‘ডোপ টেস্টে পজিটিভ হলেই কাউকে মাদকাসক্ত বলা যাবেনা’
১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১ডয়চে ভেলে: এখন তো মাদকাসক্ত চিহ্নিত করতে পুলিশে ডোপ টেস্ট হচ্ছে, প্রশাসনেও হবে৷ তাহলে মাদকের সংজ্ঞা কী? মাদক বলতে আমরা কোন জিনিসগুলোকে বুঝব?
ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ: প্রথমে বলে নিই যে ডোপ টেস্ট শব্দটি আমাদের ক্রীড়া পরিভাষার একটি অংশ৷ কোনো খেলোয়াড় যদি কোনো দ্রব্য ব্যবহার করে তাদের পারফরমেন্স বাড়ায় সেটা ডোপ টেস্টেধরা পড়ে৷ এখন এখানে যেটা নিয়ে কথা হচ্ছে তা হলো কোনো ব্যক্তি মাদক গ্রহণ করছেন কিনা তা পরীক্ষা করা৷ তবে কেউ আসক্ত কিনা তা ডোপ টেস্টের মাধ্যমে প্রমাণ করা যায়না৷ আসক্তি আছে কিনা সেটা ক্লিনিক্যালি দেখতে হয়৷ চিকিৎসকের মাধ্যমে ইন্টারভিউ করতে হয়, লক্ষণ বিচার করতে হয়৷
চাকরি ক্ষেত্রে বা অন্য ক্ষেত্রে আমাদের দেশে যেসব মাদকের পরীক্ষা করা হয় তা তিন ধরনের৷ স্টিমুলেট জাতীয় মাদক৷ যেমন: ইয়াবা, এম্পিটামিন৷ আছে ডিপ্রেশন মাদক৷ যেমন: অ্যালকহল, ঘুমের ওষুধ, গাঁজা৷ কিছু আছে নারকোটিকস বা চেতনা নাশক৷ যেমন: প্যাথেডিন, মরফিন৷ এছাড়া মাদকাসক্তরাও মিশ্র মাদক স্থানীয়ভাবে তৈরি করে৷
ডোপ টেস্টে সাধারণত ইউরিন পরীক্ষা করা হয়৷ এই পরীক্ষায় গাঁজা, ইয়াবা, মরফিন ও হেরোইনের অস্তিত্ব জানা যায়৷ ব্রেথ টেস্টের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক কেউ অ্যালকহল খেলে তা জানা যায়৷
এই পরীক্ষায় ফল পেতে কি নির্দিষ্ট কোনো সময় আছে?
কেউ গাঁজা সেবন করলে তার উপস্থিতি শরীরে ছয় মাস পর্যন্ত থাকতে পারে৷ ইউরিন টেস্টে সেটা ধরা পড়বে৷ ফেনসিডিল, হেরোইন, মরফিন এই জাতীয় মাদক কিন্তু ২৪- ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পরীক্ষা না করলে ধরা পড়েনা৷ আর ডোপ টেস্টে পজিটিভ হলে তিনি আসক্ত সেটা বলা যাবেনা৷ তিনি মাদক গ্রহণ করেছেন সেটা বলা যাবে৷ আবার নেগেটিভ হলেই নিশ্চিত হওয়া যাবেনা যে তিনি আগে মাদক গ্রহণ করেননি৷
এটা কীভাবে করা উচিত? গোয়েন্দাদের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে না চিকিৎসকদের পরামর্শে?
এটা অবশ্যই চিকিৎসকের ব্যবস্থাপনায় করতে হবে৷ কারণ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সংজ্ঞা অনুযায়ী মাদকাসক্তি একটা রোগ৷ এটা মস্তিস্কের ক্রনিক রোগ৷ এটা বার বার হতে পারে৷ তাই এটা চিকিৎসকদের ব্যবস্থাপনায়ই করতে হবে৷ গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের ভিত্তিতে করা হলে এটার অপব্যবহার হতে পারে, অতি ব্যবহার হতে পারে এবং কোনো কোনো সময় সত্যিকার মাদকাসক্তের ডোপ টেস্ট নেগেটিভ হয়ে যেতে পারে৷
ডোপ টেস্টের সিদ্ধান্তকে আপনি কীভাবে দেখেন?
এটা এক দিক দিয়ে ভালো উদ্যোগ৷ তরুণদের মধ্যে, চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে একটা সচেতনা তৈরি হবে৷ তাদের মধ্যে ভীতি তৈরি হবে যে মাদক গ্রহণ করলে চাকরি হবেনা৷ তবে এর কার্যকারিতা নিয়ে কিন্তু বিতর্ক থেকেই যায়৷ ডোপ টেস্ট দিয়েই কি সব মাদকাসক্তকে চিহ্নিত করা সম্ভব হবে? না, সম্ভব হবেনা৷ আবার ডোপ টেস্টে পজিটিভ হলেই কি সে মাদকাসক্ত? না, সে মাদক গ্রহণকারী৷ মাদকাসক্ত আর মাদক গ্রহণকারী এক নয়৷ আবার কেউ মাদকাসক্ত হলেই কি তাকে চাকরি থেকে বাদ দেয়া ঠিক হবে? এটা তো একটা রোগ৷ চিকিৎসা এবং পুনর্বাসন তার অধিকার৷
বাংলাদেশে অ্যালকোহল গ্রহণের লাইসেন্স পাওয়ার নিয়ম কী?
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট পরিমাণ অ্যালকোহল গ্রহণের অনুমোদন পাওয়া যায়৷ তবে এখানে নীতিমালা স্বচ্ছ নয়৷ আরো স্বচ্ছ করা উচিত৷
ডোপ টেস্ট এড়াতে কি আবার অ্যালকহল গ্রহণের লাইসেন্স নেয়ার হিড়িক পড়ে যাবে?
প্রথমত, ডোপ টেস্টে অ্যালকোহল দেখা হয়না৷ ডোপ টেস্টে দেখা হয় ইয়াবা, গাঁজা, হেরোইন, ফেনসিডিল প্রভৃতি৷ অ্যালকহল বোঝা যায় গ্রহণের চার-পাঁচ ঘণ্টার মধ্যে ব্রেথ টেস্ট করে৷ ফলে চাকরিপ্রার্থীদের অ্যালকোহল টেস্ট করা হয়না৷
আর ডোপ টেস্টের কোনো নীতিমালা নেই৷ ব্যক্তিকে সনাক্ত করার বিধান নেই৷ একজনের নামে আরেকজন ডোপ টেস্ট করিয়ে নিতে পারে৷ নেগেটিভ ব্যাক্তির রেজাল্ট পজিটিভ ব্যক্তি ব্যবহার করতে পারে৷ তাই আগে প্রয়োজন নীতিমালা৷ কোথায় ডোপ টেস্ট করা যাবে তাও নির্দিষ্ট করতে হবে৷
কোনো কোনো মাদক নিরাময় কেন্দ্রেই নাকি মাদকাসক্ত হয়? তারা নাকি মাদকের ব্যবসাও করে?
মাদক নিরাময় কেন্দ্র হলো চিকিৎসা কেন্দ্র৷ এই কেন্দ্রের সাথে চিকিৎসকদের জড়িত থাকতে হবে৷ কিন্তু আমরা দেখি বাংলাদেশের অধিকাংশ নিরাময় কেন্দ্রে কোনো চিকিৎসক নেই, কোনো নার্স নেই৷ সেগুলো পরিচালিত হচ্ছে সাবেক মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের দিয়ে৷ তাহলে ওইসব নিরাময় কেন্দ্রে মাদক ব্যবসার অভিযোগ অমূলক নয়৷