1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জার্মান নির্বাচনে ‘ডান' ও ‘বাম'

৩০ জুলাই ২০১৭

জার্মান রাজনীতিতে ‘ডান' আর ‘বাম' বলতে যে কী বোঝায়, তা আজ স্পষ্ট নয়৷ জার্মানির ছ'টি মূল রাজনৈতিক দলকে কি রাজনৈতিক মতাদর্শের ঐ চিরাচরিত ছকে ফেলা চলে? ডয়চে ভেলে সম্পাদক জেফারসন চেজ তা মনে করেন না৷

https://p.dw.com/p/2hJFl
ছবি: picture-alliance/U. Baumgarten

জার্মানিতে আগামী সেপ্টেম্বরের সংসদীয় নির্বাচনের পর যে ছ'টি রাজনৈতিক দল খুব সম্ভবত বুন্ডেসটাগে আসন গ্রহণ করবে, তারা হলো মধ্য-ডান সিডিইউ-সিএসইউ, মধ্য-বাম এসপিডি, দক্ষিণপন্থি এএফডি, বামদল, বামঘেঁষা সবুজ দল ও উদারপন্থি এফডিপি দল৷ কিন্তু এই সব দলকে কি আজ বাম-ডান ছকে ফেলা সম্ভব বা উচিত?

বিশেষজ্ঞদের মতে এই অনিশ্চয়তার পিছনে রয়েছে একদিকে জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের সামাজিক গণতন্ত্রী নীতির দিকে মোড়, অপরদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যত্র পপুলিস্ট জাতীয়তাবাদের মাথা চাড়া দেওয়া৷

জাতীয়তাবাদ ও ন্যাটো

প্রথাগতভাবে জার্মানিতে সিডিইউ-সিএসইউ চিরকালই ছিল সবচেয়ে জাতীয়তাবাদী দল ও ন্যাটোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের সবচেয়ে বড় প্রবক্তা৷ অন্যদিকে জার্মানিতে অভিবাসীদের স্বাগত জানাতে অথবা তাদের জার্মান সমাজে অন্তর্ভুক্তির ব্যাপারে রক্ষণশীলদের দ্বিধা ছিল সবচেয়ে বেশি৷ ম্যার্কেলই প্রথম তাদের সেই মনোভাব বদলে দেন৷ তাঁর নেতৃত্বে রক্ষণশীলরা যে শুধু উদ্বাস্তুদের প্রতি স্বাগতিক মনোভাব গ্রহণ করতে শিখেছে, শুধু তাই নয়, রক্ষণশীলরা অভিবাসনকে জার্মানির ভবিষ্যতের পক্ষে অতীব গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান হিসেবে গণ্য করতে শিখেছে – যদিও রক্ষণশীলদের একটি সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ আজও দ্বিবিধ নাগরিকত্বের বিরোধী৷

NATO berät über Lage der Türkei
তুরস্ক ইস্যু নিয়ে আলোচনা করছেন ন্যাটোর সদস্যরাছবি: Reuters/F. Lenoir

এর ফলে জাতীয়তাবাদী-পপুলিস্ট এএফডি সেই ফাঁকটা ভরে দেবার সুযোগ পেয়েছে: তারা যে শুধু উদ্বাস্তুদের আসতে দেওয়ার বিরোধী, শুধু তাই নয়, তারা সাধারণভাবে অভিবাসনের বিরোধী৷ ‘জার্মানি জার্মানদের জন্য' – এই হল তাদের মটো ও এএফডি নেতৃবর্গের মুখে প্রায়ই জাতিবাদী কথাবার্তা শোনা গেছে৷

