1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দফায় দফায় সংঘর্ষ ঢাকায়

৬ আগস্ট ২০১৮

ঢাকায় সোমবারও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ ও ‘সরকার সমর্থকদের' সংঘর্ষ হয়েছে৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি ও নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের মিছিলে ‘বাধা' দেয়ায় এ ঘটনা ঘটেছে৷ 

https://p.dw.com/p/32hNf
ছবি: Reuters/M. Ponir Hossain

শিক্ষার্থীদের ওপর শনি ও রবিবার পুলিশ ও সরকার সমর্থকদের হামলার প্রতিবাদে সোমবারও বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও একাধিক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় এই মিছিল-সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা৷ এ সময় পুলিশ ও লাঠিসোঁটা হাতে যুবকরা শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হলে কয়েকটি এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়৷ এ সব ঘটনায় সোমবার প্রায় অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন৷

শাহবাগ এলাকা

ডয়চে ভেলে বাংলার কন্টেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরের রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রায় ছয়শ' শিক্ষার্থী সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন৷ বেলা ১২টায় রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশ থেকে মিছিল শুরু করেন তারা৷ এরপর মিছিলটি মধুর ক্যান্টিন, কলাভবন, কার্জন হল, বুয়েট ঘুরে টিএসসি হয়ে বিকেল ৩টার দিকে শাহবাগের দিকে অগ্রসর হয়৷

শাহবাগ মোড়ে অবস্থানরত পুলিশ সদস্যরা এ সময় শিক্ষার্থীদের আটকে দেন৷ তখন বাকবিতণ্ডা ও পরে ধাক্কাধাক্কি শুরু হবার এক পর্যায়ে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পুলিশ৷ এ সময় শিক্ষার্থীরা পালটা ঢিল ছুঁড়তে থাকেন৷ ইটের আঘাতে আহত হন এক পুলিশ সদস্য৷ এরপর পুলিশ জলকামান ও লাঠিচার্জ করে৷ প্রায় ২০ মিনিট ধরে চলে ধাওয়া-পালটা ধাওয়া৷

পুলিশ শাহবাগ থেকে এগিয়ে গিয়ে চারুকলার সামনে অবস্থান নেয়৷ শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে টিএসসিতে চলে যান৷

এক শিক্ষার্থী বিডিনিউজকে বলেন, ‘‘আমরা পুলিশকে বলেছিলাম, মিছিল নিয়ে শাহবাগ ঘুরে চলে আসব৷ কিন্তু তারা আমাদের বাধা দেয়৷ এক পর্যায়ে তারা টিয়ার গ্যাস মারা শুরু করে৷''

এ বিষয়ে মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার মারুফ হোসেন সরদার দাবি করেন, শিক্ষার্থীরা শাহবাগ মোড়ে রাস্তা বন্ধ করতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়৷ বলেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শতাধিক যুবক শাহবাগ মোড়ে এসে রাস্তা বন্ধ চাইলে পুলিশ বাধা দেয়৷ এ সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে তারা ইট ছোড়ে৷ পরে পুলিশ তাদের ধাওয়া দিয়ে সরিয়ে দেয়৷''

শিক্ষার্থীদের বরাত দিয়ে বিডিনিউজ বলছে যে, এই সংঘর্ষে অন্তত পাঁচজন আহত হয়েছেন৷ দুই শিক্ষার্থীকে আটকের বিষয়ে পুলিশ জানিয়েছে যে, তাদের বিরুদ্ধে যাচাই বাছাই করে ব্যবস্থা নেয়া হবে৷

ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়

এদিকে, রাজধানীর রামপুরার আফতাবনগর এলাকায় ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করতে ক্যাম্পাসের সামনে অবস্থান নেন৷ সোমবার বেলা পৌনে এগারটার দিকে শুরু হয় পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ৷ পুলিশ টিয়ার শেল ছুঁড়ে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে পুলিশ৷

এ সময় একদল যুবক লাঠি হাতে তাদের ধাওয়া দেন৷ তারা মেরুল বাড্ডার দিক থেকে এসে ধাওয়া দেন৷ যুবকরা রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ করে দেন এবং সাধারণ পথচারীদের ওপর চড়াও হন বলে জানিয়েছে বিডিনিউজ৷ এ সময় স্কুলের পোশাক পরিহিত দু'জনকে পেটাতে দেখেন সেখানে উপস্থিত নিউজ পোর্টালটির প্রতিবেদক৷

প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে বিডিনিউজ বলেছে যে, লাঠি হাতে সেই যুবকদের মধ্যে বেরাইদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম এবং স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা-কর্মীদেরও দেখা যায়৷

এরপর পুলিশের পাশাপাশি সেখানে র‌্যাব ও এপিবিএন সদস্যরাও অবস্থান নেন৷ তারা শিক্ষার্থীদের চলে যেতে বলেন৷ কিন্তু শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে টায়ার জ্বালিয়ে দেন৷

পরে পুলিশ টিয়ার শেল ছুড়ে৷ ইউনিভার্সিটির ভেতরে চলে যায় শিক্ষার্থীরা৷ লাঠি হাতে রাস্তায় অবস্থান নেয়া যুবকরা তখনও ইউনিভার্সিটির দিকে ঢিল ছুঁড়ছিলেন৷

সেখান থেকে প্রকাশ হওয়া বিভিন্ন ভিডিওতে অল্প বয়সি তরুণ যুবকদের দেখা যায় ইস্ট ওয়েস্টের দিকে ঢিল ছুঁড়তে৷

স্থানীয় গণমাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী, এ সময় সেখানে দায়িত্বরত প্রথম আলোর প্রতিবেদক নাসরিন আক্তার সুমির ওপর চড়াও হন একদল যুবক৷ তার মোবাইল ফোন কেড়ে নেন তারা৷ সুমি দাবি করেন, পরে পুলিশ সদস্যরা বাড্ডা ফাঁড়িতে নিয়ে গিয়ে ফোনের সব তথ্য মুছে ফেলেন৷

বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা

ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে দুপুর ২টার দিকে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও প্রতিবাদ জানাতে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় জড়ো হন৷

ঢাকা থেকে প্রকাশিত দ্য ডেইলি স্টারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ সময় একদল যুবক লাঠিসোঁটা হাতে তাদের ওপর চড়াও হন৷ এর কিছুপর পুলিশ সেখানে টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে৷ মুহুর্মুহু টিয়ার শেল নিক্ষেপে পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়৷ এ সময় অনেক শিক্ষার্থী আহত হন৷ সেখানে থাকা পথচারীরাও আহত হন বলে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে ডেইলি স্টার৷

সংঘর্ষে আহত হয়ে বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত অ্যাপোলো হাসপাতালের ইমারজেন্সি বিভাগে চিকিৎসা নিতে গিয়েছেন অন্তত ৪০ জন বলে জানিয়েছে ইংরেজি দৈনিকটি৷

বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা

এদিকে, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার অভিযোগ এনে মামলা করা হয়েছে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও রুহুল কবীর রিজভীর বিরুদ্ধে৷

ঢাকার আদালতে মামলা করেছেন জননেত্রী পরিষদের সভাপতি এ বি সিদ্দিকী৷ স্থানীয় বাংলা দৈনিক প্রথম আলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৪ আগস্ট ইলেকট্রনিকস ডিভাইস ব্যবহার করে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু৷ আর ফখরুল ও রিজভীর বিরুদ্ধে অভিযোগ যে, তাদের নির্দেশেই নিরীহ ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ছাত্রদলের কর্শিরা ঢুকে জিগাতলায় আওয়ামী লীগের অফিসে হামলা করেছে৷ এই তিন আসামি সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্র করেছেন বলে অভিযোগ বাদীর৷

জেডএ/ডিজি

আপনাদের কোনো মতামত থাকলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে৷