জামায়াতের বিচার
৮ মার্চ ২০১৪তদন্ত কর্মকর্তা মতিউর রহমান ডয়চে ভেলেকে জানান, জামায়াতে ইসলামীকে একটি ‘ক্রিমিনাল সংগঠন' হিসেবে চিহ্নিত করেছেন তাঁরা৷ ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় সারা দেশে যে সব মানবতা বিরোধী অপরাধ সংগঠিত হয়েছে, তার সাথে জামায়াতের সম্পৃক্ততা রয়েছে৷ তাঁরা এই অপরাধ প্রমাণের জন্য বিভিন্ন ডকুমেন্ট, তথ্য ও দলটির অর্গানোগ্রামসহ অন্যান্য তথ্য সংগ্রহ করেছেন৷ তিনি আরও জানান, মুক্তিযুদ্ধকালীন এই দলটির যুদ্ধাপরাধ পরবর্তী সময়ে দলটির নানা কার্যক্রমও তদন্ত হচ্ছে৷
মতিউর রহমান বলেন, ‘‘তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে ১৯৭১ সালে জামায়াতে ইসলামী দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়৷ শুধু তাই নয়, বাংলাদেশে গণহত্যা, ধর্ষণ, লুটতরাজসহ আরো অনেক অপরাধ হয়েছে জামায়াতের সাংগঠনিক সিদ্ধান্তে৷ দলীয় সিদ্ধান্ত নিয়ে জামায়াত পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সহায়তা করে এবং এজন্য রাজাকার, আলবদর ও আল শামসসহ নানা বাহিনীও গঠন করে৷ আর এসব বাহিনীর নেতৃত্বে ও মাঠ পর্যায়ে জামায়াতের নেতা-কর্মীরা ছিলেন৷ এর বিনিময়ে জামায়াত আর্থিক সহায়তাও নিয়েছে৷'' তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, তাঁদের কাছে জামায়াতের দলীয় সিদ্ধান্তের তথ্যপ্রমাণ এবং কাগজপত্র আছে৷
ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর এ্যাডভোকেট রাণা দাসগুপ্ত ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘জামায়াত নেতাদের বিচারের একাধিক রায়ে জামায়াতকে ক্রিমিনাল অর্গানাইজেশন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে৷ বলা হয়েছে, জামায়াত পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগী শক্তি হিসেবে কাজ করেছে৷ আর ট্রাইব্যুনালের আইন সংশোধন করে ব্যক্তির পাশাপাশি সংগঠনের বিচারের বিধান করা হয়েছে৷ ট্রাইব্যুনাল আইনের ২০ ধারায় বলা হয়েছে, মানবতাবিরোধী অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড অথবা ট্রাইব্যুনাল যে রকম শাস্তি দেয়া যৌক্তিক মনে করেন৷'' তাহলে জামায়াতের বিচার হলে চেইন অব কমান্ডেরও বিচার হবে কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে প্রসিকিউটর বলেন, ‘‘না, এখানে শুধু সংগঠনের বিচার হবে৷ জামায়াতের জড়িত নেতাদের বিচারতো চলছেই৷ তাদের ব্যক্তিগত অপরাধের বিচার ব্যক্তিগতভাবে করার বিধান আছে আইনে৷ এখানে শুধু সংগঠনের বিচার হবে৷'' সংগঠনের শাস্তি কী হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘আইনে বিচারকদের ক্ষমতা দেয়া আছে৷ তাঁরা যা যৌক্তিক মনে করবেন, সেই শাস্তি দিতে পারবেন৷ কিন্তু সংগঠনকে তো আর মৃত্যুদণ্ড দেয়া যায়না৷ তাই বিচারে জামায়াত দোষী প্রমাণিত হলে দলটি নিষিদ্ধ হতে পারে৷ দলের সব ধরনের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত হতে পারে৷'
উল্লেখ্য, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি অনেক আগে থেকেই দল হিসেবে জামায়াতের বিচার দাবি করে আসছিল৷ আর গণজাজরণ মঞ্চও জামায়াতের বিচারের দাবি জানায়৷