জামায়াতকে বাদ দেয়া
১৫ জানুয়ারি ২০১৪বিএনপির নেতৃত্বে ১৮ দলের গত এক বছরের সরকার বিরোধী আন্দোলনে জামায়াতে ইসলামী মাঠের শক্তি হিসেবে কাজ করেছে৷ বিশেষ করে সহিংস আন্দোলনের জন্য বার বার জামায়াতকেই দায়ী করা হয়েছে৷ তাই বিদেশি কূটনীতিকরা সমঝোতা বা সংলাপের সঙ্গে সঙ্গে সহিংসতার বিরুদ্ধেও তাঁদের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন৷ ফলে বিএনপি জামায়াত নিয়ে কিছুটা বেকায়দায় আছে৷ বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া তাই বিদেশি সংবাদমাধ্যম এবং কূটনীতিকদের জানিয়েছেন যে, জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক অস্থায়ী৷ তাদের মধ্যে আদর্শিক কোনো মিল নেই৷ তবে বিএনপি জামায়াতকে ছাড়বে কিনা – সে ব্যাপারে কিছু স্পষ্ট করেননি বিএনপির চেয়ারপার্সন৷
অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপিকে জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করে সংলাপ এবং সমঝোতায় আসার কথা বলছেন বার বার৷ জামায়াতের সঙ্গ না ছাড়লে যে আলোচনা হবে না, তা তিনি স্পষ্ট করেই বুঝিয়ে দিয়েছেন৷ তবে জামায়াতকে সন্ত্রাসী সংগঠন বললেও জামায়তকে নিষিদ্ধ করতে আদালতের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী৷ তবে সরকার জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি৷
অধ্যাপক মুনতাসির মামুন ডয়চে ভেলেকে বলেন, এখানেই রাজনীতির বড় বৈপরীত্য৷ তিনি মনে করেন, আওয়ামী লীগ জামায়াত বিরোধী হলেও দলটি আন্তর্জাতিক চাপকে উপেক্ষা করতে পারছে না৷ অ্যামেরিকা, ইউরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাবশালী দেশ জামায়াতের পক্ষে৷ তাদের অনেকে যুদ্ধাপরাধের বিচার করলেও বাংলাদেশের বিচার নিয়ে স্বচ্ছতার প্রশ্ন তুলে তা বাধাগ্রস্ত করতে চায়৷ আবার জামায়াতের মতো যুদ্ধাপরাধীদের দল তারা নিষিদ্ধ করলেও জামায়াত বাংলাদেশে নিষিদ্ধ হোক, এটা হয়ত তারা চায় না৷ আওয়ামী লীগের পক্ষে সেই চাপ মোকাবেলা করা আপাতত সম্ভব নয়৷ আবার আওয়ামী লীগ মনে করে যে, জামায়াতকে নিষিদ্ধ না করে বিএনপি থেকে আলাদা করলে ভোটে সুবিধা পাওয়া যায়৷
অন্যদিকে বিএনপি জাময়াতকে ছাড়তে পারবেনা বলে মনে করেন তিনি৷ তাঁর মতে, বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের ঐতিহাসিক এবং আদর্শিক সম্পর্ক আছে৷ এছাড়া সাম্প্রতিক সময় বিএনপির ব্যাপক জামায়াত নির্ভরতা জামায়াতকেই শক্তিশালী করেছে৷ মুনতাসির মামুন মনে করেন, বিএনপি যদি জামায়াত থেকে প্রকাশ্যে আলদাও হয়ে যায় তাহলেও তাদের সম্পর্ক শেষ হবে না৷ তাই তিনি মনে করেন, জামায়াত নিয়ে যতই কথা হোক তারা ভালোভাবেই টিকে আছে৷ আর বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় জামায়াতকে বাদ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না৷
আদালতের রায়ে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হলেও তা ফিরে পেতে জামায়াত আবার আদালতে আবেদন করেছে৷ মুনতাসির মামুন বলেন, আদালতের দিকে তাকিয়ে না থেকে সরকার নির্বাহী আদেশেই ‘সন্ত্রাসী সংগঠন' হিসেবে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে পারে৷ সুশীল সমাজ সে জন্যই সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে৷ তবে তা সফল হবে কিনা তা নির্ভর করছে ভবিষ্যত রাজনীতির গতিপ্রকৃতির ওপর৷
এদিকে জামায়াতের কোনো নেতাকে পাওয়া না যাওয়ায় তাঁদের মতামত জানা যায়নি৷ তবে জামায়াতের ওয়েবসাইটে দেয়া বিৃবতিতে নেতারা সহিংসতা এবং সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের জন্য সরকারি দলের লোকজনকেই দায়ী করেছেন৷