ডিগ্রিধারী থাকলেও চাকরির উপযুক্ত কম
৩ জানুয়ারি ২০২০ডয়চে ভেলের সঙ্গে আলাপচারিতায় বিডিজবসের প্রতিষ্ঠাতা ফাহিম মাশরুর বলেন, শিক্ষকেরা চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের তৈরী করতে পারছেন না৷ যার কারণেই শিক্ষিত বেকার বাড়ছে৷
বাংলাদেশে দিনকে দিন শিক্ষিত বেকার বাড়ছে৷ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করেও চাকরি মিলছে না৷ সংকুচিত হচ্ছে কর্মক্ষেত্র৷ এর কারণ কী? ডয়চে ভেলের সঙ্গে আলাপচারিতায় বিডিজবসের প্রতিষ্ঠাতা ফাহিম মাশরুর বলেন, শিক্ষকেরা চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের তৈরী করতে পারছেন না৷ যার কারণেই শিক্ষিত বেকার বাড়ছে৷
ডয়চে ভেলে : চাকরির বাজারের এখনকার ট্রেন্ডস কী?
ফাহিম মাশরুর : চাকরির বাজার গত ৩/৪ বছর বলতে গেলে একটু খারাপই৷ সুনির্দিষ্ট করে যদি বলি বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজ থেকে যারা গ্র্যাজুয়েশন করে বের হচ্ছে তাদের চাকরির ক্ষেত্র খুব কম তৈরী হচ্ছে৷ এখন প্রতি বছর দেড় থেকে দুই লাখ গ্র্যাজুয়েট বের হচ্ছে৷ তাদের ৭০ থেকে ৮০ ভাগই কোন চাকরি পাচ্ছে না৷
কোন ধরনের দক্ষতার চাকরি বেশি?
এখনও টেকনিক্যাল স্কিলের চাকরি বেশি৷ জেনারেল স্কিলে চাকরি আসলে কম৷ আইটি বা ফ্যাক্টরি ম্যানেজমেন্ট লেভেলে এখনও কিছু চাকরি হচ্ছে৷
চাকরির বাজারে কোন খাতে বেতন কাঠামো ভালো?
টেকনিক্যাল স্কিলের বেতম কাঠামো তুলনামূলক ভালো৷ বিবিএ, এমবিএ যারা করছেন তাদের বেতন বেড়েছে৷ সাধারণভাবে প্রাইভেট সেক্টরে বেতন কাঠামো কমে গেছে৷
বাংলাদেশে শিক্ষিত বেকারত্বের হার বেশি কেন?
অনেকগুলো কারণ আছে৷ এর মধ্যে প্রধান কারণ হল, আগে এত বেশি গ্র্যাজুয়েট বের হতো না৷ গত ৫/১০ বছরে সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহু ছাত্র বের হচ্ছে৷ চাকরির তুলনায় সাপ্লাই এখন বেড়ে গেছে৷ এখন এদের জন্যতো চাকরি তৈরী হচ্ছে না৷ এছাড়া গত ৩/৪ বছরে বেশ কিছু ইন্ডাস্ট্রি কিন্তু এ্যাফেকটেড৷ যেমন ধরেন তৈরি পোশাক খাত৷ ২০১৯ সালটা কিন্তু তৈরি পোশাকের জন্য খারাপ গেছে৷ এরপর ব্যাংকিং খাত একটা বড় বাজার ছিল৷ খেলাপি ঋণসহ নানা কারণে ব্যাংকে চাকরির জায়গা কমে গেছে৷ টেলিযোগাযোগ খাতে আগে চাকরির জায়গা ছিল৷ যেমন গ্রামীণফোনে আগে ৫/৭ হাজার মানুষ কাজ করতেন৷ এখন তারা আউটসোর্সের মাধ্যমে অনেক কিছু করাচ্ছে৷ ফলে সেখানে এখন চাকরি আছে ২/৩ হাজারের৷
কেন পড়াশোনার সাথে স্কিল গ্যাপ তৈরি হচ্ছে?
