যোগে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে এই প্রশ্নে ভোটাভুটি শুরু হয়েছে৷ করোনা সংকটের কারণে পরিষদের বৈঠকে প্রতিনিধিরা সশরীরে উপস্থিত থাকতে না পারায় ভোটাভুটির জন্য ২৪ ঘণ্টা ধার্য করা হয়েছে৷ এই সময়ের মধ্যে ১৫টি সদস্য দেশকে এই প্রশ্নে অবস্থান নিতে হবে৷ নিউ ইয়র্ক সময়ে শুক্রবার সন্ধ্যায় ভোটাভুটির ফল জানা যাবে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে৷
নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য রাশিয়া ও চীন আগেই এই প্রস্তাব বানচাল করতে ভেটো প্রয়োগ করার হুমকি দিয়েছে৷ অন্য কিছু সদস্যও প্রস্তাবের বিরোধিতা অথবা ভোটদানে বিরত থাকতে পারে৷ কমপক্ষে ৯টি দেশ প্রস্তাবের পক্ষে সায় না দিলে ভেটো প্রয়োগেরও প্রয়োজন পড়বে না৷ ফলে বিষয়টিকে ঘিরে সংঘাতের আশঙ্কা বাড়ছে৷ তবে ট্রাম্প প্রশাসন ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানির কাছে ইরানকে অস্ত্র বিক্রির উপর নিষেধাজ্ঞা চালু রাখার প্রস্তাব চেয়েছে৷ বিকল্প কোনো প্রস্তাব পছন্দ হলে অনির্দিষ্টকালের জন্য নিষেধাজ্ঞার মেয়াদের দাবি থেকে সরে আসার ইঙ্গিত দিয়েছে ওয়াশিংটন৷ সে ক্ষেত্রে শুক্রবার অ্যামেরিকার প্রস্তাব বিফল হবার পর ইউরোপীয় তিন শক্তির উদ্যোগে সীমিত সময়ের জন্য নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাব পেশ করা হতে পারে৷
ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তির প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা বাড়তি গুরুত্ব পাচ্ছে৷ ২০১৫ সালে ভিয়েনায় এই চুক্তি স্বাক্ষরের সময় ইরানের আচরণের উপর নির্ভর করে অস্ত্র বিক্রির উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবার উদ্যোগ শুরু হয়েছিল৷ নিরাপত্তা পরিষদ এই চুক্তির প্রতি সমর্থন জানিয়ে নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ ২০২০ সালের অক্টোবর মাস পর্যন্ত সীমিত করতে একটি প্রস্তাব পাশ করেছিল৷ কিন্তু ডনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় এসে ২০১৮ সালে এই চুক্তি থেকে অ্যামেরিকাকে সরিয়ে নেবার পর থেকে নানা ক্ষেত্রে জটিলতা বাড়ছে৷
বাকি স্বাক্ষরকারী দেশ পরমাণু চুক্তি মেনে চলতে চাইলেও ওয়াশিংটন থেকে ক্রমাগত বাধার মুখে জটিলতা বাড়ছে৷ যেমন ট্রাম্প প্রশাসন বৃহস্পতিবারের প্রস্তাবে ইরানকে অস্ত্র বিক্রির উপর নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ অনির্দিষ্টকালের জন্য বাড়ানোর ডাক দিয়েছে৷ সন্ত্রাসবাদের মদতকারী দেশ হিসেবে ইরানকে অস্ত্র বিক্রির পক্ষে কোনো যুক্তি নেই বলে ওয়াশিংটন মনে করে৷ পরমাণু চুক্তির সঙ্গে বিষয়টির কোনো সম্পর্ক নেই বলে দাবি করেছেন জাতিসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূত কেলি ক্রাফট৷
নিরাপত্তা পরিষদ এই প্রস্তাব অনুমোদন না করলে ট্রাম্প প্রশাসন পরমাণু চুক্তির আওতায় ‘স্ন্যাপব্যাক' প্রক্রিয়া চালু করার হুমকি দিয়েছে৷ সেই প্রক্রিয়া অনুযায়ী ইরান চুক্তির গুরুত্বপূর্ণ শর্ত না মানলে জাতিসংঘের সব নিষেধাজ্ঞা আবার চালু করার বিধান রাখা হয়েছে৷ ওয়াশিংটন সত্যি এমন উদ্যোগ নিলে গোটা পরমাণু চুক্তির ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে পড়তে পারে৷ তবে সমালোচকদের মতে, অ্যামেরিকা এই চুক্তি থেকে সরে আসার পর সে দেশের ‘স্ন্যাপব্যাক' প্রক্রিয়া চালু করার অধিকারই আর নেই৷ ফলে এই মুহূর্তে ইরান ছাড়াও রাশিয়া, চীন, ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানি চুক্তির বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করতে পারে৷
ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রোহানি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ অস্ত্র বিক্রির ক্ষেত্রে তাঁর দেশের উপর নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিলে তার পরিণাম সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছেন৷ তবে ইরান সে ক্ষেত্রে ঠিক কোন পদক্ষেপ নেবে, সে বিষয়ে তিনি কিছু জানাননি৷
এসবি/এসিবি (ডিপিএ, এপি)