দক্ষিণ এশিয়ায় নির্বাচনী আইন প্রয়োগে বাংলাদেশ সবচেয়ে দুর্বল
২৪ জানুয়ারি ২০২০কেন্দ্র দখল ঠেকানো গেলে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ইভিএম দিয়েও নিরপেক্ষ ভোট সম্ভব বলে মনে করেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. সাখাওয়াত হোসেন৷ তার মতে নির্বাচনের সবচেয়ে শক্তিশালী আইন থাকা সত্ত্বেও প্রয়োগে বাংলাদেশই দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে দুর্বল৷
সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে এখন ঢাকা শহরে উত্তাপ৷ নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা, সার্বিক ব্যবস্থাপনা, ভোট চুরির শঙ্কা এসব নিয়ে চলছে আলোচনা৷ নির্বাচন কমিশনের যে প্রস্তুতি তাতে কতটা সুষ্ঠু ভোট সম্ভব? ডয়চে ভেলের সঙ্গে আলাপকালে এসব বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. সাখাওয়াত হোসেন৷ তার মতে, ‘লজিস্টক' আয়োজন ভালো হলেও সার্বিক ব্যবস্থাপনায় অনেক বছর ধরেই ঘাটতি রয়েছে৷
ডয়চে ভেলে : এই নির্বাচন কমিশনের উপর মানুষের একটা আস্থার সংকট আছে গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই৷ এর মধ্যে ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন৷ আয়োজন দেখে কেমন হবে বলে মনে হচ্ছে?
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. সাখাওয়াত হোসেন : আয়োজন দুই ধরনের৷ একটা লজিস্টিক আয়োজন৷ এটা ভালো৷ সেন্টার তৈরি করা, ভোটার তালিকা তৈরি করা এগুলো ঠিক আছে৷ আরেকটা হল সার্বিক ব্যবস্থাপনা৷ এটা নির্বাচন প্রসেস নিয়ে৷ এখানে অনেক বছর ধরেই ঘাটতি দেখা যাচ্ছে৷ এই ঘাটতি শুধু কমিশনের না, সরকারি দল, রাজনৈতিক দল সবার৷ এর মধ্যে নির্বাচন কমিশনের ঘাটতি থাকলে সেটা বেশি করে ধরা পড়ে৷
প্রার্থীদেরতো আচরণবিধি লংঘনের মহড়া চলছে৷ কারো বিরুদ্ধে তেমন ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি৷ এ অবস্থায় ভোট কতটা নিরপেক্ষ হওয়া সম্ভব?
এই অবস্থায় মানুষের মধ্যে শঙ্কা ঢোকে৷ তখন ভোট নিরপেক্ষ হলেও সেটা মানুষ বিশ্বাস করতে চায় না৷ যেমন ধরুন, কালকে একটা ঘটনা ঘটল৷ সেটা টিভির মাধ্যমে সবাই দেখেছে৷ একপক্ষ সেখানে গায়ের জোর দেখালো৷ এটার বিরুদ্ধে শক্ত একটা আইন আছে৷ এখন দেখতে হবে নির্বাচন কমিশন কী ব্যবস্থা নেয়৷ সরকারি দলের যে ধরনের আচরণবিধি লংঘন দেখছি, সেটা অন্যরাও ফলো করছে৷ এসব কারণে মানুষের মধ্যে আশঙ্কা তৈরী হয়৷
নির্বাচনে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী, এমনকি নির্বাচনী কর্মকর্তাদের ভূমিকাই অনেক সময় প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে৷ এই কর্মকর্তাদের দিয়ে ভালো ভোট কি প্রত্যাশা করা সম্ভব?
যারা পরিচালনা পর্যদে আছেন তারা যদি সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করেন বা শীতল থাকেন তাহলে তাদের অধস্তনরাওতো কোন সিদ্ধান্ত নিতে চান না৷ তখন সবাই চুপ হয়ে যান৷
আমাদের নির্বাচন কমিশন সাংবিধানিকভাবে ভারতের কমিশনের চেয়েও শক্তিশালী৷ কিন্তু এই কমিশনকে তাদের সেই ক্ষমতা প্রয়োগ করতে দেখা যায় না৷ এখন যারা আছেন তারা পারছেন না কেন?
