ট্যালেন্ট ক্যাম্পাস
২০ ফেব্রুয়ারি ২০১২বার্লিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রায় দশ বছর ধরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ট্যালেন্ট ক্যাম্পাস৷ এবছর এ কর্মসূচিতে ৯৯টি দেশ থেকে প্রায় সাড়ে তিনশ' উদীয়মান চলচ্চিত্রকার অংশ নেন৷ অংশগ্রহণকারীদের জমা দেওয়া ছবিগুলোর মধ্য থেকে সেরা বারোটি ছবি বাছাই করা হয় আলোচনা - পর্যালোচনা ও সম্পাদনার মাধ্যমে সেগুলোকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন করে তোলার জন্য৷ সেজন্য বার্লিনালেতে রাখা হয় এডিটিং ল্যাব বা সম্পাদনাগার নামে বিশেষ বিভাগ৷ সেখানে বিশ্লেষক ও সমালোচক হিসেবে হাজির থাকেন বিশ্বের শীর্ষ পর্যায়ের প্রখ্যাত পরিচালক, প্রযোজক ও সম্পাদকবৃন্দ৷ এবছরই প্রথমবারের মতো এ ট্যালেন্ট ক্যাম্পাসের এডিটিং ল্যাবের জন্য বাছাইকৃত নয়টি ছবির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল বাংলাদেশের কোন ছবি৷ ছবিটির নাম ‘শুনতে কি পাও?' নির্মাতা কামার আহমাদ সাইমন৷
বার্লিনালে চত্বরে কথা হলো পরিচালক সাইমনের সাথে৷ ডয়চে ভেলের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘উদীয়মান চলচ্চিত্র কর্মীদের উৎসাহিত করতেই এ ট্যালেন্ট ক্যাম্পাস৷ মূল আয়োজনের পাশাপাশি এটি চলতে থাকে৷ এখানে উপস্থিত বিশ্বের প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ও কলা-কুশলীদের সাথে আমাদের মতামত ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের সুযোগ হয়েছে৷ এছাড়া এডিটিং ল্যাবে আমাদের বাছাই করা ছবিগুলোর নানা দিক নিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পর্যালোচনা করার সুযোগ হয়েছে৷''
এডিটিং ল্যাবে'র জন্য মনোনীত নিজের ছবি সম্পর্কে তিনি বললেন, ‘‘আমার এ ছবিটা বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে জলোচ্ছ্বাসে জমিজমা হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়া গ্রামীণ মানুষের প্রতিচ্ছবি৷ ঐ গ্রামের একটি ছোট্ট শিশু ও তার মায়ের প্রায় দু'বছরের যে সংগ্রাম, জমি ফিরে পাওয়ার যে সংগ্রাম, সেই সংগ্রামের একটি ঘটনা চিত্র তুলে ধরা হয়েছে ছবিটিতে৷ ২০০৯ সালে বাংলাদেশে ‘আইলা' নামে যে জলোচ্ছ্বাসটা হয় সেসময় ঐ অঞ্চলের প্রায় দশ লক্ষ মানুষ তাদের ঘর-বাড়ি, জমি-জমা হারায়৷ তখন থেকে আমি ঐ অঞ্চলে ঘুরে ঘুরে আন্তর্জাতিক পরিভাষায় একটি সৃজনশীল প্রামাণ্যচিত্রের ধারায় ছবিটি তৈরির চেষ্টা করছি৷''
এছাড়া বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগত এবং তাঁর বেশ কিছু কাজের কথা তুলে ধরেন কামার আহমাদ সাইমন৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘বাংলাদেশে প্রচলিত অর্থে বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রের ধারায় আমি কাজ করছি না৷ বরং আর্ট হাউস ফিল্ম এর ধারায় আমার ছবিটা পড়ে৷ আমরা আসলে তরুণ যারা আছি তারা চেষ্টা করছি চলচ্চিত্র জগতের একটা নতুন ভাষা তৈরি করতে৷ এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতের জন্য একটি সম্ভাবনা তৈরির স্বপ্ন নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি৷ আর আমার ছবির কথা বলতে গেলে, এটিই আমার প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য ছবি৷ এর আগে একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবি আমি তৈরি করেছি৷ সেটির নাম ‘স্টোরিজ অফ চেঞ্জ' বা ‘দিন বদলের পালা'৷ ২০০৮ সালে আমি এটির কাজ সম্পন্ন করি৷ এছাড়া আমি তারেক মাসুদের সাথে তাঁর ‘কাগজের ফুল' ছবিটা নির্মাণে প্রধান সহকারী হিসেবে দু'বছর কাজ করেছি৷ এরপরেই আমি বর্তমান ছবিটির কাজ শুরু করি৷''
প্রতিবেদন: হোসাইন আব্দুল হাই
সম্পাদনা: রিয়াজুল ইসলাম