জাতীয় নির্বাচনে ছাত্র আন্দোলনের প্রভাব
১৮ ডিসেম্বর ২০১৮বিএনপি নেতা শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি দাবি করেছেন, রাষ্ট্রের মেরামত চেয়ে ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা আসলে সরকারের প্রতি ক্ষোভই বেশি প্রকাশ করেছেন৷ এদিকে বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ দাবি করেছেন, এই আন্দোলন পুরো তরুণ প্রজন্মের আন্দোলন নয় এবং এর সঙ্গে সরকারের কোনো বিরোধ নেই৷
যে দু'টি আন্দোলন বেশ আলোচিত হয়েছে, তার একটি কোটা সংস্কারের আন্দোলন৷ অন্যটি নিরাপদ সড়ক চেয়ে আন্দোলন৷ এই দু'টি আন্দোলনেই পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ হয়েছে৷ সরকারি দলের ছাত্র সংগঠনের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হওয়া এবং তাদের মারধরের অভিযোগ উঠেছে৷ শুধু তাই নয়, ছাত্রলীগ সাংবাদিকদের ওপরও হামলা করেছে বলে স্থানীয় গণমাধ্যম খবর প্রকাশ করেছে৷
সব আন্দোলন এক সূত্রে গাঁথা: এ্যানি
দু'টি আন্দোলন তরুণদের আগামী নির্বাচনে ভোটের সিদ্ধান্ত নিতে কতটা প্রভাবিত করবে? ডয়চে ভেলেকে টেলিফোনে দেয়া সাক্ষাৎকারে বিএনপির তরুণ নেতা এ্যানি বলেন, ‘‘আজকে কোটা আন্দোলন, নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, সরকারের বিরুদ্ধে আমাদের আন্দোলন সব একসূত্রে গাঁথা৷ আমরা ব্যালটের মাধ্যমে এই সরকারকে বিদায় করব৷''
এ্যানি বলেন, তরুণরা রাষ্ট্র মেরামতের যে দাবি করেছে, সেই দায়িত্ব নিতে বিএনপি প্রস্তুত৷
‘‘নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের দাবিতে তরুণরা সারা দেশব্যাপী আন্দোলন করেছে৷ এরা রাষ্ট্রের মেরামত চায়,'' ডয়চে ভেলেকে বলেন এ্যানি৷ ‘‘এই দায়িত্ব তরুণদের ওপর পড়েছে৷ আমরাও মাঠে ঐক্যবদ্ধ আছি৷ এই দায়িত্ব আমাদের ওপরও বর্তায়৷ আমরা তরুণ ও প্রবীণরা মিলে এই দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত৷''
ঐক্যফ্রন্টের নেতৃত্বে আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপির যে আন্দোলন, তাতে তরুণরা বিএনপির সঙ্গী হবে বলে মনে করেন এ্যানি৷
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সরকারের বিরোধ নেই: হামিদ
আওয়ামী লীগ নেতা নসরুল হামিদ মনে করেন না যে, এই আন্দোলন আগামী নির্বাচনের ফলাফলে কোনো প্রভাব ফেলবে৷ ‘‘নিরাপদ সড়ক তো আমরাও চাই৷ এখানে তো কোনো বিরোধ নেই,'' ডয়চে ভেলেকে টেলিফোনে বলেন এই তরুণ নেতা৷
একটা শহরের কিছু সংখ্যক তরুণের আন্দোলন দিয়ে সারা দেশের পরিসংখ্যান বিচার করা হলে হবে না বলে মনে করেন হামিদ৷
‘‘আমার এলাকা কেরানিগঞ্জে তো কোনো আন্দোলন হয়নি৷ গাজীপুরে তো কোনো আন্দোলন হয়নি৷ দেশের অনেক জায়গাতেই কোনো আন্দোলন হয়নি,'' বলেন হামিদ৷
বিএনপি-জামায়াত রাজনৈতিক বক্তব্য দিচ্ছে উল্লেখ করে হামিদ বলেন, ‘‘বিদ্যুৎ ও তথ্য প্রযুক্তিতে সরকারের প্রভূত উন্নয়নের ফলে এসব খাতে যতটা উন্নয়ন ও কাজের সুযোগ তৈরি হয়েছে, সেটিই বিবেচনা করবেন তরুণরা৷''
আন্দোলনের পরপর নির্বাচন হলে বড় প্রভাব পড়তো: জেবতিক
এদিকে ব্লগার ও লেখক আরিক জেবতিক মনে করেন, আন্দোলনগুলো যখন চলছিল, তখন বা তার ঠিক পরপর নির্বাচন হলে এর প্রভাব ভালোভাবেই পড়তো নির্বাচনের ফলাফলের ওপর৷ কিন্তু এখন অতটা পড়বে বলে মনে করছেন না তিনি৷
‘‘দেখুন, কোটা সংস্কার আন্দোলনে আন্দোলনকারীদের বিজয় অর্জিত হয়েছে বলে মনে করা যায়৷ তাই এটি নিয়ে তেমন কিছু বলার নেই,'' টেলিফোনে ডয়চে ভেলেকে বলেন তিনি৷
আরিফ জেবতিক বলেন, ‘‘নিরাপদ সড়কের আন্দোলনে যারা অংশ নিয়েছেন, তাদের বেশিরভাগই ভোটার নন৷ এর বাইরে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি অংশ নিপীড়িত হয়েছেন৷ তাঁদের কিছু ক্ষোভ থাকতে পারে৷''
যাঁদের কাছে ভবিষ্যতের আধুনিক বাংলাদেশ নির্মাণের পরিষ্কার প্রতিশ্রুতি দেখবেন, তরুণরা তাঁদেরকেই ভোট দেবেন বলে ধারণা তাঁর৷
‘‘দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা অনেক৷ আজকে কোটা সংস্কার আন্দোলন দেখেই বোঝা যায়, তাঁদের হতাশার জায়গা কোনটি৷ যাঁদের কাছে এসব বিষয়ের সমাধান পাওয়া যাবে, তরুণরা তাঁদের দিকেই ঝুঁকবে,'' বলেন আরিফ জেবতিক৷
২ আগস্টের ছবিঘরটি দেখুন: