ধর্মীয় উৎসব
৮ আগস্ট ২০১৩ঈদ উপলক্ষ্যে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমেও সবাই এখন শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন৷ তবে সামহোয়্যার ইন ব্লগে ‘অন্যমনস্ক শরৎ' জানিয়েছেন ঈদের কেনাকাটার সময়ের এক তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা, ‘‘মা-বোনকে নিয়ে শপিংয়ে গিয়েছি৷ একদম ফেরার সময় শেষ দোকানটায় ঢোকা৷ এমন সময় খেয়াল করলাম সস্তা মেকাপ দিয়ে চারজন নারী মেয়েদের কেনাকাটার অংশে ঢুকেছে৷ এবং তারা একভাবে আমাকে ঠেলে দিচ্ছেন৷ আমি স্বভাবতই মাকে মাঝখানে রেখে সরে আসছি৷ প্রথমে ভেবেছিলাম গার্মেন্টস কর্মী, ঈদের সাজুগুজু করে শপিংয়ে এসেছেন এবং মধ্যবিত্ত....৷'' ‘অন্যমনস্ক শরৎ' পরে বুঝেছেন ওই চার নারী আসলে সংঘবদ্ধ এক চক্রের সদস্য, যাদের কাজ ভিড়ে ঢুকে এটা-ওটা বাগিয়ে নেয়া৷
এদিকে আমার ব্লগে ‘সুশুপ্ত পাঠক' ঈদ প্রসঙ্গে লিখেছেন বেশ বড় একটি লেখা৷ শিরোনাম, ‘ধর্মীয় উৎসবের ভবিষ্যৎ'৷ মূলত ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের উৎসব ঈদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি তাঁর লেখা৷ শুরুতেই ‘সুশুপ্ত পাঠক' লিখেছেন, ‘‘ধর্মীয় উৎসবগুলোর সঙ্গে ধর্মের সম্পর্কগুলো বাদ দিলে যে সর্বজনীন চেহারা ফুটে উঠে তা খুবই উৎসাহ ব্যঞ্জক৷ অসাম্প্রদায়িক চেতনাধারী মানুষের কথা ভেবে এবং তাদের সংখ্যাবৃদ্ধির একটা চিত্র কল্পনা করে স্বাভাবিকভাবেই স্বস্তিবোধ করি৷ ইফতারের বাজারে প্রচুর হিন্দু সম্প্রদায়কে ইফতার কিনতে দেখেছি৷ দূর্গা পূজার লাড্ডু অনেক মুসলমান বাড়ি কিনে নিয়ে যায় উৎসব উপলক্ষ্য করেই৷ ছোটবেলা থেকে আমাদের বাড়িতে দেখে আসছি দূর্গা পূজার সময়ে লাড্ডু কেনা হয়৷....পূজা দেখতে যেতে আমাদের বাড়িতে কখনো কোনোদিন বাধা দেয়া হয়নি৷ অনেক মুসলিম পরিবারেও এই কথা সত্য৷ ঈদের দিন বাংলাদেশের অধিকাংশ হিন্দুর ঘরে নিদেনপক্ষে সকালবেলা একটু সেমাই রান্না করা হয়৷ অনেকের বাসায় দুপুরে রীতিমতো পোলাও-মাংস রান্না করা হয়৷ দূর্গা পূজার মন্ডপে আমার হিন্দু বন্ধুর সঙ্গে আমার মুসলিম বন্ধু একসঙ্গে নাচানাচি করেছে৷ সংখ্যায় কম হলেও এগুলোই ধর্মীয় উৎসবের সর্বজনীন হয়ে উঠার গল্প৷''
