যেসব লীগের নামের সাথে কাজের মিল নেই
১৭ অক্টোবর ২০১৯চাঁদাবাজির অভিযোগে ছাত্রলীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে শোভন ও রাব্বানীকে সরিয়ে দেয়া হয় গত মাসে৷ সংগঠন চলছে এখন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দিয়ে৷ আর ক্যাসিনো বিরোধী অভিযান শুরুর পর যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী এখন নিষ্ক্রিয়৷ যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট শেষ পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়েছেন৷ গা ঢাকা দিয়েছেন আরো অনেক নেতা৷ তাই এইসব সংগঠনে দ্রুত কাউন্সিল করে নেতৃত্বের বদল ঘটাতে চায় আওয়ামী লীগ৷ শীর্ষ পর্যায় থেকে চাপ আছে বিতর্কিত নেতৃত্ব বাদ দেয়ার৷
স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাওসারের নামও আছে ক্যাসিনো ব্যবসার সঙ্গে৷ আছে কৃষকলীগ নেতার নাম৷ আর সেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ দেবনাথ সংসদ সদস্য হলেও তার মূল জায়গা পরিবহন ব্যবসা৷
আগামী ২০ ও ২১ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কাউন্সিল৷ তার আগেই প্রায় সব সহযোগী এবং ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনের কাউন্সিলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে৷ কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের আগেই জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কাউন্সিল ও নতুন কমিটি গঠনও করতে চায় দলটি৷ এজন্য ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের উত্তর ও দক্ষিণের বর্ধিত সভা ডাকা হয়েছে ২৩ ও ২৪ অক্টোবর৷
জানা গেছে, ৬ নভেম্বর কৃষক লীগ, ৯ নভেম্বর শ্রমিক লীগ, ১৬ নভেম্বর স্বেচ্ছাসেবক লীগ এবং যুবলীগকে ২৩ নভেম্বর কেন্দ্রীয় কাউন্সিল করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে৷ আর ছাত্রলীগের মেয়াদ আছে আগামী মে মাস পর্যন্ত৷ তারপর কাউন্সিল হবে৷
সহযোগী সংগঠনগুলোর এই দুরবস্থা নিয়ে দলে ব্যাপক সমালোচনা আছে৷ তরুণ আওয়ামী লীগ নেতা এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনির বলেন, ‘‘সেচ্ছাসেবক লীগের কাজ কী? সাধারণ মানুষের পাশে থাকা, দলের উন্নয়নে কাজ করা৷ কিন্তু নেতারা কাজ করছেন নিজের উন্নয়নের জন্য৷ যুবলীগের কাজ কী? যুব সমাজের উন্নয়নে কাজ করা৷ কিন্তু দেশে এত বেকার তাহলে যুবলীগ কী করে? তারা নিজেদের অর্থ বিত্ত বাড়াতে ব্যস্ত৷ নানা অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়েছে৷ অন্যান্য সহযোগী সংগঠনেরও একই অবস্থা৷ কোনোটাই আর সংগঠনের মূল কাজে নেই৷ সবাই ব্যস্ত নিজেদের স্বার্থে৷ ফলে মূল রাজনীতিই সংকটে পড়েছে৷ আওয়ামী লীগেও এখন বহিরাগতদের ভীড়৷’’
তিনি বলেন, ‘‘আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা এটা উপলব্ধি করেছেন৷ তাই তিনি একদিকে যেমন দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছেন৷ তেমনি দলকেও পরিশুদ্ধ করার কাজে নেমেছেন৷ আমরা আশা করি যোগ্য, দলের প্রতি অনুগত এবং সৎ নেতা-কর্মীরা এবার মূল এবং বিভিন্ন সহযোগী ও অঙ্গ সংগঠনের নেতৃত্বে আসবেন৷’’
এখন সবার উপরে আলোচনায় রয়েছে যুবলীগের কাউন্সিল৷ যুবলীগ সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী ক্যাসিনো বিতর্কে জড়িয়ে এখন আর যুবলীগ অফিসেই যান না৷ এমনকি তাকে ছাড়াই মিটিং করে কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে৷
যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশীদ বলেন, ‘‘সংগঠনের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীকে ছাড়াই আমাদের কাউন্সিল হবে৷ তিনি ক্যাসিনো বিরোধী অভিযান শুরুর পর থেকেই সংগঠনের সাথে যোগাযোগ রাখছেন না৷ কাউন্সিলের আগে ২০ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রীর সাথে যুবলীগ নিয়ে বৈঠক আছে৷ প্রধানমন্ত্রীর সাথে বৈঠকেও তিনি আমন্ত্রিত নন৷ তিনি শেষ পর্যন্ত যুবলীগের নেতৃত্বে থাকছেন কিনা তা ধীরে ধীরে স্পষ্ট হবে৷’’
তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘যুবলীগের নেতৃত্ব নির্বাচন করবেন সংগঠনের আদর্শিক নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ কোনো বিতর্কিত লোক যুবলীগে ঠাঁই পাবে না৷ যুবলীগে বিতর্কিতদের নেতা নির্বাচন করা হয় না৷ যুবলীগে এসে ব্যক্তিগত লোভ লালসার কারণে কেউ কেউ বিতর্কিত হয়৷’’
আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের কাউন্সিলের টার্গেট কী? নেতৃত্বে কি গুণগত পরিবর্তন আসছে? এই প্রশ্নের জবাবে নৌপ্রতিমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘‘এটা নেতৃত্বে গুণগত পরিবর্তনের বিষয় নয়৷ বাংলাদেশের সবচেয়ে গুণী নেতৃবৃন্দই আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিচ্ছেন৷ তারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন বলেই বাংলাদেশের উন্নতি অগ্রগতি হচ্ছে, জনসমর্থন আছে৷ আওয়ামী লীগ টানা তৃতীয়বারের মত ক্ষমতায় আছে৷ কিন্তু এখানে ক্ষমতার আড়ালে বিভিন্ন পর্যায়ে অনৈতিক কিছু ঘটনা ঘটছে যেগুলো আমরা গুরুত্ব দিয়ে দেখছি এবং পদক্ষেপ গ্রহণ করছি, যেহেতু আমরা একটা উন্নত দেশের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি৷ দেশে আইনের শাসন যেহেতু প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তাই আইনের আওতার বাইরে কোনো কর্মকাণ্ড থাকবে না৷ সবকিছু আইনের আওতায় আনা হবে৷ আইনবিরোধী কর্মকাণ্ড চলতে পারবে না৷’’