এটার অনেক বড় কারণ আছে৷ আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো রিয়েলাইজ করছে না যে, তাদের পড়াশোনা চাকরির বাজারের সঙ্গে যাচ্ছে না৷ তাদের মেইন ফোকাস হচ্ছে ডিগ্রি কাউকে ধরিয়ে দেওয়া৷ সে চাকরি পাচ্ছে কি পাচ্ছে না সেটা তারা দেখেন না৷ এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা পড়ান তারা ইন্ড্রাস্টির প্রয়োজন দেখেন না৷ ফলে তারা যে থিওরি পড়াচ্ছেন সেটা বাস্তবে গিয়ে কাজে লাগছে না৷ পাশ হচ্ছে, ডিগ্রিও পাচ্ছে কিন্তু এর মূল্য থাকছে না৷
বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়া শেষে যারা উদ্যোক্তা হতে চাচ্ছেন তারা কী ধরনের সমস্যায় পড়ছেন?
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে অনেকে উদ্যোক্তা হয়েছেন বা হচ্ছেন৷ এটা নতুন ট্রেন্ড৷ বিদেশে উদ্যোক্তাদের অর্থ সংস্থানের একটা ব্যবস্থা থাকে৷ কিন্তু এখানে সরকারি বা বেসরকারি খাত থেকে সেভাবে তারা অর্থ পান না৷ পাশাপাশি স্বল্প পরিসরে কেউ কিছু শুরু করলে সেটা থেকে রিটার্ন আসতে কয়েক বছর লেগে যায়৷ সেই পর্যন্ত এই উদ্যোক্তাদের টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে৷ যারা একটু বেশি টাকা নিয়ে শুরু করেন তারা হয়ত টিকে যাচ্ছেন৷
প্রায়ই শোনা যায়, দক্ষ কর্মীর অভাব? আসলে কতটা অভাব আছে?
দক্ষ কর্মীর অভাব আছে৷ অবশ্যই কিছু কিছু খাতে অভাব আছে৷ এখন আপনি যদি নির্দিষ্ট কোনো খাতে ৫/১০ জন চান তাহলে পাবেন৷ কিন্তু আপনি যদি ৫০০ বা এক হাজার দক্ষ কর্মী চান সেটা পাওয়াটা মুশকিল হবে৷ দক্ষতার একটা অভাব আসলে আছে৷ কারণ যারা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করছেন তারা বাস্তবানুগ দক্ষতা নিয়ে বের হচ্ছেন না৷ পাশাপাশি শিক্ষার মানও গত কয়েক বছরে নিম্নমুখী৷
ভকেশনালসহ বিভিন্ন কারিগরি প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা কেমন?
এটি বাড়ছে, আগে থেকে অনেক বাড়ছে৷ যদিও সেটা পর্যাপ্ত না, আরো দরকার৷ ভকেশনাল ট্রেইনিং নিয়ে যারা বের হচ্ছে তাদের চাকরি কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে বের হওয়া ছাত্রদের চেয়ে বেশি৷ কিন্তু আমাদের সমাজে মানসিকতা অন্য ধরনের৷ অভিভাবকেরা মনে করেন, ভকেশনাল ট্রেইনিং করে যে চাকরি পাবে সেটার সামাজিক মর্যাদা কম৷
তরুণেরা কী ধরনের চাকরি চায়?
তারা মূলত অফিস কেন্দ্রিক চাকরি চায়৷ যেখানে বসে কাজ করবে৷ কিন্তু মার্কেটিংয়ে চাকরির বাজার আছে৷ সেখানে তারা যেতে চায় না৷ অনেক চাকরি পেয়েও তারা করে না৷ কারখানার চাকরিও তারা করতে চায় না৷
দেশের বাইরে চাকরি প্রত্যাশীদের জন্য বিডিজবস একটি পোর্টাল চালু করেছে, সেটি কোন পর্যায়ে আছে?
২০১৯ সালেই এটা চালু করেছি৷ এটা প্রাথমিক পর্যায়ে আছে৷ আমরা চাচ্ছি যারা বিদেশে চাকরি করতে যেতে চান তারা যেন প্রতারণার শিকার না হন৷ ভবিষ্যতে এটা আরো ভালো হবে বলে আমরা প্রত্যাশা করি৷