দিল্লি গণধর্ষণকাণ্ডে নাবালক অপরাধীর শাস্তি নিয়ে বিতর্ক
৪ সেপ্টেম্বর ২০১৩দিল্লি গণধর্ষণকাণ্ডের অন্যতম একজন আসামির বয়স ১৮ বছরের কয়েকমাস কম হওয়ার সুবাদে আইনের সংজ্ঞা অনুযায়ী তাকে নাবালক বলে গণ্য করে তার বিচার হয় জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডে৷ বিচারে তার শাস্তি হয় মাত্র তিন বছরের জেল৷ বিচারপর্ব চলাকালীন প্রায় আট মাস সে জেলে কাটিয়েছে৷ অর্থাৎ, অবশিষ্ট দু'বছর চার মাস তাকে থাকতে হবে জেলের সংশোধনাগারে৷ এরপর, এত বড় একটা অপরাধ করেও সে মুক্ত হয়ে যাবে৷ তাই একে সুবিচার বলে মনে করে না নাগরিক সমাজের একটা বড় অংশ৷
গুরু অপরাধে লঘু শাস্তি নিয়ে দেশ জুড়ে চলেছে তুমুল বিতর্ক৷ ক্ষোভ ব্যক্ত করে ধর্ষিতা তরুণীর পরিবার বলেছে, (সবাই তরুণীর নাম দিয়েছে নির্ভয়া) এর প্রতিকারে তাঁরা উচ্চতর আদালতে যাবেন৷ কারণ বয়সটা অপরাধের একমাত্র মাপকাঠি হতে পারে না৷ বিবেচ্য হওয়া উচিত কী ধরণের অপরাধ সে করেছে৷ এরকমটা না হলে এই বিচারে দেশের কাছে ভুল বার্তা যাবে, বেড়ে যাবে অনুরূপ অপরাধ করার সাহস৷
সংলাপ নামে এক নারী সংগঠনের প্রধান ইন্দ্রানী সিংহ ডয়চে ভেলের কাছে এই প্রসঙ্গে বললেন, এটা আইনি বিচার হলেও ন্যায়বিচার হয়নি৷ আইনে আছে ১৮ বছরের নীচে হলে সে নাবালক৷ সেদিক থেকে ঠিক আছে৷ ‘‘তবে আমি যদি বিচারক হতাম, তাহলে আরো অনেক বেশি বছর ঐ অপরাধীকে জেলের সংশোধনাগারে আটকে রাখতাম৷'' ছেলে বা মেয়ের ক্ষেত্রে নাবালকত্বের বয়সসীমা ১৮ থেকে কমিয়ে ১৬ বছর করলেও বিপদ আছে ৷ সম্মতিসাপেক্ষে যৌন মিলনের ঘটনা বেড়ে যেতে পারে, ডয়চে ভেলেকে বলেন ইন্দ্রানী সিংহ৷
৯/১১-র মুম্বই সন্ত্রাসী হামলা মামলার বিশিষ্ট আইনজীবী উজ্জ্বল নিকমের মতে, নাবালকের অতীত অপরাধের রেকর্ড, পরিবারের ইতিহাস, অপরাধের প্রকৃতি খতিয়ে দেখেই স্থির করতে হবে অপরাধীকে নাবালক বলে গণ্য করা যায় কিনা৷ ইন্টারনেটের যুগে বয়সটাই নাবালকত্বের একমাত্র মাপকাঠি হতে পারে না৷ আগে ১৬ বছর পর্যন্ত ছিল নাবালকের বয়সসীমা৷ বিভিন্ন দেশের শিশু অধিকার এনজিওগুলির চাপে তা বাড়িয়ে করা হয় ১৮ বছর৷ তাদের যুক্তি ছিল, এটা করা না হলে নাবালকরা পরে দাগি অপরাধী হয়ে যেতে পারে৷ দিল্লি গণধর্ষণকাণ্ডের পর মনমোহন সিং সরকার বিচারপতি জে.পি ভার্মার নেতৃত্বে যে কমিটি গঠন করে, সেই কমিটিও নাবালকের বয়সসীমা কম করার সুপারিশ করেনি৷ বলা হয়, নাবালকদের সংশোধনের সুযোগ দেয়া উচিত৷ ভারতের শীর্ষ আদালতও তাই মনে করে৷
ম্যাগসেসাই পুরস্কার প্রাপ্ত প্রাক্তন পুলিশ অফিসার কিরণ বেদি মনে করেন, আদালতের রোবটের মতো কাজ করা ঠিক নয়৷ আইন তৈরি হয় সুবিচার পেতে, তার দাস হয়ে থাকতে নয়৷ প্রাক্তন জাতীয় অপরাধ রেকর্ড ব্যুরো গত বছর প্রায় ৪০ হাজারের মতো নাবালককে বিভিন্ন অপরাধে গ্রেপ্তার করে, যাদের মধ্যে বেশ কিছুর বিরুদ্ধে ছিল গুরুতর অপরাধের অভিযোগ৷ এদের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি নিরক্ষর বা অশিক্ষিত এবং গরিব৷ সংশোধনাগারের ভেতরে থেকেও ওরা যৌন অপরাধ, মারপিঠ, গুন্ডামি করে থাকে৷