তারপরই আমার ব্লগ-এর ব্লগার গিয়েছেন বিষয়ের আরো গভীরে৷ সমাজের একটা অংশ যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে সবসময় তৎপর সেই বিষয়টিও তুলে ধরেছেন তিনি, ‘‘....কিন্তু এসব তো সবার ভালো লাগার কথা নয়৷ মানুষে মানুষে মেলবন্ধনে পৃথিবীর ঘাতকদের স্বস্তিবোধ করার কথাও নয়৷ শ্রীকৃষ্ণের জন্মদিনের মিছিলে কিংবা মহরমের তাজিয়া মিছিলে রাস্তার পাশ থেকে দাঁড়িয়ে দেখার মানুষ দ্রুত কমে যাচ্ছে৷ এগুলো এখন চোখের পাপ! দূগা পূজায় মন্ডপে নাচানাচি দূরে থাক, সেখানে সামাজিকভাবে নিমন্ত্রণ রক্ষা করাও ধর্মসম্মত নয় আজকাল৷ হাদিস থেকে কোরআন থেকে নানা মাসালা বের করে এনে মসজিদ থেকে বয়ানের নামে বিষ ছাড়া হচ্ছে৷ সব ধর্মের মানুষ মিলে বছরে নির্দিষ্ট কোনো উৎসবে যোগ দেয়া দিনকে দিন সুদূর পরাহত হয়ে উঠছে৷''
তারপর ‘সুশুপ্ত পাঠক' চোখ রেখেছেন উপমহাদেশের বাইরে৷ বিশ্বের অন্যান্য দেশে অন্য ধর্মগুলোর উৎসবের চেহারা দ্রুত বদলে যাবার বিষয়টি উল্লেখ করে লিখেছেন, ‘‘....‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার' – বলে একটা প্রচারণা চালানোর খুব চেষ্টা চলছে আমাদের অসাম্প্রদায়িক চেতনার মহল থেকে, কিন্তু বিপরীত প্রচারণার তোড়ে সেটা খুবই ক্ষীণ স্রোত ধারায় বয়ে চলেছে৷ মাঝখানে বাঁধ দিয়ে সে ধারাকে শুকিয়ে মেরে ফেলার চেষ্টাও হচ্ছে৷ আগামীদিনে তাই ঈদকে অনেক বেশি ধর্মীয় লেবাসে জড়ানো হবে৷ যাতে অন্য ধর্মমতের লোক স্বাচ্ছন্দবোধ না করে৷ বর্হিবিশ্বে প্রবাসী মুসলিমদের খ্রিস্টমাসে যোগ দেয়ার প্রবণতা কমে যাবে অস্বাভাবিক হারে৷ আর পূজা তো শিরক! তাই বেদাত, কুফরি, শিরক ইত্যাদির ভয়ে মুসলিম মানস কুঁকড়ে যাবে সর্বজনীন উৎসবে যোগ দিতে৷ মহরমের তাজিয়া মিছিলেই যেখানে আজকের সুন্নি মুসলিমের কাছে বেদাত সেখানে দূর্গা পূজা, খ্রিস্টমাসসহ অন্যান্য উৎসব তো আরো অমসৃণ দূর্গম পথ....৷''
‘সুশান্ত পাঠক' শেষ করেছেন একটা প্রশ্ন আর বড় কিছু আশঙ্কার কথা লিখে, ‘‘ধর্মীয় উৎসবগুলোর ভবিষ্যত তাহলে কি? পাকিস্তানে ঈদের নামাজের জামাতে বোমা হামলায় প্রাণ হারায় মানুষ৷....এই রকম পরিস্থিতিতে কোনো উৎসব আনন্দের হয় না৷ এসব অতিরিক্ত ধর্মীয়করণের ফল৷ মসজিদে ঈদের নামাজের জামাতে বোমা হামলা কোনো ইহুদি-খ্রিষ্টান করে না৷ দূর্গা পূজার মন্ডপে র্যাব-পুলিশের কঠোর পাহারা ধর্মীয় উৎসবের ভবিষ্যত আগামীদিনে আতঙ্কের মধ্য দিয়েই শুরু হবে বলে মনে হচ্ছে৷ ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার' – এই মন্ত্রে দীক্ষিত মানবতাই পারে ধর্মীয় উৎসবগুলোর ভবিষ্যত সর্বজনীন আর উৎসবমুখোর করে তুলতে৷ আমরা সেই মন্ত্রে দীক্ষা নিবো কিনা সেটা আমাদেরই ঠিক করতে হবে৷''
সংকলন: আশীষ চক্রবর্ত্তী
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