দিল্লির দুর্গা পুজো
৩ অক্টোবর ২০১৪সারা বছর কেটে যায় তাদের নিজস্ব গণ্ডির মধ্যে, কিন্তু দুর্গা পুজোর কটা দিন তাঁরা ভেসে যায় প্রাণের উৎসবে৷ একে অপরকে দেখে উগরে দেয় সারা বছরের জমে থাকা কথা৷ খোশগল্পে ফিরে আসে হারিয়ে যাওয়া বাঙালি আড্ডার নিজস্ব মেজাজ৷ গত বছর যাদের দেখেছিলাম কিশোর-কিশোরী তাঁরা আজ তরুণ তরুণী৷ গত বছর পায়ে হাত প্রণাম করতো বাঙালি সৌজন্যে৷ এ বছর তারা বললো, ‘‘কেমন আছো জেঠু বা কাকা?' কোথায় পড়ছো জিজ্ঞাসা করলে বলে হয় মিরান্ডা নাহয় সেন্ট স্টিফেন্স৷ ভাল লাগে দেখে৷ সব মিলিয়ে এক মিলন মেলার মৌতাত৷
দিল্লির দুর্গাপুজো শুধু পুজো নয়, সঙ্গে থাকে বেশ ভাল পেট পুজোও৷ সপ্তমী থেকে নবমী পঙ্ক্তি ভোজ৷ খিচুড়ি, লাবড়া যাকে বলে ঘ্যাঁট, পনিরের আইটেম, বাঁধা কপি কিংবা ফুলকপি, চাটনি, মিষ্টি৷ পেট পুরে খেয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তুলতে তুলতে আবার আড্ডা৷ হালকা হালকা পরচর্চার পর ছেলে কী করছে, বিয়ের বিয়ে কবে কিংবা সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কী হবে, কোন শিল্পী গান গাইবে ইত্যাদি৷ বারোয়ারি পুজো হলেও কেমন একটা ঘরোয়া ঘ্রাণ৷ এটাই আমার মনে হয় দিল্লির প্রবাসী বাঙালিদের দুর্গা পুজোর নিজস্বতা৷ তবে এটা না বলে পারছি না, পুজোর আচার সংহিতার চেয়ে বহিরাঙ্গিক জৌলুসটাই যেন মুখ্য, আর পুজোর ধর্মীয় ভাবটা যেন দিনকে দিন গৌণ হয়ে পড়ছে৷
সময়ের দাবিতে রুচির বিবর্তনে দিল্লিতেও এসেছে প্রতিমা তৈরিতে অভিনবত্ব৷ লোকশিল্প থেকে আধুনিকতা, সাবেকিয়ানা থেকে বিমূর্ত শিল্প৷ দিল্লির প্রতিমা শিল্প এবং মণ্ডপ সজ্জায় এক বড় ভূমিকা বাংলার গ্রাম-গঞ্জের গরিব শিল্পীদের৷ পুরো পরিবার নিয়ে পুজোর মাস দেড়েক আগেই চলে আসে দিল্লিতে৷ ঢাকি থেকে পুরোহিত কেউ বাদ যায় না৷ কলকাতার থিম পুজোর ঢেউ দিল্লিতেও আছড়ে পড়েছে৷ তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা থিম বনাম সাবেকিয়ানার৷ তবে সামগ্রিকভাবে এ বছর দিল্লির দুর্গা পুজোর জাঁকজমক কিছুটা ম্লান৷ কারণ পুজোর উদ্যোক্তারা বলছেন, টাকা ওঠেনি৷ বিজ্ঞাপন এবং বাণিজ্যিক সংস্থাগুলির স্পনসরশিপ থেকে যে মোটা টাকা আসতো তেমন আসেনি৷ কারণ হালের নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলিকে প্রচুর টাকা পয়সা দিতে গিয়ে তাদের ভাঁড়াড়েও নাকি টান৷ কিছু কিছু প্যান্ডেলে কাশ্মীরের বন্যা এবং কিছু কিছু প্যান্ডেলে পরিবেশ সচেতনতার কথা তুলে ধরা হয়েছে৷ ভাল লাগলো দেখে৷