জার্মানির রন্ধ্রে ঘৃণার বসতি
২১ ফেব্রুয়ারি ২০২০হানাও সবশেষ ঘটনা৷ কয়েক মাসের মধ্য়ে এ নিয়ে তৃতীয়বার জার্মানির বুকে ঘৃণার জয় হলো৷ গত জুনে রক্ষণশীল রাজনীতিবিদ ভাল্টার ল্যুবকে নিজের বাসায় খুন হন৷ শরণার্থীবান্ধব নীতির পক্ষে সোচ্চার ছিলেন তিনি৷ অক্টোবরে হালে শহরে এক সিনাগগে (ইহুদিদের উপাসনালয়) রক্তাক্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়৷
(সিনাগগের নিরাপত্তা কর্মীরা এক-দুইজন সশস্ত্র ব্যক্তিকে সিনাগগে প্রবেশে বাধা দিতে সক্ষম হয়েছেন বলে জানিয়েছিলেন স্থানীয় ইহুদি সম্প্রদায়ের নেতা মাক্স প্রিভোরোৎসকি৷ তিনি জানান, ঘটনার সময় সিনাগগে ৭০-৮০ জন প্রার্থনাকারী ছিলেন৷ ইহুদি ধর্মে বছরের সবচেয়ে পবিত্র দিন ‘ইয়ম কিপুর’ উপলক্ষ্যে তাঁরা সিনাগগে গিয়েছিলেন৷ তবে হামলায় দুজনের প্রাণহানি ঘটে৷)
এখন হানাওয়ে ১০ জনকে হত্যা করা হলো৷ হত্যাকারী দুটি শিশা বারে হামলা চালানোর আগে বর্ণবাদ ও যড়যন্ত্রতত্ত্বমূলক বক্তব্য দিয়ে একটি ভিডিও রেকর্ড করে৷ শেষ পর্যন্ত সে তার নিজের মাকেও হত্যা করে৷
হত্যাকারীদের উর্বর ক্ষেত্র জার্মানি
এই সব হত্যাকারীই জার্মান জাতি সম্পর্কে তাদের নিজেদের ধারণার সঙ্গে মেলে না, এমন সব বিষয়ে ঘৃণার চর্চা করতো৷ এরা কোনো চরম ডানপন্থি ব্যক্তি বা সংগঠনের সঙ্গে জড়িত কিনা তা বিবেচনার বিষয় নয়৷ বরং আমাদের এটা মেনে নিতে হবে যে, এমন ঘৃণার চর্চা জার্মানির রন্ধ্রে পৌঁছে গিয়েছে৷
রাজনীতিবিদ এবং সুশীল সমাজকে এটা স্বীকার করতে হবে যে, এই হত্যাকারীদের উর্বর ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে জার্মানি৷ আর তাদের বর্ণবাদী, বিদ্বেষমূলক এবং উগ্র ডানপন্থি নীতি সমাজের কিছু অংশে আবারও গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠছে৷
এই হত্যাকাণ্ডগুলো বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়৷ ঘটনাগুলো উদারপন্থি রাজনীতি, ইহুদি না মুসলিমদের বিরুদ্ধে ঘটছে, তার চেয়ে বড় কথা জার্মানির বর্তমান সামাজিক কাঠামোতে এরা আবার মাথাচাড়া দেয়ার সুযোগ পাচ্ছে৷ আমাদের জন্য এটা একটা সতর্কবার্তা৷ ধর্ম-বর্ণ-জাতি-লিঙ্গ নির্বিশেষে সংবিধান অনুসারে সকল নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে রাষ্ট্রকেই৷
অনলাইনেও ছড়াচ্ছে ঘৃণা
ইন্টারনেটে যে ঘৃণা ও পাগলামি ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে, তা বন্ধে কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে? তথ্যপ্রবাহের অবাধ স্বাধীনতার নামে যে-কোনো কিছু করার স্থান নয় ইন্টারনেট৷ হানাওয়ের ঘটনা প্রমাণ করে এসব ঘৃণা কী পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে৷
রাজনীতিবিদদের শুধু কথা নয়, কাজের মাধ্যমে দ্রুত এবং স্পষ্ট সিদ্ধান্ত নিতে হবে৷ নয়তো একসময় তা এমন এক অবস্থায় পৌঁছাবে, আমরা সাংবিধানিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় যা করেছি, ব্যক্তি স্বাধীনতা রক্ষায় যা করেছি, সবই পড়বে হুমকির মুখে৷ জার্মান চ্যান্সেলর ভালোই বলেছেন, ‘‘বর্ণবাদ বিষের মতো’’৷ কিন্তু এটা মনে করাই যথেষ্ট নয়৷ সকল অমানবিক মতাদর্শের চর্চা এবং অনলাইনে ছড়িয়ে দেয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে হবে৷ এর দায়িত্ব কেবল ফেসবুক বা টুইটারের ওপর ছেড়ে দিলে চলবে না৷
ইনেস পোল/এডিকে
গত অক্টোবরের ছবিঘরটি দেখুন...