1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে, দরকার সচেতনতাও

সমীর কুমার দে, ঢাকা২৩ অক্টোবর ২০১৪

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, বিরোধী দলীয় নেত্রী, সংসদের উপনেতা, অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি-র প্রধান- সবাই নারী৷ আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বেই আছেন নারীরা৷ তবুও যেন নারীদের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাচ্ছে না৷

https://p.dw.com/p/1Db3t
Eine voll verschleierte Frau in der Frankfurter Innenstadt
ছবি: picture-alliance/dpa

সর্বশেষ যশোরে গত বুধবার মামাতো ভাইকে বেঁধে রেখে এক গৃহবধূকে গণধর্ষণ করেছে ৮/১০ জন পাষণ্ড৷ ধর্ষণের শিকার নারীর (৩৫) ভাষ্যমতে, তাঁর তিনটি সন্তান৷ তাদের নিয়ে যশোর শহরে এক ভাড়া বাসায় থাকেন৷ বুধবার রাত আটটার দিকে মামাতো ভাইয়ের সঙ্গে মোটরসাইকেলে করে বাসা থেকে শার্শা উপজেলার ভবানীপুরে খালাতো বোনের বাড়ি যাচ্ছিলেন৷ নাভারণ-সাতক্ষীরা সড়কের কুচেমোড়া নামক স্থানে পৌঁছালে আট-দশজন দুর্বৃত্ত দড়ি টাঙিয়ে পথরোধ করে৷ পরে তাঁদেরকে ধরে অদূরে নির্জন স্থানে নিয়ে মামাতো ভাইকে পিঠমোড়া করে বাঁধে৷ বাঁধে চোখ-মুখও৷ এরপর তারা ওই নারীকে ধর্ষণ করে৷

তথ্য কমিশনের সাবেক কমিশনার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাদেকা হালিম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমাদের দেশের জনসংখ্যার অর্ধেক নারী৷ এখন আর নারীরা পিছিয়ে নেই৷ আমাদের অর্থনীতির চালিকা শক্তিই নারী৷ গার্মেন্টসে কাজ করা শ্রমিকদের ৮৫ ভাগই নারী৷ নারীদের আজকের এই অবস্থান কেউ তৈরি করে দেয়নি৷ নারীরা নিজেরাই এই অবস্থানে এসেছে৷ তবে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর যে সব সরকার ক্ষমতায় ছিল, তারাও নারীদের এগিয়ে আসতে সহযোগিতা করেছে৷ বিশেষ করে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তৎকালীন ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম ইউনিয়ন পরিষদের সরাসরি ভোটে নারী নেতৃত্ব নির্বাচনের ব্যবস্থা করেন৷ এরপর নারীরাই প্রমাণ করেছে, তারা পিছিয়ে নেই, তারাও পারে৷''

Afghanistan Frauen Moral Gefängnis
‘সমাজব্যবস্থায় শ্রদ্ধাবোধ আর মূল্যবোধ থাকলে কেউ এত বড় অপরাধ করার সাহস করতো না’ছবি: picture-alliance/AP Photo

সাদেকা হালিম আরও বলেন, ‘‘এখনো নারী সহিংসতার শিকার হচ্ছে, ধর্ষণের শিকার হচ্ছে৷ এর কারণ আমাদের সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি৷ আর মূল্যবোধের অবক্ষয়৷ এসব প্রতিকারে যাঁদের ব্যবস্থা নেয়ার কথা, তাঁরা সঠিক দায়িত্ব পালন করছেন না বলেই এখনো নারী নির্যাতিত হচ্ছে৷' তিনি বলেন, ‘‘ইন্টারনেট আমাদের দেশে এখন সহজলভ্য৷ এর ভালো দিকের পাশাপাশি খারাপ দিকও আছে৷ গ্রামের একটি অশিক্ষিত ছেলে তার মোবাইল ফোনেই ইন্টারনেটে পর্নো ছবি দেখছে৷ আর এতে করে সে ধর্ষণের মতো কাজে উৎসাহিত হচ্ছে৷ পরিবার – বিশেষ করে সমাজব্যবস্থায় শ্রদ্ধাবোধ আর মূল্যবোধ থাকলে এসব ছেলে এত বড় অপরাধ করার সাহস করতো না৷''

সাদেকা হালিম বলেন, ‘‘নির্যাতিত নারীরা বিচার পাচ্ছে না৷ ফলে তারাও কিন্তু আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে৷ সম্প্রতি কয়েকটি ঘটনায় দেখা গেল স্ত্রী হত্যা করেছে স্বামীকে৷ আবার অল্পবয়সি একটা মেয়ের সঙ্গে বিয়ে হচ্ছে অনেক বেশি বয়সি ছেলের৷ ফলে তাদের দাম্পত্য জীবন সুখের হচ্ছে না৷ মেয়েটা তখন তার সমবয়সী কাউকে খুঁজে নিচ্ছে৷ সদ্য রাজধানীর মিরপুরে এমন একটি মেয়ে তার বন্ধুদের নিয়ে স্বামীকে হত্যাও করে ফেলল৷''

বাংলাদেশ মানবাধিকার ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অ্যাডভোকেট এলিনা খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমাদের দেশে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নারীরা আছেন ঠিকই, কিন্তু তাঁরা নারীদের পক্ষে ভূমিকা রাখার চেয়ে এ নিয়ে রাজনীতি করেন বেশি৷'' তিনি আরও বলেন, ‘‘যে দেশে একটি মামলার বিচার পেতে এক যুগ সময় লেগে যায়, সে দেশে নারী নির্যাতন কমবে কী ভাবে? একজন নারী নির্যাতিত হওয়ার পর সব তথ্য প্রমাণ ও সাক্ষী থাকার পরও বিচার পেতে দীর্ঘ সময় লেগে যাচ্ছে৷ এতে করে অপরাধীরা আরো বেশী উৎসাহিত হয়ে অপরাধ করছে৷ তাই শুধু দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হলে হবে না, সচেতনতাও দরকার৷ যাদের এসব দেখার দায়িত্ব, তাদের দায়িত্বশীল হতে হবে৷ শক্তিশালী মনিটরিং ব্যবস্থা দরকার৷ নারীর প্রতি সহিংসতা কমাতে এলাকাভিত্তিক সচেতনতা তৈরি করতে হবে৷'' তিনি বলেন, ‘‘একজন নারী ধর্ষিত হওয়ার পর ফরেনসিক পরীক্ষা দিতে চায় না৷ কারণ সেখানে পুরুষ ডাক্তাররা তার পরীক্ষা নেন৷ এসব জায়গায় নারী ডাক্তার দেয়া প্রয়োজন৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য