জার্মানির সামরিক ব্যয় এখন নির্বাচনি প্রসঙ্গ
১০ আগস্ট ২০১৭জার্মানির অর্থনৈতিক শক্তি যেমন বেশি, তার সামরিক শক্তি ঠিক সেই পরিমাণে কম৷ জার্মান সেনাবাহিনী ‘বুন্ডেসভের'-এর সৈন্যসংখ্যা মাত্র ১,৭৮,০০০; সেনাবাহিনীর সাজসরঞ্জামের একাংশ মান্ধাতার আমলের৷ কাজেই উন্নততর অস্ত্রসজ্জা ও লোকবল বৃদ্ধির জন্য বছরের পর বছর ‘বুন্ডেসভের'-এর বরাদ্দ বাড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে৷
চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের মন্ত্রীসভার প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও তাঁর সিডিইউ দলের সদস্য উর্সুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন সামরিক বাজেটের ঘাটতি দূর করতে চান – সরকারের ছোট তরফ এসপিডি দলও তা সমর্থন করে৷ এসপিডির আপত্তি ফন ডেয়ার লাইয়েনের পরিকল্পনার আয়তন নিয়ে: প্রতিরক্ষামন্ত্রী ২০২৪ সালের মধ্যে প্রতিরক্ষা খাতে খরচ বাড়িয়ে দেশের জিডিপির দুই শতাংশ করতে চান৷
ন্যাটোর সদস্যদেশগুলি ২০১৪ সালে ওয়েলস-এ তাদের শীর্ষবৈঠকে ঠিক ঐ মাত্রাই স্থির করেছিল এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বারংবার ইউরোপীয়দের সামরিক খাতে জিডিপির দুই শতাংশ ব্যয়ের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন৷ কিন্তু এসপিডির কাছে এই পরিকল্পনা স্রেফ ‘পাগলামো' – ‘আমাদের দিয়ে ও কাজ করানো যাবে না,' বলছে এসপিডি৷
প্রতিরক্ষা বাজেট দ্বিগুণ করতে হবে
জার্মানি প্রতিবছর প্রতিরক্ষা খাতে ৩৭ বিলিয়ন ইউরো (৪৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার) ব্যয় করে থাকে, যা কিনা জার্মানির জিডিপির ১ দশমিক ২৬ শতাংশ৷ জিডিপির দুই শতাংশে পৌঁছাতে জার্মানিকে সামরিক খাতে বছরে ৭০ বিলিয়ন ইউরোর বেশি ব্যয় করতে হবে, যা কিনা বর্তমান বাজেটের প্রায় দ্বিগুণ৷
এসপিডি প্রতিরক্ষা বাজেট এই পরিমাণে বাড়াতে রাজি নয়৷ দলের চ্যান্সেলর-পদপ্রার্থী মার্টিন শুলৎস এই লক্ষ্যকে অবাস্তব ও ভ্রান্ত বলে অভিহিত করেছেন৷ এর ফলে জার্মানি ইউরোপের বৃহত্তম সামরিক শক্তিতে পরিণত হবে, যা কারো পক্ষেই কাম্য হতে পারে না – শুলৎস স্মরণ করিয়ে দেন৷
এসপিডি দলের রাজনীতিক ও জোট সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিগমার গাব্রিয়েলও বাডেন-ভ্যুর্টেমব্যার্গে একটি নির্বাচনি সমাবেশে ভাষণ দেবার সময় সামরিক খাতে জিডিপির দুই শতাংশ ব্যয়কে একটি ‘‘ভ্রান্ত ধারণা'' বলে অভিহিত করেছেন ও পরিবর্তে শিক্ষাক্ষেত্রে বিনিয়োগ বাড়ানোর কথা বলেছেন৷ কিছুদিন আগে গাব্রিয়েল রসিকতা করে বলেছিলেন যে, ৭০ বিলিয়ন ইউরো খরচা করতে জার্মানিকে কতোগুলো বিমানবাহী পোত তৈরি করতে হবে, তা তিনি জানেন না৷
এসপিডি জার্মান সেনাবাহিনীকে আরো ভালোভাবে সজ্জিত করার উদ্দেশ্য পরিত্যাগ করেছে, বলে ফন ডেয়ার লাইয়েন অভিযোগ করেছেন৷ এসপিডির ‘‘পুরোপুরি লক্ষ্যহীন নির্বাচনি প্রচার অভিযান'' জার্মান সেনাসদস্য ও জার্মানির মিত্রদেশগুলির আস্থার বিনাশ ঘটাচ্ছে, বলে ফন ডেয়ার লাইয়েন মন্তব্য করেছেন৷
ইউরোপে ন্যাটোর অধিকাংশ সদস্যদেশ প্রতিরক্ষা খাতে জিডিপির দুই শতাংশের অনেক কম ব্যয় করে থাকে৷ যুক্তরাজ্য ও পোল্যান্ড সহ মাত্র কয়েকটি দেশ দুই শতাংশের বেশি ব্যয় করে৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার জিডিপির ৩ দশমিক ৩ শতাংশ সামরিক খাতে ব্যয় করে থাকে৷
লক্ষ্য না দায়িত্ব?
জিডিপির দুই শতাংশ ব্যয় সংক্রান্ত ন্যাটো প্রস্তাবটি বাধ্যতামূলক কিনা, তা নিয়েও সিডিইউ-সিএসইউ ও এসপিডি দলগুলির মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে৷ এসপিডি-র কাছে যা একটি লক্ষ্য বা মান নির্দেশ, সিডিইউ দলের কাছে তা একটি দায়িত্ব৷
কাজেই নির্বাচনি প্রচার অভিযানে সিডিইউ-সিএসইউ ‘‘সামরিক খাতে ব্যয় বাড়িয়ে ধীরে ধীরে জিডিপির দুই শতাংশ'' করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে; অপরদিকে এসপিডি কোনো ‘‘নির্দিষ্ট লক্ষ্যের'' বিরুদ্ধে সাবধান করে দিচ্ছে ও প্রতিরক্ষা খাতে ‘‘পুরোপুরি অপ্রয়োজনীয় ও অবাস্তব'' ব্যয়বৃদ্ধির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে৷ পরিবর্তে এসপিডি সংকট প্রতিরোধ ও মানবিক সাহায্যে বিনিয়োগ করতে চায়৷
অন্য দলেরা কী চায়?
বাম আর সবুজরাও সামরিক খাতে ব্যয়বরাদ্দ বৃদ্ধির বিপক্ষে৷ সবুজরা কোনো নতুন অস্ত্র প্রতিযোগিতা কামনা করে না৷ অপরদিকে বামদল বস্তুত ন্যাটো ভেঙে দেওয়ার সপক্ষে – তারা চায় অস্ত্রসজ্জার পরিবর্তে নিরস্ত্রীকরণ৷
মুক্ত গণতন্ত্রীরা ২০১৩ সালের ভরাডুবির পর এবার জার্মান সংসদে ফেরার আশা করছে৷ তারা ন্যাটো ও ন্যাটো শীর্ষবৈঠকে গৃহীত প্রস্তাবসমূহের প্রতি পূর্ণ আনুগত্য পোষণ করে, বলে এফডিপি জানিয়েছে৷ এফডিপি ২০২৪ সাল অবধি ধাপে ধাপে প্রতিরক্ষা বাজেট বাড়ানোর সপক্ষে – যদিও তারা জিডিপির দুই শতাংশ লক্ষ্যের কোনো উল্লেখ করেনি৷
দক্ষিণপন্থি এএফডি দল ‘‘সামরিক বাহিনীর প্রস্তুতি পুনঃপ্রতিষ্ঠার'' ডাক দিয়েছে৷ তারা ন্যাটোর অভ্যন্তরে ইউরোপীয় প্রভাব বৃদ্ধি কামনা করলেও, সেজন্য তারা প্রতিরক্ষা খাতে আরো বেশি ব্যয় করতে রাজি কিনা, সে বিষয়ে এএফডি কিছু বলেনি৷
নিনা ভ্যার্কহয়জার/এসি