1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জার্মানিতে গণিকাবৃত্তি একটি ‘শিল্প'

অরুণ শঙ্কর চৌধুরী
২৪ জানুয়ারি ২০১৭

অন্যান্য যে কোনো শিল্পের মতোই যৌনশিল্পের বিধিনিয়ম নির্দেশ করে দেয় সরকার; যৌনকর্মীদের শোষণ প্রতিরোধ ও গ্রাহকদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করে; যৌনব্যবসায় থেকে কর আদায় করে৷ তা সত্ত্বেও নানা সমস্যা আছে ও থাকবে৷

https://p.dw.com/p/2W5Oq
বার্লিনের এক যৌনকর্মী
ছবি: Getty Images/AFP/J. MacDougall

শুধু জার্মানি কেন, ইউরোপ জুড়ে গণিকাবৃত্তি ব্যাপক ও অনেক ক্ষেত্রেই দৃষ্টিগোচর, তা সে প্যারিসের বোয়া দ্য বোলোনিয়েতেই হোক আর আমস্টারডামের গ্রাখটেনের ধারেই হোক কিংবা হামবুর্গের রিপারবানেই হোক৷

অপরদিকে গণিকাবৃত্তির ভালোমন্দ নিয়ে নৈতিক বিতর্ক চিরকাল চলেছে ও চলবে৷ আসল প্রশ্ন হলো, সমাজ ও সরকার গণিকাবৃত্তির ক্ষেত্রে কি ব্যবস্থা নেবে৷ সুইডেনে ১৯৯৯ সালে আইন করা হয় যে, যৌনসেবা কেনাটা অপরাধ কিন্তু বেচাটা অপরাধ নয় – অর্থাৎ গণিকা স্বয়ং কোনো অপরাধ করছেন না, অপরাধ করছে তার খদ্দের! জার্মানির প্রখ্যাত নারীবাদি অ্যালিস শোয়ারৎসার জার্মানিতেও এ ধরনের একটি আইন চালু করতে চান৷ জার্মানিতে ২০০৯ সালে আর ২০১৪ সালে দু-দু'বার শোনা গেছে যে, গণিকার কাছ থেকে যৌনসেবা নেওয়ার জন্য পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বিধান করে আইন প্রণয়ন করা হবে – কিন্তু সে পরিকল্পনা আজও বাস্তবায়িত হয়নি৷ অপরদিকে জার্মানির সুপরিচিত গণিকা সংগঠন ‘হাইড্রা'-র মতো বহু গোষ্ঠী এ ধরনের কড়াকড়ির বিরুদ্ধে৷

মোট কথা, যৌনশিল্প বা যৌনকর্মীরা বহুদিন হলো ট্যাবু জোনের ঘেরাটোপ ছেড়ে বেরিয়ে এসেছেন৷ যৌনকর্মীরা একটি পরিষেবা দেন, গণিকালয়ের মালিকরা এক ধরনের শিল্পপতি, যৌনসেবার গ্রাহকরা অন্য যে কোনো পণ্যের মতো – শুধু গ্রাহকই৷ এখন দেখতে হবে যাতে এই ‘শিল্পে' শোষণ বা (মানুষ পাচারের মতো) মানবাধিকার ভঙ্গের ঘটনা না ঘটে; আইন-শৃঙ্খলা বা জনস্বাস্থ্যের কোনো হানি না হয়৷

ইতিহাস যা বলে

পশ্চিম জার্মানিতে গণিকাদের নাম লেখানো আর বাধ্যতামূলক স্বাস্থ্যজনিত পরীক্ষার নিয়ম গোড়া থেকেই ছিল৷ বাভেরিয়ায় শুধু এসটিডি বা সেক্সুয়ালি ট্রান্সমিটেড ডিজিজ, অর্থাৎ সংক্রামক যৌন রোগই নয়, ১৯৮৭ সাল থেকে নিয়মিত এইচআইভি টেস্ট বাধ্যতামূলক করা হয়৷ কিন্তু বহু যৌনকর্মী নাম রেজিস্ট্রি বা স্বাস্থ্য পরীক্ষা, দু'টোর কোনোটাই করাননি৷ তবে আশির দশকের শেষে এইডস ভীতির ফলে যৌন ব্যবসায়ে কিছুটা ভাটা পড়ে বৈকি – এমনকি হামবুর্গের প্রখ্যাত ‘ইরোস সেন্টার' বন্ধ হয়ে যায়৷

