তেহেলকা সম্পাদকের বিরুদ্ধে অভিযোগ
২৮ নভেম্বর ২০১৩দিল্লি থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক পত্রিকা তেহেলকার প্রধান সম্পাদক তরুণ তেজপালের বিরুদ্ধে তাঁরই সহকর্মী এক মহিলা সাংবাদিক গোয়া পুলিশের কাছে যৌন নিগ্রহের অভিযোগ দায়ের করলে তেজপালের বিরুদ্ধে সমন জারি করে গোয়ার পুলিশ৷ গ্রেপ্তার এড়াতে দিল্লি হাইকোর্টে আগাম জামিনের জন্য আবেদন করেন তেজপাল৷ আদালত ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত রায় মুলতুবি রাখেন৷ এর প্রেক্ষিতে গোয়া পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তারও করতে পারে৷ করবে কিনা সেটাই এখন দেখার বিষয়৷
তেজপালের বিরুদ্ধে কী অভিযোগ ঐ মহিলা সাংবাদিকের? তাঁর বয়ান অনুযায়ী, গোয়াতে এক অনুষ্ঠান কভার করতে তিনি তেজপালের সঙ্গে গোয়া যান৷ সেই সময় তাঁকে লিফটের ভেতরে নিয়ে গিয়ে তাঁর শ্লীলতাহানি করে তেজপাল৷ ঐ অভিযোগের ভিত্তিতে গোয়া পুলিশ ‘লুক আউট' নোটিশ জারি করেছে৷ অর্থাৎ বিনা অনুমতিতে তেজপাল দেশ ছাড়তে পারবেন না৷ সেজন্য দেশের বিমানবন্দর, সমুদ্র বন্দর এবং স্থলসীমা চেকপোষ্টগুলিকে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে৷
যৌন নিগ্রহের কথা জানাজানি হবার পর তেজপাল অভিযোগকারীর কাছে ক্ষমা চেয়ে ইমেল পাঠান৷ তাতে উনি লেখেন, ‘‘আমাদের মধ্যে বিশ্বাসের যে সম্পর্ক ছিল তা আমি ভেঙেছি এবং এজন্য আমি লজ্জিত৷'' যেহেতু গোয়ার ঐ হোটেলের লিফটে কোনো সিসিটিভি ক্যামেরা ছিল না তাই ইমেলের ভিত্তিতেই এফআইআর দায়ের করে গোয়া পুলিশ ল্যাপটপ, আই-প্যাড এবং হার্ড-ডিস্ক জমা নিয়েছে৷ গোয়ার বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী মনোহর পারিক্করের নির্দেশে গোয়া পুলিশ ঘটনার তদন্তকাজ নিজের হাতে নেয়৷ এই কাজে গোয়া পুলিশকে সাহায্য করছে দিল্লি পুলিশ৷ ঐ তরুণী সাংবাদিক ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে তাঁর বয়ান রেকর্ড করেন৷
তেজপাল-কেলেঙ্কারির জেরে মহিলাদের নিরাপত্তাকে ঘিরে শুরু হয়েছে কংগ্রেস ও বিজেপির রাজনৈতিক বিবাদ৷ বিজেপির অভিযোগ, কংগ্রেসের ইশারাতে তেহেলকা পত্রিকা বিজেপির বিরুদ্ধে চালিয়ে আসছে একের পর এক স্টিং অপারেশন অর্থাৎ কুকর্মের গোপন তথ্য ফাঁস করে দলকে বিপাকে ফেলার চেষ্টা করছে৷ বিজেপি এই প্রসঙ্গে, কেন্দ্রীয় টেলিকমমন্ত্রী কপিল সিব্বাল ও তাঁর পরিবারের নামকেও জড়াতে চেয়েছে৷ বিজেপির অভিযোগ সিব্বাল পরিবারের ব্যবসায়িক স্বার্থ জড়িত আছে তেহেলকা পত্রিকার সঙ্গে৷ কপিল সিব্বাল দ্ব্যর্থহীন ভাষায় তা অস্বীকার করেন৷ অনেকে তাই মনে করছেন গোয়ার বিজেপি সরকার তাই কী এর বদলা নিতে তড়িঘড়ি তদন্ত শুরু করে দিয়েছে?
সুশীল সমাজের বক্তব্য
ধর্ষণ, যৌন হেনস্থা, যৌন নিগ্রহ আজ এক মহামারির আকার নিতে চলেছে৷ ঘরে বাইরে, অফিসে, কর্মস্থলে সর্বত্র৷ এখানে সমাজের নীচুতলার নিরক্ষর মানুষের সঙ্গে তরুণ তেজপালের মতো উঁচুতলার শিক্ষিত ও সংস্কৃতিমনস্ক সাংবাদিকের তফাৎ কোথায়? অন্তত মানসিকতার দিক থেকে অভিন্ন৷ বরং উঁচুতলার প্রভাবশালীদের ১৬ই ডিসেম্বরের দিল্লি ধর্ষণ ঘটনার আসমিদের মতো শাস্তি হয় না বললেই চলে৷ দিল্লির ঐ আলোচিত ঘটনার পর মহিলা নিরাপত্তা আইন কঠোর করা হয়েছে৷ তাতে ধর্ষণ কী বন্ধ হয়েছে? আইন তৈরি করা যায়, কিন্তু মানসিকতা বদলানো যায় না৷
তেহেলকা তথ্য
হিন্দিতে তেহেলকা শব্দের অর্থ চাঞ্চল্যকর৷ তেহেলকা প্রথমে ছিল একটা নিউজ পোর্টাল৷ ২০০৭ সালে হয় সাপ্তাহিক পত্রিকা৷ এদের অন্যতম নীতি হলো স্টিং অপারেশনের মাধ্যমে গোপন তথ্য ফাঁস করা৷ যেমন ক্রিকেটে ম্যাচ ফিক্সিং৷ যার ফাঁদে পড়েছিলেন ভারতের সাবেক ক্রিকেট অধিনায়ক আজহার উদ্দিন, অজয় জাদেজা প্রমুখ৷ ফাঁস করেছিল প্রতিরক্ষা দপ্তরের দুর্নীতি, যার জেরে ইস্তফা দিতে বাধ্য হন বাজপেয়ী সরকারের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জর্জ ফার্নান্ডেজ৷ আরো আছে, মনিপুরে ভুয়া সংঘর্ষে নিরস্ত্র মানুষকে হত্যা, গুজরাট দাঙ্গায় বজরং দলের ভূমিকা ইত্যাদি৷