তৃণমূলের অনুপ্রবেশকারীদের তালিকা করেছে আওয়ামী লীগ
২৬ অক্টোবর ২০১৯বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে এখন দুর্নীতিবাজ ও অনুপ্রবেশকারীদের বিদায় করার প্রক্রিয়া চলছে৷ কাউন্সিলের মাধ্যমে যেসব নতুন কমিটি হবে সেখানে তাদের জায়গা হবেনা বলে শোনা যাচ্ছে৷ প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার এই মনোভাবে উজ্জীবিত আওয়ামী লীগের তৃনমূলের নেতা-কর্মীরা৷
সম্প্রতি যুবলীগের চেয়ারম্যানওমর ফারুক চৌধুরীকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে ক্যাসিনো কাণ্ডের কারণে৷ একই কারণে বিদায় করা হয়েছে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাওসারকে৷ সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ দেবনাথকে কউন্সিলের কাজ থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে৷ তারও আগে চাঁদাবাজির অভিযোগে বিদায় করা হয়েছে ছাত্রলীগের সভাপতি শোভন এবং সাধারণ সম্পাদক রাব্বানীকে৷ এখন তৃণমূল নেতা-কর্মীরা আওয়ামী লীগের সংস্কার চান৷ তাদের অভিযোগ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনে অনেক বহিরাগত রয়েছে৷
দেশের দক্ষিণের জেলা পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমাদের কাছে আওয়ামী লীগের অনুপ্রবেশকারীদের তালিকা চাওয়া হয়েছিল কেন্দ্র থেকে৷ আমরা তা পঠিয়ে দিয়েছি৷ আর দুর্নীতিবাজ কারা তা সবাই জানে৷ তাদের তালিকা করছে প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী৷ আমরা এবার এদের কাউকেই আওয়ামী লীগ বা সহযোগী সংগঠনের কোনো কমিটিতে ঠাঁই দেব না৷''
তিনি জানান, ‘‘আমাদের এখানে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কমিটিতে বহিরাগত বেশি৷ এমনকি শিবিরের ছেলেরাও ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতৃত্বে চলে এসেছে৷ আওয়ামী লীগেও বিএনপির লোকজন ঢুকেছে৷ উপজেলা কমিটির সহসভাপতি পদেও আছেন বহিরাগতরা৷''
এটা কীভাবে সম্ভব হলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘জেলা আওয়ামী লীগের মধ্যে গ্রুপিং-এর কারণে এটা সম্ভব হয়েছে৷ যার যার গ্রুপকে শক্তিশালী করার জন্য বহিরাগত জামায়ত-শিবির ও বিএনপিকে আওয়ামী লীগে আনা হয়েছে৷ আবার অভিযোগ আছে টাকার বিনিময়েও তাদের কাছে পদ বিক্রি করা হয়েছে৷''
একই ধরণের কথা বলেন সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রফিক আহমেদ৷ তিনি বলেন, ‘‘আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা যে উদ্যোগ নিয়েছেন তা যেন সফল হয় এটা আমাদের প্রত্যাশা৷ তাঁকে যদি সবাই সহযোগিতা করেন তাহলে তিনি সফল হবেন৷ কিন্তু শেখ হাসিনার পাশেও মোশতাকরা আছে৷ তার পাশেও মীরজাফররা আছে৷ তিনি যদি তাদের চিনে দূরে সরিয়ে দিতে পারেন, শাস্তি দিতে পারেন, তাহলে তিনিদুর্নীতি ও হাইব্রিডদের বিরুদ্ধেসফল হবেন৷''
তৃনমূলের এই নেতা বলেন, ‘‘আমরা দেখেছি তৃনমূলের চেয়ে দলের শীর্ষ পর্যায়ে হাইব্রিড, বহিরাগত ও দুর্নীতিবাজ বেশি৷ আমার বিবেচনায় নেতৃত্বের পর্যায়ে এটা শতকরা ১০ ভাগের কম হবে না৷ আর তৃণমূলে কমপক্ষে পাঁচ ভাগ৷''
কিন্তু তাঁর প্রশ্ন, ‘‘এদের বিদায় করবে কারা? কারণ এদের যারা দলে এনেছেন, দলে ঢুকিয়েছেন তারা আওয়ামী লীগেরই প্রভাবশালী নেতা৷ এখন তারাই যদি সিদ্ধান্ত নেন তাহলে তারাতো টিকে যাবেন৷''
আগামী ২০ ও ২১ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কাউন্সিল৷ তার আগেই প্রায় সব সহযোগী এবং ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের কাউন্সিলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে৷ আর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কাউন্সিল হওয়ার আগেই জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কাউন্সিল ও নতুন কমিটি গঠন করবে আওয়ামী লীগ৷ ৬ নভেম্বর কৃষক লীগ, ৯ নভেম্বর শ্রমিক লীগ, ১৬ নভেম্বর স্বেচ্ছাসেবক লীগ এবং ২৩ নভেম্বর যুবলীগকে কেন্দ্রীয় কাউন্সিল করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে৷
জানা গেছে জেলা পর্যায়ে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ থেকে এরইমধ্যে কাউন্সিলের নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে৷ কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের আগেই জেলা, পৌর ও উপজেলা পর্যায়ে কাউন্সিল করে নতুন নেতৃত্ব আনতে হবে৷
রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মমতাজ উদ্দিন আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমাদের জেলা কাউন্সিল ১৯ নভেম্বর৷ মহানগর ও উপজেলার কমিটি তার আগেই হবে৷ আমরা আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশমত বহিরাগত ও দুর্নীতিবাজমুক্ত কমিটি গঠন করবো৷ জামায়াত ও বিএনপির কাউকে কমিটিতে রাখা হবে না৷''
তিনি জানান, ‘‘মহানগর ও থানা কমিটিতে জামায়াত ও বিএনপির লোক ঢুকেছে৷ বিশেষ করে মহানগরের ওয়ার্ড পর্যায়ে বহিরাগত বেশি৷ আমরা তাদের চিহ্নিত করেছি৷ কমিটিতে তারা জায়গা পাবেন না৷''
আর দুর্নীতিবাজ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘তাদের চিহ্নিত করা কঠিন৷ তাদের ব্যাপারে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নজর রাখছে৷ আমরাও মনিটর করছি৷ কেন্দ্র থেকে তাদের একটা তালিকা পাব৷ কিন্তু এখানো পাইনি৷''