অপরদিকে ট্রাম্প যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ন্যাটোর উপযোগিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেন, তখন এসপিডি ও সবুজ দল রক্ষণশীলদের মতো ন্যাটোর প্রতি সমর্থন প্রকাশ করে – যাকে ঠিক প্রথাগত বামপন্থি মনোভাব বলা চলে না৷ সাবেক পূর্ব জার্মানির কমিউনিস্ট শাসকদল এস.ই.ডি. থেকে উদ্ভূত বামদল চিরকালই ন্যাটো-বিরোধী ও রাশিয়ার প্রতি সহানুভূতিপূর্ণ মনোভাব পোষণ ও প্রদর্শন করে এসেছে৷ এসপিডি ও সবুজরা কিন্তু ভ্লাদিমির পুটিনের সোচ্চার সমালোচক৷

আপাতদৃষ্টিতে উগ্র দক্ষিণপন্থি এএফডি দল ন্যাটোকে শুধুমাত্র একটি প্রতিরক্ষা জোটের পর্যায়ে নামিয়ে আনতে চায় – অর্থাৎ তারা বিদেশে নিয়োজিত সব জার্মান সৈন্যদের ফিরিয়ে আনতে চায়৷ এবং ট্রাম্পের মতো তারাও পুটিনকে গুরুত্ব দিতে রাজি – তাদের নির্বাচনি প্রচারণায় রাশিয়াকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো জার্মানির ‘বন্ধু' করে তোলার ডাক দেওয়া হয়েছে৷ জরিপে দেখা যাচ্ছে এএফডি দল তথাকথিত ‘রুশি জার্মান' বা জার্মান বংশোদ্ভূত রুশি অভিবাসীদের কাছে ক্রমেই আরো বেশি আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে – যার অর্থ, শীতল যুদ্ধের আমলে জার্মান দলগুলির বিদেশনীতিতে যে স্পষ্ট ডান-বাম বিভাজন ছিল, তা ধীরে ধীরে মুছে যাচ্ছে৷

ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চুক্তি

ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রতি সদয় মনোভাবাপন্ন সিডিইউ-সিএসইউ বা এফডিপি দল যে ‘টিটিপ' বা ‘সেটা'-র মতো আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চুক্তিগুলির সপক্ষে মত রাখবে, তা প্রত্যাশা করা যেত৷ কিন্তু এই সব বাণিজ্য চুক্তির বিরোধীদের মধ্যে যে এক নিঃশ্বাসে এএফডি, বামদল, সবুজ দল ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের নাম করতে হচ্ছে, সেটা একটা আশ্চর্য বৈকি – যদিও প্রতিক্ষেত্রেই তাদের যুক্তি সম্পূর্ণ আলাদা৷ অপরদিকে  এই সব বাণিজ্য চুক্তি জার্মানির খেটে-খাওয়া মানুষদের স্বার্থের বিরোধী হতে পারে, তা জানা সত্ত্বেও বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিগমার গাব্রিয়েল ও অপরাপর এসিপিডি নেতা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সপক্ষে জোরালো বক্তব্য রেখেছেন৷

Deutschland Besuch Trudeau Proteste gegen CETA vor dem Bundeskanzleramt in Berlin
‘সেটা’-র মতো চুক্তিগুলো নিয়ে বাম ও ডান উভয়পক্ষই বিরোধিতা করেছেছবি: Reuters/H. Hanschke

অর্থনীতি ও অর্থ নীতি

এক্ষেত্রে ডান ও বামের মধ্যে প্রথাগত তফাৎটা দৃশ্যত আজও মুছে যায়নি৷ এসিপিডি, সবুজ দল ও বামদল চায় যে, সম্পদের ন্যায্য ও সমতাপূর্ণ বণ্টনে সরকার সক্রিয় ভূমিকা  গ্রহণ করবেন৷ সব মিলিয়ে জার্মান সরকারের কর নীতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ‘বামঘেঁষা' বলে গণ্য হবে৷

এএফডি-র অর্থনৈতিক মতাদর্শ কিছুটা জগাখিচুড়ি: দক্ষিণপন্থি দল হিসেবে তারা একদিকে সরকারি ভরতুকি, আয়কর সীমা বা বাজেট ভারসাম্যের মতো নীতির বিরোধী – অপরদিকে তারা সরকারি সম্পত্তি বেসরকারি মালিকানায় দেওয়ার বিরোধী৷ সেই সঙ্গে এএফডি পরিবারবর্গের জন্য অত্যন্ত উদার সামাজিক ভাতা দাবি করে আসছে৷