তারা শুরুর থেকেই পারেননি৷ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় কতগুলো অভিযোগ আসল সেগুলোর কি একটারও তদন্ত করে তারা ব্যবস্থা নিয়েছেন? যেগুলো সুস্পষ্ট অভিযোগ ছিল সেগুলোরতো তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে পারত৷ এই কারণে বলছি, তারা শুরু থেকেই পারেনি৷ এখন পুরোটাই সরকারের উপর নির্ভর করে৷ যদি তারা ভালো চায় তাহলে কোন কোনটা ভালো হয়৷
আপনারা যে আইন করে গেছেন, সেটা দিয়েতো চাইলে ভালো নির্বাচন করা সম্ভব?
আমরা যে আইন করে গেছি সেটারও যদি সঠিক প্রয়োগ হতো তাহলেও ভালো নির্বাচন করা সম্ভব৷ আমি পিএইচডি করেছি, এটার উপরই৷ সাউথ এশিয়ায় নির্বাচনী আইন প্রয়োগে সব থেকে দুর্বল বাংলাদেশ৷ অথচ আমাদের নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা অন্যদের থেকেও বেশি৷ প্রার্থীতা বাতিল করার ক্ষমতা একমাত্র বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনের আছে৷ ভারতের সঙ্গে যদি তুলনা করি, তাদের হাত পা বাধা অনেক জায়গায়৷ ভারতে একটা ইনস্টিটিউশন দাঁড়িয়ে গেছে৷ এখানে ইনস্টিটিউশন সেভাবে গড়ে ওঠেনি৷
তাহলে কি রাজনৈতিক সরকারের অধীনে প্রভাবমুক্ত হয়ে নির্বাচন কমিশনের পক্ষে ভালো ভোট করা সম্ভব না?
সম্ভব৷ যদি নির্বাচন কমিশন সেরকম হয়৷ কমিশন দুর্বল হলে এটা এ্যাড করে এটার সঙ্গে৷ এখন ধরেন কোনো ঘটনার ব্যাপারে যদি কমিশন এ্যাকশনে না যায় তাহলে মানুষ কী বুঝবে৷ দেখেন একটা তারিখ পরিবর্তন করতে গিয়ে কী ঘটনা ঘটে গেল৷ অথচ তারা কি স্বাভাবিকভাবে পারত না? এটা যেহেতু ইনস্টিটিউশন হয়নি, তাই সব রাজনৈতিক দল চাইবে নিজেদের সুবিধা নিতে৷
বিরোধী পক্ষের আপত্তি সত্বেও ইভিএমে এবার ভোট হবে৷ এতে কতটা নিরপেক্ষ ভোট সম্ভব?
এটা দিয়েও নিরপেক্ষ ভোট সম্ভব৷ যদি কেন্দ্র দখল ঠেকানো যায়৷ আর যদি ভোটারদের আশ্বস্ত করে আনা যায়৷
নির্বাচন কমিশন থেকে বলা হচ্ছে, রাতে কেন্দ্র দখল ঠেকাতে ইভিএমের প্রচলন৷ কিন্তু দিনে কেন্দ্র দখল হলেওতো একই পরিস্থিতি হতে পারে?
দিনের কেন্দ্র দখল ঠেকাতে তারা কী চিন্তা করছে সেটাতো আমরা জানি না৷ কেন্দ্র দখল হলে ইভিএম যতই ভালো হোক কাজ হবে না৷ যেহেতু প্রশ্ন উঠেছে তাই ভারতের মতো এখানেও ইভিএমে পেপার ট্রে লাগানো উচিৎ৷ কারণ এখন যে অবস্থা তাতেতো কেউ চ্যালেঞ্জও করতে পারবে না৷
ভোটের আগের রাতে বিরোধী পক্ষের পোলিং এজেন্টদের হয়রানির আশঙ্কা করছেন প্রার্থীরা৷ এক্ষেত্রে কমিশনের করণীয় কি?
কমিশনকে আশ্বস্ত করতে হবে৷ তাদের বলতে হবে, নির্বাচনের আগে কাউকে ধরা যাবে না৷ যদি কারো বিরুদ্ধে মামলাও থাকে তাহলেও এতদিন কেন ধরেনি৷ এমন অভিযোগ পাওয়া গেলে কয়েকটি কেন্দ্রের ভোট বন্ধ করে দিতে হবে৷ এটা ছোট শহর, সবাই বুঝতে পারে ব্যাপারটা৷