তুরস্কে ট্যাবু ভেঙে দিচ্ছে নারীদের ব্যাঙ্গাত্মক ম্যাগাজিন
২৪ জুলাই ২০১১দিনের আলোতে রাস্তার মাঝখানে একজন পুরুষ একজন নারীকে ছুরিকাঘাত করছে৷ আর তা দেখে একদল পথিক চিৎকার করছে, ‘‘লোকটি মেয়েটিকে মেরে ফেললো'' ‘‘থামো!'' ‘‘পুলিশ ডাকো!'' মহিলাকে উদ্ধার করতে ছুটে যায় সবাই৷ এমন সময় ছুরি মারতে মারতে পুরুষটি চিৎকার করে বলে,‘‘ তুমি আমাকে তালাক দেবে না!'' সাথে সাথে মহিলাকে সাহায্যের ইচ্ছায় এগিয়ে আসা পথচারীদের দল থেমে যায়, বলে উঠে, ‘‘এটা পারিবারিক ব্যপার, আমাদের মাথা গলানোর বিষয় নয়৷ ''
তুরস্কে এইধরণের দৃশ্য একেবারেই নতুন নয়৷ এইধরণের দৃশ্য বায়ান ইয়ানির প্রচ্ছদ অলংকরণে থাকে৷ হাস্যরস, ব্যঙ্গের মাধ্যমে সমাজের বিভিন্ন দিকের সমালোচনা করে এভাবেই ট্যাবু ভাঙছে ম্যাগাজিনটি৷ গত মার্চ মাস থেকে প্রকাশিত হচ্ছে ম্যাগাজিনটি৷ ৩১ বছর বয়স্ক আঁকিয়ে এলিফ নূরসাদ৷ বিড়াল এবং নারীদেহ আঁকতে ভালবাসেন তিনি৷ এলিফ বলেন, ম্যাগাজিনটি অনেক বড় বড় পদক্ষেপ নিচ্ছে৷ তার মতে তুরস্কের অন্যান্য কমিক ম্যাগাজিন নারীকে যৌন আবেদনময়ী হিসেবে তুলে ধরে তাদের কাটতি বাড়াতে চেষ্টা করে৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা ম্যাগাজিনটি নিয়ে একসাথে নেমেছি, এটা যে এতো সফল হবে তা আমরাও ভাবিনি৷''
‘বায়ান ইয়ানি' এর অর্থ হচ্ছে, ‘মহিলার আসনের পাশের আসনটি'৷ এই নামটি তুরস্কের একটি রীতির কথা স্মরণ করেই রাখা হয়েছে৷ কোন দূরের যাত্রায় কোন মহিলা যদি একা ভ্রমণ করেন, তাহলে রীতি অনুযায়ী তিনি কোন পুরুষের পাশে বসেন না৷ প্রতি মাসে ম্যাগাজিনটির বাজেট ধরা হয়েছে, ৩০ হাজার ডলার৷ এখন প্রতি মাসে এটির কাটতি হচ্ছে ৫০ হাজার কপি৷ তুরস্কে পত্রিকার পাঠক সংখ্যা সাধারণত কম৷ সেই তুলনায় ম্যাগাজিনটির কাটতি অনেক বেশি৷
এলিফ নূরসাদ বলেন, একটি মহিলা ম্যাগাজিনের জন্যে কাজ করার ইচ্ছে ছিল তার৷ তবে তিনি বলেন, বায়ান ইয়ানি যে স্বাধীনতা ভোগ করে, তিনি নিজে কখনো সেই স্বাধীনতা ভোগ করেননি৷ যদিও ১৯৩৪ সাল থেকে তুরস্কের নারীদের ভোটাধিকার রয়েছে, কিন্তু রাজনীতিতে অংশ নেওয়া বা কোন সংস্থার সদস্য হবার হার তাদের মধ্যে কম৷ এদিকে মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, নারী ও বালিকাদের ওপরে পারিবারিক সহিংসতার ঘটনাগুলো মারাত্মকভাবে বাড়ছে৷
প্রতিবেদন: ফাহমিদা সুলতানা
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক