তাবলিগ জামাতের সভা থেকে ছড়ালো করোনা, মৃত সাত
৩১ মার্চ ২০২০দিল্লির নিজামুদ্দিন এলাকায় তাবলিগ-ই-জামাতের ধর্মীয় জমায়েতে অংশ নেওয়া মোট সাতজন করোনায় মারা গেলেন। এই জমায়েত থেকে ফিরে যাওয়ার পর কাশ্মীরে গিয়ে একজন আগেই মারা গিয়েছিলেন। সোমবার তেলেঙ্গানায় ছয় জনের মৃত্যু হয়েছে। জমায়েতে অংশ নেওয়া আরও ২৪ জনের করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েছে।মার্চের মাঝামাঝি এই জমায়েতে অংশ নিয়েছিলেন প্রায় দুই হাজার ধর্মপ্রচারক। তার মধ্যে মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সৌদি আরব, কিরঘিজস্তান থেকেও প্রতিনিধিরা এসেছিলেন। তাদের মধ্যে বেশ কিছু প্রচারক ২০ থেকে ২৫টি বাসে করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় চলে গিয়েছেন। এক হাজার ৫০০ জন নিজামুদ্দিনে তঘলিবের মারকাজ বা আশ্রয়শালাতে ছিলেন । আর তাঁদেরকে ঘিরে করোনার গোষ্ঠী সংক্রমণের আশঙ্কা প্রবল হয়েছে।
প্রবল উদ্বিগ্ন দিল্লি সরকার ও পুলিশ পুরো নিজামুদ্দিন এলাকা সিল করে দিয়েছে। বার বার ঘোষণা করা হচ্ছে, ওই জমায়েতে যাঁরা অংশ নিয়েছিলেন, তাঁরা যেন করোনার পরীক্ষা করান। এখনও পর্যন্ত তিনশ জনের পরীক্ষা হয়েছে। সোমবার রাত থেকে কেন্দ্রীয় সশস্ত্র পুলিশ কর্মীরা চিকিৎসক ও চিকিৎসাকর্মীদের নিয়ে নিজামুদ্দিনে গিয়েছেন। প্রাথমিক রিপোর্টে অনেকের শরীরেই করোনার লক্ষণ মিলেছে। ফলে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। নিজামুদ্দিনে পরীক্ষা করানোর জন্য দীর্ঘ লাইন পড়ে গিয়েছে। দিল্লিতে দিন কয়েক করোনার সংক্রমণের ঘটনা খুবই কম ছিল। নিজামুদ্দিনের ঘটনা সেই সংখ্যা অনেকটা বাড়িয়ে দিতে পারে বলে প্রশাসন মনে করছে।
সোমবার দিল্লিতে নতুন করে ২৫ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। নিজামুদ্দিন থেকে গোষ্ঠী সংক্রমণের সম্ভাবনা প্রবল। এখান থেকে ফিরে গিয়ে আন্দামানে নয় জন ও একজনের স্ত্রী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এই জমায়েতে যোগ দেওয়া ইন্দোনেশিয়ার দশজনের করোনা হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, মারকাজে যে এক হাজার ৫০০ লোক ছিলেন, তাঁদের বারবার চলে যেতে বলা হয়েছিল। কিন্তু লকডাউন হয়ে যাওয়ায় তাঁরা ফিরতে পারেননি। স্বাস্থ্য বিভাগের আশঙ্কা, ওই আশ্রয় শিবির থেকে গোটা দিল্লিতে করোনা ছড়িয়ে পড়তে পারে। করোনায় আক্রান্ত না জেনেই অনেকে এলাকায় ঘুরছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। দিল্লির স্বাস্থ্যমন্ত্রী সত্যেন্দ্র জৈন জানিয়েছেন, ''আশ্রয়শালা থেকে এক হাজার ৩৪ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭০০ জনকে কোয়ারান্টিনে রাখা হয়েছে। বাকি ৩৩৪ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ২৪ জন করোনায় আক্রান্ত। মারকাজে এখনও কয়েকশ লোক আছেন।''
সব চেয়ে বড় কথা, জমায়েতের পর ২০ থেকে ২৫টি বাস ভর্তি করে প্রচারকরা ভারতের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছেন। তাঁরা গিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশেছেন। তাঁদের মাধ্যমে গোটা দেশে কমিউনিটি বা গোষ্ঠী সংক্রমণের আশঙ্কা করছে প্রশাসন। এই প্রচারকরা মূলত গরিব অঞ্চলে প্রচারের কাজে যান। ফলে সেই সব জায়গায় করোনা ছড়ালে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া মুশকিল হবে।
ডয়চে ভেলের উর্দু বিভাগের সাংবাদিক জাভেদ আখতার জানিয়েছেন, ''তাবলিগ সারা বছর ধরে এই রকম জমায়েত চালায়। এরা পুরোপুরি অরাজনৈতিক এবং একশ শতাংশ ধর্মীয় সংগঠন। এরা কোরান পাঠ করা সহ ইসলামের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রচার করে। কেউ মাসে তিনদিন সময় দেন, কেউ বছরে চল্লিশ দিন অথবা চার মাস। যাঁরা আসেন, তাঁরা কয়েকদিন থাকেন। তারপর তাঁদের প্রচারের জন্য কোনও জায়গায় পাঠানো হয়। দশ-বারোজনের দল বানিয়ে পাঠানো হয়। তাঁরা নামাজ পড়ার কথা বলেন, দোয়ার উপকারিতার কথা বলেন। একেবারে সাধারণ মানুষের মাধ্যে গিয়ে তাঁরা কাজ করেন।''
হায়দরাবাদে যাঁরা মারা গিয়েছেন এবং আন্দামান সহ অন্যত্র যাঁরা আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁরা কাদের সঙ্গে মিশেছেন, তা খুঁজে বের করার চেষ্টা হচ্ছে। পুলিশ ও প্রশাসন বারবার ঘোষণা করছে, ওই জমায়েতে যে দুই হাজার লোক ছিলেন, তাঁরা যেন অবিলম্বে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান। পুলিশ ইতিমধ্যে জমায়েতের প্রধান উদ্যোক্তার বিরুদ্ধে এফআইআর করেছে।
পশ্চিমবঙ্গের প্রবীণ কংগ্রেস নেতা এবং বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন,''মক্কায় নামাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কলকাতা সহ ভারতের সব বড় মসজিদে নামাজ বন্ধ। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত মসজিদে নামাজ বন্ধ থাকা দরকার।'' কী ভাবে এই সময়ে ওই জমায়েত সম্ভব হল, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন মান্নান সাহেব।
জিএইচ/এসজি(পিটিআই, এএনআই)