নিরাপত্তা ও ব্যক্তিস্বাধীনতা

Symbolbild Videoüberwachung
নজরদারি ইস্যুতেও দ্বিধাবিভক্ত বাম ও ডানপন্থিরাছবি: imago/S. Schellhorn

এএফডি-র আইন-শৃঙ্খলা নীতি দেখলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কথা মনে পড়তে পারে, কিন্তু তাদের সংক্ষিপ্ত নির্বাচনি ম্যানিফেস্টোয় ‘সন্ত্রাসবাদ' কথাটির উল্লেখ পর্যন্ত নেই৷ সিডিইউ-সিএসইউ সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধের জন্য পুলিশ ও গুপ্তচর বিভাগের কার্যকলাপ বাড়াতে চায় – বামদল ও সবুজদল যেখানে সরকারি নজরদারি বাড়ানোর বিরোধী৷ জোট সরকারের ছোট তরফ হিসেবে এসপিডি এই প্রসঙ্গে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ সমর্থন করে এসেছে – যদিও তাদের বাস্তব মনোভাব অতটা স্পষ্ট নয়৷

সমাজের ওপরমহল ও নীচের দিকের মানুষ

প্রথাগত ডান-বাম রাজনীতির ছক অনুযায়ী দক্ষিণপন্থি রাজনৈতিক দলগুলির ‘এলিট' বা সমাজের বাছাই ও অভিজাত মহলের মানুষদের স্বার্থের দিকে নজর রাখার কথা, যেখানে বামপন্থি দলগুলি ‘শোষিত ও বঞ্চিতদের' প্রবক্তা হিসেবে কাজ করবে৷ কিন্তু দক্ষিণপন্থি এএফডি আজ নিজেদের এই দুই শ্রেণির মাঝামাঝি তথাকথিত ‘সাধারণ মানুষদের' উকিল হিসেবে পেশ করছে৷ অর্থাৎ ‘শ্রেণিসংগ্রামে' প্রথাগত ডান ও বামের মধ্যে নিজেদের জায়গা করে নিয়েছে তৃতীয় এই পপুলিস্ট দল৷

এলিট বা সুবিধাভোগীদের বিরুদ্ধে বামদলকেও মাঝে মাঝে বিষোদগীরণ করতে শোনা যায়, যেমন এসপিডি দলের একাংশতে ও ধরনের সেন্টিমেন্ট অজ্ঞাত নয়৷ তবে সবুজরা সাধারণত ‘এলিট'-দের সরাসরি আক্রমণ করে না৷

পরিবেশ ও জ্বালানি শক্তি

বিষয়টি হলো সবুজ দলের পেটোয়া, কিন্তু এখানেও প্রথাগত ডান-বাম ছক অনেকদিন আগেই পালটে গেছে, বিশেষ করে যখন আঙ্গেলা ম্যার্কেল ২০১১ সালে ফুকুশিমা বিপর্যয়ের পর জার্মানিকে পরমাণু শক্তি মুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেন৷

এএফডি দল জার্মানির বাদবাকি পারমাণবিক চুল্লিগুলির কাজের মেয়াদ বাড়াতে চায় ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রতি সরকারি ভরতুকি বাতিল করতে চায়৷ এফডিপি দলও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনকে ভরতুকি দেবার বিরোধী৷ এসপিডি ও বামদল সরকারের বর্তমান জ্বালানি নীতিকে সমর্থন করে, যদিও বিষয়টি তাদের কাছে অগ্রাধিকার পাওয়ায় যোগ্য নয়৷

জেফারসন চেজ/এসি

আসন্ন জার্মান নির্বাচন নিয়ে আপনার আগ্রহ কতটা? কোন বিষয়ে আপনি জানতে চান? লিখুন নীচে৷