২০০১ সাল অবধি ‘গণিকাবৃত্তির প্রবর্ধন' জার্মানিতে অপরাধ হিসেবে গণ্য হতো৷ ফলে গণিকালয়ের মালিকরা সারাক্ষণ একটা আইনগত ঝুঁকির মুখে থাকতেন৷ অধিকাংশ গণিকালয় চালানো হতো বার বা পানশালা হিসেবে; সাথে থাকত ঘণ্টায় ভাড়ার কামরা৷ কিছু কিছু পৌর প্রশাসন গণিকাদের রাস্তায় খদ্দের খোঁজা রোধ করার জন্য বেশ কয়েক তলা উঁচু বাড়িও তৈরি করে দিয়েছিলেন, যেখানে গণিকারা বিনা দালালে ঘর ভাড়া করে গ্রাহক নিতে পারতেন৷ এই সব ‘গণিকাদের ডর্মিটরি' আজ ইরোস সেন্টারে পরিণত হয়েছে৷

গণিকাবৃত্তি আর ‘নৈতিক শৃঙ্খলা ভঙ্গ' নয়

২০০২ সালের গণিকাবৃত্তি আইনের আগে গণিকাবৃত্তিকে ‘নৈতিক শৃঙ্খলার বিরোধী' বলে গণ্য করা হতো, যার নানা আইনগত ফলশ্রুতি ছিল৷ নীতিবিগর্হিত চুক্তির কোনো বৈধতা নেই, কাজেই গণিকারা বকেয়া পারিশ্রমিকের জন্য মামলা করতে পারতেন না; তাদের ঘর বা ফ্ল্যাটভাড়ার চুক্তির কোনো কার্যকরিতা থাকত না; সেখানে গণিকাবৃত্তি ঘটলে, বার কিংবা হোটেলের লাইসেন্স বাতিল করা যেত৷

যৌনকর্মীদের বাধ্যতামূলক রেজিস্ট্রেশন বা যৌন রোগ পরীক্ষা তুলে দেওয়া হয় ২০০১ সালে৷ ২০০২ সালে গণিকাদের নিয়মমাফিক ওয়ার্ক কনট্র্যাক্ট বা কাজের চুক্তির ব্যবস্থা করা হয় – যদিও দেখা যায় যে, যৌনকর্মীরা নাম লিখিয়ে নথিভুক্ত হতে বিশেষ আগ্রহী নন৷ অপরদিকে ২০০০ থেকে ২০০৩ সালের মধ্যে ইউক্রেন ইত্যাদি দেশের জার্মান কনসুলেটগুলি তাদের ভিসার নিয়মাবলী আরো শিথিল করার ফলে মানুষ পাচার বাড়ে ও বহু যৌনকর্মী বিদেশ থেকে জার্মানিতে আসেন৷ জার্মানিতে মোট যৌনকর্মীর সংখ্যা চার লাখের কাছাকাছি, বলে ধরা হয়৷ তাদের মধ্যে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশই নাকি মধ্য ও পূর্ব ইউরোপ থেকে আসা বিদেশি৷

সুসংগঠিত জার্মানি

মানুষের যৌন প্রয়োজনকে স্বাভাবিক ও বুনিয়াদি প্রয়োজন হিসেবে মেনে নিলে – ও তার সঙ্গে আমলাতান্ত্রিক প্রশাসনিক প্রক্রিয়া যুক্ত হলে, ফলাফলটা মাঝেমধ্যে চমকপ্রদ হয়৷ যেমন বন শহরে একটি বিশেষ রাস্তায় পথ-গণিকাবৃত্তির জন্য পার্কিং মিটারের মতো মিটার লাগানো আছে৷ তথাকথিত ‘স্ট্রিটওয়াকার'-রা সেখানে কয়েন ফেলে সারারাতের জন্য টিকিট নিতে পারেন ও তাদের যৌনসেবার গ্রাহক সংগ্রহ করতে পারেন৷

অরুণ শঙ্কর চৌধুরী
অরুণ শঙ্কর চৌধুরী, ডয়চে ভেলেছবি: DW/P. Henriksen

অপরদিকে বিভিন্ন এজেন্সি বা সংস্থা যৌনসেবার প্রবীণ বা প্রতিবন্ধী গ্রাহকদের সঙ্গে যৌনকর্মীদের যোগাযোগ করিয়ে দেয়৷ অতীতে কোলোনের একটি সুবৃহৎ গণিকালয় ঘোষণা করেছিল যে, ৬৬ বছরের বেশি বয়সের প্রবীণ নাগরিকরা দুপুরের দিকে একটি বিশেষ ডিসকাউন্ট বা ছাড় পাবেন৷

বন্ধু, কেমন লাগলো অরুণ শঙ্কর চৌধুরীর ব্লগপোস্ট? লিখুন নীচের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান