ফের হামলা, সড়কে সশস্ত্র মহড়া
৫ আগস্ট ২০১৮রবিবার সপ্তম দিনের মতো ‘নিরাপদ সড়কে'র দাবিতে সকাল ১১টার দিকে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা শহাবাগ মোড়ে অবস্থান নেন৷ তারা গাড়ির কাগজপত্র চেক ও ট্রাফিক শৃঙ্খলার কাজ করেন৷ তাদের সঙ্গে যোগ দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বুয়েটের শিক্ষার্থীরা৷
ঘটনাস্থলে সংবাদ সংগ্রহের কাজে উপস্থিত সাংবাদিক রাফসানজানি ডয়চে ভেলেকে জানান যে, এরপর প্রায় পাঁচ হাজার শিক্ষার্থী শাহবাগ এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে সায়েন্স ল্যাবরেটরি হয়ে জিগাতলা এলাকার দিকে রওনা দেয়৷ শনিবার জিগাতলা ও ধানমন্ডি এলাকায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ-যুবলীগের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটায় ওই এলাকায় আগে থেকেই সতর্ক অবস্থান নেয় পুলিশ৷
তিনি বলেন, ‘‘শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকা থেকে পিলখানা পার হয়ে জিগাতলা বাসস্ট্যান্ডের দিকে গেলে পুলিশ তাদের সেখান থেকে ঘুরে চলে যেতে বলে৷ কিন্তু, তারা পুলিশের ধানমন্ডি ৩/এ সড়কে অবস্থিত আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করেন৷ এ সময় পুলিশ তাদের বাধা দিলে শিক্ষার্থীদের একাংশ সেখান থেকে ঘুরে সায়েন্স ল্যাবরেটরির পথ ধরে৷ পেছনের অংশ সেখানেই অবস্থান করে৷ তখন পুলিশ কয়েক রাউন্ড কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে৷''
রাফসানজানি বলেন, ‘‘এ সময় সাধারণ শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলে হঠাৎই ধানমন্ডি লেকের দিক থেকে একদল সন্ত্রাসী লাঠিসোঁটা, রামদা, কিরিচ ইত্যাদি নিয়ে এসে তাদের ওপর চড়াও হন৷ এ সময় ধাওয়া-পাল্টা-ধাওয়ায় ওই এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়৷ শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, হামলাকারীরা ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মী৷''
হামলায় প্রায় একশ' শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন৷ তাদের মধ্যে ২৫-৩০ জনকে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে৷
হামলাকারীদের অনেকেই ছিল মাথায় হেলমেট পড়া৷ তাদের হামলায় অনেকেরই মাথা ফেটে যায়৷ এর পরপরই সায়েন্স ল্যাবরেটরী এলাকায় যারা ফিরে যান তাদের ওপরও ব্যাপক হামলা হয়৷ জিগাতলা ও সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলকায় প্রকাশ্যেই সশস্ত্র অবস্থায় মহড়া দেয় ছাত্রলীগ যুবলীগের কর্মীরা৷ সায়েন্স ল্যাবরেটরী এলাকায় পাঁচজন ফটো সাংবাদিকসহ কয়েকজন সাংবাদিক হামলায় গুরুতর আহত হয়েছেন৷ বিকেল তিনটা পর্যন্ত ওই সব এলাকায় দফায় দফায় হামলার ঘটনা ঘটে৷
হামলায় আহত ফটো সাংবাদিকরা হলেন এসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)-এর এএম আহাদ, দৈনিক বণিক বার্তার পলাশ শিকদার, নিউজ পোর্টাল বিডি মর্নিং আবু সুফিয়ান জুয়েল, দৈনিক জনকণ্ঠের জাওয়াদ ও দৈনিক প্রথম আলোর সিনিয়র ফটোগ্রাফার সাজিদ হোসেন ও প্রতিবেদক আহম্মেদ দীপ্ত৷
এছাড়াও কয়েকজন ফ্রিল্যান্স ফটোগ্রাফারের উপরও হামলা করেছে তারা৷ তারা হলেন, রাহাত করীম, এনামুল হাসান, মারজুক হাসান, হাসান জুবায়ের এবং এন কায়ের হাসিন৷ তারা সবাই পাঠশালার শিক্ষার্থী৷
হামলায় গুরুতর আহত বণিক বার্তার ফটো সাংবাদিক পলাশ শিকদার ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘সায়েন্স ল্যারেটরি পুলিশ বক্সের পাশে রাস্তায় আমাদের মারধর করা হয়৷ হামলাকারীরা ক্যামেরা ছিনিয়ে নেয় এবং ভেঙ্গে ফেলে৷ তারা রড এবং পাইপ দিয়ে আমাদের পেটায়৷ রামদার পিছন দিক দিয়ে আঘাত করে৷''
তিনি বলেন, ‘‘আমাদের ওপর হামলার সময় পুলিশ ছিল৷ কিন্তু তারা আমাদের উদ্ধারে এগিয়ে আসেনি৷ এমনি আমরা পাশের একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেলেও আমাদের চিকিৎসা দেয়া হয়নি৷'' তিনি আরো বলেন, ‘‘আমাদের ওপর হামলাকারী সাতজনের ছবি আমরা তুলে রেখেছি৷''
তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘আমাদের ওপর শিক্ষার্থীরা হামলা করেনি৷ ধারণা করছি তারা ছাত্রলীগ যুবলীগের৷ তারা প্রকাশ্যে রাস্তায় সশস্ত্র মহড়া দিচ্ছিল৷''
রমনা জোনের উপ পুলিশ কমিশনার মারুফ হোসেন সরদার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘কোনো সাংবাদিক তাদের ওপর হামলার ব্যাপারে আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ করেননি৷ অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নিতাম৷''
ছাত্রদের ওপর হামলার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘‘বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করলে আমরা তাদের ছত্রভঙ্গ করেছি৷ তাদের ওপর হামলা কারা করেছে আমরা জানি না৷''
সাংবাদিকরা একটি গ্রুপের প্রকাশ্যে সশস্ত্র মহড়ার ব্যাপারে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘‘আমরা দেখিনি৷ যারা আমাদের দিকে ঢিল ছুড়েছে আমরা তাদের ছত্রভঙ্গ করেছি৷''
এদিকে, রবিবার মিরপুর, ফার্মগেট, উত্তরা এবং বাড্ডা একায়ও শিক্ষার্থীরা সড়কে অবস্থান নেয়৷ তাদের পুলিশ ছত্রভঙ্গ করে দেয়৷ঢাকায় রবিবার থেকে পুলিশের উদ্যোগে বিশেষ ট্রাফিক সপ্তাহ শুরু হলেও সড়কে কোনো পাবলিক পরিবহণ দেখা যায়নি৷ তবে পুলিশ বক্সগুলোর কাছে স্থানীয় ছাত্রলীগ ও যুবলীগ কর্মীদের জটলা করতে দেখা গেছে৷