তাদের হাতে খুন-গুম কি কমবে?
১৬ জানুয়ারি ২০১৭এদের মধ্যে র্যাবের সদস্য মোট ১৭ জন, বাকিরা নূর হোসেনের সহযোগী৷ এই ১৭ জন র্যাব সদস্যের মধ্যে হত্যাকাণ্ডের সময় ২০১৪ সালে নারায়ণগঞ্জ র্যাবের সিও লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ মাহমুদ ছাড়াও, মেজর আরিফ হোসেন ও লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মাসুদ রানাও রয়েছেন৷ বকিরা র্যাবের নিম্ন পদস্থ কর্মকর্তা৷
তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের তৎকালীন কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা নজরুল ইসলামসহ সাতজনকে অপহরণ ও হত্যা করে৷ ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদী থেকে তাঁদের লাশ উদ্ধার করা হয়৷ নজরুল ইসলামের প্রতিপক্ষ আরেক কাউন্সিলর এবং আওয়ামী লীগে নেতা নূর হোসেন বিপূল পরিমাণ টাকার বিনিময়ে র্যাবকে দিয়ে সাতজনকে হত্যা করায়৷
রায় দেয়ার পর আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘এই অপরাধে যে নৃশংসতার পরিচয় দেওয়া হয়েছে তার প্রমাণ আদালত পেয়েছে৷ আমি মনে করি, সঠিক রায় হয়েছে৷ এই রায়ে জনগণ সন্তুষ্ট হবে৷ অপরাধী যেই হোক, তার শাস্তির বিষয়ে মানুষের মন থেকে ভীতি দূর হবে৷''
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, ‘‘যেই অপরাধ করুক না কেন, কেউ রক্ষা পাবে না – নারায়ণগঞ্জের সাত খুন মামলার রায়ে তা নিশ্চিত হয়েছে৷ দেশ আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হয়েছে বলেই, আইনের ফাঁকফোকর থাকলেও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও এই মামলা থেকে রেহায় পায়নি৷''
তবে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক নূর খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এই রায়ের মধ্য দিয়ে এটা প্রমাণিত হলো যে, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে ভাড়াটে খুনি আছে৷ এছাড়া নারায়ণগঞ্জের ঘটনা প্রথম নয়৷ এর আগে এবং পরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের হাতে আমরা হত্যা, গুম আর নির্যাতনের কয়েকশ' অভিযোগ পেয়েছি৷ সুতরাং এই রায়ের মধ্য দিয়ে হয়ত সাধারণ মানুষ প্রতিকার চাইতে আগের চেয়ে সাহসী হবে, তবে পরিস্থিতির অবসান ঘটবে বলে আমরা মনে হয় না৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘আমরা দীর্ঘদির ধরে একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশনের দাবি জানিয়ে আসছি৷ যারা স্বাধীনভাবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে প্রতিটি হত্যা, গুম ও নির্যাতনের ঘটনা তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে বা নেয়ার সুপারিশ করবে৷ তা না হলে পরিস্থিতির উন্নতি আশা করা যায় না৷''
নূর খানের কথায়, ‘‘এটা মনে রাখতে হবে যে, র্যাব নরায়ণগঞ্জের ঘটনায় শুরুতেই যদি কার্যকর ব্যবস্থা নিত তাহলে হয়ত এই সাতজনকে প্রাণ হারাতে হতো না৷ কারণ র্যাব সদস্যরা অপহরণের ১০ ঘণ্টা পর তাঁদের হত্যা করে৷''
ওদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও অপরাধ বিজ্ঞানের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘যারা নাগরিকদের জান-মাল রক্ষার দায়িত্বে, তারাই টাকার বিনিময়ে হত্যা করেছে৷ এর চেয়ে জঘন্য আর কী হতে পারে? এই রায়ের মধ্য দিয়ে নারায়ণগঞ্জের ঘটনার হয়ত ন্যায়বিচার পাওয়া গেল৷ কিন্তু আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ভিতরে যে চরম বিচ্যুতি দেখা দিয়েছে, তার অবসান এত সহজে হবে না৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘দুর্বৃত্তায়নের ক্ষেত্রে রাজনীতি, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এবং অপরাধীদের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় যে সম্পর্ক তা গভীর৷ এটার অবসান না হলে স্বস্তি আসবে না৷''
তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মনে করেন, ‘‘এ ঘটনার মধ্য দিয়ে র্যাব আরও শক্তভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে৷ যারা বিপদগামী হয়েছে তারা নিজের সিদ্ধাতেই বিপদগামী হয়েছে৷ প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এর দায় র্যাবের ওপর বর্তায় না৷''
আসক-এর প্রতিবেদন অনুসারে ২০১৩ সাল থেকে গত বছরের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ২৮৪ জন গুম হন৷ ২০১৬ সালের নভেম্বর পর্যন্ত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে যে ৯৩ জনকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, তার মধ্যে এখনও নিখোঁজ ৫৭ জন৷ লাশ হয়ে ফিরেছেন ১১ জন৷
প্রসঙ্গত, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা টাকার বিনিময়ে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে এই প্রথম মৃত্যুদণ্ডের মুখোমুখি হলো৷ শুধু তাই নয়, শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিবেচনাতেও বাংলাদেশে এই প্রথম এত বড়মাপের কর্মবর্তাদের বিরুদ্ধে মৃত্যদণ্ডের রায় হলো৷
বন্ধু, এ বিষয়ে আপনার কিছু বলার থাকলে লিখুন নীচের ঘরে৷